|
|
|
|
‘রড ভাঙা, ধরেনি ব্রেক’ |
বাস দেখভালে ত্রুটিকে দুষছেন সিটিসি-কর্মীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
কোনও যন্ত্রাংশ ভেঙে যাওয়ায় সিটিসি বা ট্রাম কোম্পানির বাসটি বুধবার সন্ধ্যায় চৌবাগার খালে পড়ে গিয়েছিল বলে আগেই অনুমান করেছিল দমকল ও পুলিশ। আর বৃহস্পতিবার সিটিসি-র কর্মীরা জানান, টাই-রড ভেঙে যাওয়ায় এবং ব্রেক না-ধরার কারণেই বাসটি খালে পড়ে যায় বলে তাঁদের ধারণা। ওই দুর্ঘটনায় মারা যায় একটি শিশু। আহত হন ৪৫ জন যাত্রী।
বাসটি যে লজ্ঝড়ে হয়ে গিয়েছিল, সিটিসি-র কর্মীরা তা-ও মেনে নিয়েছেন। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না-হওয়া এবং বিশ্রাম না-পাওয়ার কারণেই বাসটি জীর্ণ হয়ে পড়েছিল। চালককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে সিটিসি-কর্তারা জেনেছেন, টাই-রড (স্টিয়ারিংয়ের সঙ্গে লোহার যে-রডটি লাগানো থাকে) ভেঙে যাওয়ায় তিনি কোনও ভাবেই বাসের মুখ ঘোরাতে পারেননি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি বাসন্তী রোডের ধারে ঘুষিঘাটা খালে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার পরে বাসচালক ও কন্ডাক্টরের খোঁজ মিলছিল না। পরে চালকের খোঁজ পেয়ে সংস্থার কর্তারা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
প্রাথমিক তদন্তে সিটিসি জেনেছে, চৌবাগা মোড়ের বাসস্টপের আগে কোনও কোনও যাত্রী বেশ কয়েক বার ঘন্টি বাজিয়ে বাসটিকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলেন। চালক বাসস্টপে থামার জন্য ব্রেকও কষেছিলেন। কিন্তু না-থেমে বাসটি জোরে খালের দিকে এগোতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তার গতি রোধ করা যায়নি। সেটি পড়ে যায় খালে। বাসের কোনও ত্রুটির কারণে যদি ওই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, বিধি মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বুধবার দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই জানিয়েছিলেন এলাকার বিধায়ক ও দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের কর্তারা বৃহস্পতিবার জানান, আজ, শুক্রবার বাসটির যান্ত্রিক পরীক্ষার রিপোর্ট মিলতে পারে। তার পরেই নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে, দুর্ঘটনার আসল কারণ কী।
বৃহস্পতিবার সিটিসি-র কর্মীরা অভিযোগ করেন, স্রেফ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাজাবাজার, খিদিরপুর, বেলগাছিয়া, ধর্মতলা, হাওড়া ডিপোর বহু বাস লজ্ঝড়ে হয়ে পড়েছে। একে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, তার উপরে নিয়মিত বাসের যন্ত্রাংশ সরবরাহ না হওয়ার ফলে প্রায় প্রতিদিনই বেশ কিছু বাস যাত্রী বহনের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
শুধু ওই বাস নয়, অনেক বাসেরই নিয়মিত দেখভাল হয় না বলে সিটিসি-র এক শ্রেণির কর্মীর অভিযোগ। তাঁরা জানান, রাজাবাজার ডিপো থেকে ভেবিয়া চৌমাথা, ঘটকপুকুর, মালঞ্চ ইত্যাদি রুটে বাস চলে। বেহাল রাস্তায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলতে গিয়ে বাসের ক্ষতি হয় সব চেয়ে বেশি। কর্মীদের অভিযোগ, রাজাবাজার ডিপো থেকে যে-সব রুটের বাস ছাড়ে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই সব রুটে প্রতি মাসেই বাসের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তাঁরা জানান, কয়েক মাস আগেও রাজাবাজার ডিপো থেকে ৫০টির বেশি বাস বিভিন্ন রুটে চলত। এখন সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ৩০।
কর্মীদের অভিযোগ অনেকটাই স্বীকার করে নিয়েছেন সিটিসি-কর্তৃপক্ষ। এক সিটিসি-কর্তা জানান, বিভিন্ন রুটে অকেজো বাসের সংখ্যা বাড়ছে। তার চাপ পড়ছে কোনও রকমে চলতে থাকা বাসগুলির উপরে। ভোর ৫টায় যে-বাস রাজাবাজার ডিপো থেকে ছাড়ছে, সেটি একটানা ১৭-১৮ ঘণ্টা বা তারও বেশি চলছে। ফলে তার জীবনীশক্তিও কমে যাচ্ছে।
ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না কেন?
ওই সিটিসি-কর্তা জানান, কর্মীদের বেতন দিতেই প্রায় সব টাকা চলে যায়। তার উপরে প্রতি মাসে ব্যাঙ্কে বাস কেনার কিস্তির টাকা জমা দিতে হয়। ফলে যন্ত্রাংশ কেনার টাকা অনেক ক্ষেত্রেই হাতে থাকছে না। দেখভালে ঘাটতির দায় আগের বাম জমানার উপরে চাপিয়ে দিয়েছেন সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন। তাঁর অভিযোগ, “আগের সরকারের আমলে বাসের রক্ষণাবেক্ষণ হত না। এখন সবে সেটা শুরু হয়েছে। রাতারাতি সব বাস ঠিক করা সম্ভব নয়। একটু সময় তো দিতেই হবে।”
|
|
|
|
|
|