|
|
|
|
এটিএমে ১৮ লক্ষ চুরিতে ধৃত ১ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
ছাতা মাথায় দেওয়া একটি লোক এটিএম মেশিনের ভল্ট খুলে টাকা সরিয়ে নিচ্ছে। ঠাকুরপুকুর সখেরবাজারে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার এটিএম থেকে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা চুরির তদন্তে নেমে সিসিটিভি-র এই ছবিই ছিল গোয়েন্দাদের একমাত্র সম্বল। সেই সূত্র ধরেই মঙ্গলবার রাতে বেহালা থেকে সাড়ে ১৬ লক্ষ টাকা-সহ অভিযুক্তকে পাকড়াও করলেন লালবাজারের অফিসারেরা।
বৃহস্পতিবার গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “ধৃতের নাম রাজদীপ আইচ। বাড়ি বেহালার সত্যজিৎ রায় সরণিতে। তিনি ওই এটিএমের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংস্থার কর্মী ছিলেন। আদালতে হাজির করানো হলে ৩১ অগস্ট পর্যন্ত তাঁকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
ঠিক কী হয়েছিল?
পুলিশ জানায়, গত ১০ অগস্ট সকালে ঠাকুরপুকুর সখেরবাজারে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার একটি এটিএম থেকে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা চুরির কথা জানা যায়। এটিএম মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ করতে আসা কর্মীরা জানতে পারেন, ভল্ট থেকে ১৮ লক্ষ টাকা নিখোঁজ। এর পরেই ঠাকুরপুকুর থানায় বিষয়টি নিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করে। তা থেকে দেখা যায়, ছাতা মাথায় দিয়ে এক ব্যক্তি ভল্ট খুলছেন। কিন্তু তা থেকে কিছুতেই ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে পারছিলেন না তদন্তকারীরা। এর দিন কয়েক পরে, ১৬ অগস্ট পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের বিশেষ নির্দেশে তদন্তভার হাতে নেয় গোয়েন্দা দফতরের ব্যাঙ্ক-জালিয়াতি দমন শাখা। পুলিশ সূত্রের খবর, ব্যাঙ্ক-জালিয়াতি শাখার অফিসার সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীলকণ্ঠ রায় এবং মনিটরিং শাখার লক্ষ্মীনারায়ণ পানের নেতৃত্বে একটি দল এর তদন্তে নামে।
কী ভাবে সরানো হয়েছিল টাকা?
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এটিএম মেশিনের নীচের অংশে (লোয়ার কেস) ভল্টের ভিতরে টাকা থাকে। সেটি একটি বিশেষ চাবি দিয়ে আটকানো থাকে। এটিএম মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তির কাছে চাবিটি থাকে। ভল্ট খোলার সময়ে ওই চাবিটি তালায় ঢোকালে তালার পাশে থাকা একটি পর্দায় কোড নম্বর ভেসে ওঠে। সেটি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মীর ‘এমপ্লয়ি নম্বর’ ফোন মারফত সংস্থার মূল অফিসে জানানো হলে তারা একটি ফিরতি নম্বর (পাসকোড) দেয়। সেটি এটিএম মেশিনে দেওয়া হলে তবেই ভল্টটি খোলার কথা। এই পুরো পদ্ধতিটিই রাজদীপ জানতেন। কিন্তু গত ছ’মাস ধরে ‘নাইট ডিউটি’ করায় তাঁর কাছে ওই চাবি থাকত না।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, রাজদীপের সহকর্মী জয়ন্ত বিদের কাছে চাবি থাকত। সম্প্রতি জয়ন্তবাবু ছুটিতে যাওয়ায় চাবিটি রাজদীপের হেফাজতে ছিল। সেটি হাতে পাওয়া মাত্রই চুরির ছক কষেন তিনি। সেই কারণে ৮ তারিখ রাতে ভুয়ো নথি দিয়ে একটি মোবাইল ফোনের সিম কার্ড তোলেন তিনি।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গত ৯ অগস্ট রাতে ওই চাবিটি ব্যবহার করে ভল্ট খোলেন রাজদীপ। কিন্তু মুম্বই অফিস থেকে তাঁর ‘এমপ্লয়ি নম্বর’ জিজ্ঞাসা করতেই তিনি ফোন কেটে দেন। এর পরে ১০ তারিখ সকালে বিজয় নামে অন্য এক সহকর্মীর নাম এবং ‘এমপ্লয়ি নম্বর’ ব্যবহার করে পুরো টাকাটি হাতিয়ে নেন।
তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা বুঝতে পারেন, এটিএম কাউন্টারের রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত না-থাকলে এই কাজ করা সম্ভব নয়। যে নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল, সেটিও নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। এর পরে গোয়েন্দারা স্থানীয় সূত্র এবং ওই এটিএম কাউন্টারের কর্মীদের অবস্থান খতিয়ে দেখে রাজদীপকে পাকড়াও করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন ধৃতের তিন সহকর্মী ওই এটিএম-এ টাকা ভরতে যান। প্রথমে তাঁদেরই গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে তাঁদের বিরুদ্ধে আপাতত কোনও প্রমাণ মেলেনি। এ দিন তাঁদের আদালতে হাজির করানো হয়।
এ দিন গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, “বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারে টাকা ভরার পদ্ধতির মধ্যে কিছু ত্রুটি রয়েছে। সে বিষয়গুলি পরবর্তী কালে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষদের জানানো হবে।” তদন্তকারীরাও বলেছেন, ওই ত্রুটির কারণেই এটিএম থেকে বিভিন্ন জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে।
|
|
|
|
|
|