নগদ জমার অনুপাত বাতিলের পক্ষে সওয়াল স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তার
রকার চাইছে দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে বড় ভূমিকা নিক ব্যাঙ্ক। কিন্তু একই সঙ্গে সেই ভূমিকা নেওয়ায় ব্যাঙ্কের হাত-পা বেঁধে দিচ্ছে সরকারি নীতি। পাশাপাশি সরকারি নীতিতে বৈষম্যের ফলে ক্রমশ ব্যাঙ্ক শিল্প আর্থিক ক্ষেত্রে অন্য শিল্পের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে। অভিযোগগুলি এনেছেন স্বয়ং স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরী।
প্রতীপ চৌধুরী।
ছবি: পিটিআই
বৃহস্পতিবার কলকাতায় ফিকি আয়োজিত ‘ব্যাঙ্কিং কনক্লেভ’ শীর্ষক সভায় এসে প্রতীপবাবু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নগদ জমার অনুপাত (সিআরআর) বজায় রাখার নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। সিআরআর খাতে ব্যাঙ্কগুলিকে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘরে জমা রাখতে হচ্ছে। অথচ ওই টাকা থেকে কোনও সুদ পায় না তারা। প্রতীপবাবুর অভিযোগ, কার্যত এ টাকাও ব্যাঙ্কের কাছে এক ধরনের অনুৎপাদক সম্পদ। প্রতীপবাবু বলেন, “অবিলম্বে সিআরআর ব্যবস্থা তুলে দেওয়া উচিত। মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলা করতে যদি একান্তই তা রাখতে হয়, তা হলে ওই অর্থের উপর ব্যাঙ্কগুলিকে সুদ দিক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।” প্রতীপবাবু মন্তব্য করেন, সিআরআর বজায় রাখার বাধ্যবাধকতায় ব্যাঙ্কের তহবিল সগ্রহের খরচ বেড়ে যায়। যার বিরূপ প্রভাব পড়ে ঋণের উপর সুদের হার ঠিক করার ক্ষেত্রে। যদিও নগদ জমার অনুপাত নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অখুশি, কিন্তু এই প্রথম স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানের মতো উঁচুদরের কোনও ব্যাঙ্ককর্তা সরাসরি এ নিয়ে এতটা সোচ্চার হলেন।
উল্লেখ্য, প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে বর্তমানে নগদ জমার অনুপাত খাতে মোট আমানতের ৪.৭৫ শতাংশ টাকা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে বাধ্যতামূলক ভাবে জমা রাখতে হয়। ২০০৭ সালের ৩১ মার্চ থেকে ওই টাকার উপর কোনও সুদ দেয় না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাজারে নগদ টাকার জোগান নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। সাধারণত মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়লে সিআরআর বৃদ্ধি করে বাজারে নগদ টাকার জোগান কমানোর চেষ্টা করে। আবার নগদের জোগান বাড়াতে হলে ওই হার কমিয়ে দেওয়া হয়। ব্যাঙ্কের বর্তমান আমানতের পরিমাণের পরিপ্রেক্ষিতে সিআরআর ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে দিলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘরে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ঢুকে যায়। আবার উল্টো দিকে এই হার ওই পরিমাণ কমানো হলে বাজারে ১৬ হাজার কোটি টাকার জোগান বেড়ে যায়।
প্রতীপবাবু বলেন, “দেশে ব্যাঙ্কিং শিল্পে মোট আমানতের পরিমাণ প্রায় ৬৩ লক্ষ কোটি টাকা। সিআরআর বাবদ প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা বিনা সুদে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে গচ্ছিত রাখতে হয়। ওই টাকার উপর ন্যূনতম সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সুদের হারে হিসাব করলেও বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার সুদ আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি।”
বাজারে প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গ টেনে প্রতীপবাবু অভিযোগ করেন, “সরকারি নীতি ব্যাঙ্কের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে। কারণ, বিমা, ঋণের বাজার ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ড বা ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থা (এনবিএফসি)-রাও ব্যাঙ্কের মতোই বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করে এবং ঋণ দিয়ে আয় করে। তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যাঙ্কের মতো শেয়ার বা বন্ডের বাজারে অর্থ বিনিয়োগ করে। অথচ ওই সব সংস্থাকে সিআরআর বাবদ টাকা জমা রাখতে হয় না। আমি মনে করি, বিমা সংস্থার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩ শতাংশ সিআরআর বসানো উচিত।” তবে ভারতে আর্থিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিল্পের জন্য পৃথক পৃথক নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রতীপবাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.