নিভুজিবাজার থেকে হরিশঙ্করপুর পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ ফের শুরু করার আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠাল কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতি। এ ব্যাপারে পূর্ত দফতরের নানা আধিকারিকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে পঞ্চায়েত সমিতির তরফে জানানো হয়েছে।
পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯-১০ সালে আর্থিক বর্ষে গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটির ব্যাপারে সরকারি বরাদ্দ মেলে। ঠিক হয়, ‘রুরাল ইনস্টিটিউট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ প্রকল্পে দু’পাশ চওড়া করা-সহ শক্ত করে নির্মাণ হবে। এর জন্য খরচ হবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। একটি ঠিকা সংস্থা রাস্তার কাজও শুরু করে দেয়। কিন্তু দু’পাশে মাটি ফেলে নতুন করে রাস্তা তৈরির কাজ কিছুটা এগোনোর পরেই সমস্যা শুরু হয়। হরিশঙ্করপুর, উপলতি, বেলেরহাট, বাঘনাপাড়া-সহ কয়েরকটি গ্রামের চাষিরা দাবি করেন, তিন দশক আগে রাস্তাটি যখন প্রথম বার তৈরি হয়, তখন তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে জমি নেওয়া হয়েছিল। |
কিন্তু তার জন্য এত বছরেও সরকার ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়নি। চাষিরা দাবি করেন, ক্ষতিপূরণের টাকা না পেলে নতুন রাস্তা করতে দেওয়া হবে না। চাষিদের বোঝাতে পূর্ত দফতরের তরফে বেশ কয়েকটি বৈঠকও করা হয়। তবে তাতে বিশেষ ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত ঠিকা সংস্থা কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তাটি নতুন করে তৈরির জন্য ঠিকা সংস্থাটি নানা জায়গায় পিচের আস্তরণ তুলে ফেলেছিল। এ ছাড়াও, রাস্তায় বহু জায়গাতেই ছোট-বড় গর্ত ছিল। পাকাপাকি ভাবে কাজ না হওয়ায় গত দু’বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটির চেহারা আরও খারাপ হয়েছে। বর্তমানে ১১ কিলোমিটার এই রাস্তার আট কিলোমিটারেরই অবস্থা বেশ খারাপ। বেশির ভাগ জায়গাতেই রয়েছে নানা আকারের খানা-খন্দ। অনেক জায়গায় রাস্তার দু’পাশের অংশ ভেঙে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, এক পসলা বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। গর্তে জল জমে গেলে যানবাহনের দুর্ঘটনায় পড়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। এক লরি চালক রাজু কোলের কথায়, “এই রাস্তা দিয়ে খালি গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে ভয় হয়। মনে হয়, এই বুঝি যন্ত্রপাতি ভেঙে গাড়ি খারাপ হয়ে যাবে।” তাঁর দাবি, যে চালকেরা এই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন না, তাঁরা মালপত্র নিয়ে যাওয়ার সময়ে বিপাকে পড়েন।
কালনা শহরের সঙ্গে যোগাযোগকারী এই রাস্তা দিয়ে বেশ কিছু বেসরকারি বাস চলে। বাসচালকেরা জানান, রাস্তাটির মেরামত করতে পূর্ত দফতর ও পঞ্চায়েত সমিতির তরফে দু’বার ইট ফেলা হলেও বিশেষ লাভ হয়নি। বর্ষায় যে কোনও দিন এই রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে তাঁদের দাবি। এমনই একটি বাসের কর্মী আনু শেখের কথায়, “গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রায়শয়ই দামি যন্ত্রাংশ ভাঙছে। রাস্তাটি নতুন করে তৈরি করা না হলে দুর্দশা ঘুচবে না।” নিত্যযাত্রী রমেন সমাদ্দার বলেন, “গোটা রাস্তায় অজস্র গর্ত থাকায় বাস চলতে শুরু করার পরেই লাফাতে থাকে। তাতে সারা দেহে ব্যথা হয়। জানি না, এই দুর্ভোগ কবে কমবে।”
কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তি চাল জানান, প্রায় প্রতি দিনই এলাকার মানুষজন এই রাস্তা নিয়ে অভিযোগে জানাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত সমিতির তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে বন্ধ হয়ে যাওয়া কাজ নতুন করে শুরু করার আবেদন জানানো হয়েছে। চাষিদের ক্ষতিপূরণের দাবি প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বক্তব্য, “এ ব্যাপারে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।” পাশাপাশি, পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক স্বপন দেবনাথ বলেন, “রাস্তাটির কাজ যাতে দ্রুত শুরু হয়, সে ব্যাপারে সম্প্রতি আমি রাজ্যের পূর্তমন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠিয়েছি।” জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। সমস্যা মিটিয়ে কাজ শুরুর চেষ্টা চলছে।” কালনা পূর্ত দফতর সূত্রেও জানা যায়, চাষিদের ক্ষতিপূরণ ও রাস্তার কাজ শুরুর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। |