বর্ধমানের পলিটেকনিক কলেজে বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।কোথাও শিক্ষকের অভাব। কোথাও ক্লাসঘর নেই। কোথাও আবার অডিট হয়নি বছর দশেক। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ও তার অধীনস্থ চারটি কলেজ পরিদর্শনে এসে এ সবই দেখলেন বিধানসভার শিক্ষা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির পরিদর্শক দল। ওই দলের চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিকাঠামো দুর্বল। এ ছাড়াও পঠনপাঠন সংক্রান্ত ও প্রশাসনিক নানা সমস্যা রয়েছে। কলেজগুলি যাতে এ সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে সে জন্য উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করব।”
বৃহস্পতিবার বর্ধমান শহরে পৌঁছে বারো জনের এই পরিদর্শক দল প্রথমে যায় ‘এমবিসি ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টোকনোলজি’-তে। সেখানে তাঁরা জানতে পারেন, রাজ্যের অন্য সব পলিটেকনিক কলেজে যেখানে অন্তত ১২টি করে বিষয় পড়ানো হয়, সেখানে এই কলেজে পঠনপাঠন হয় মাত্র চারটি বিষয়ে। যথেষ্ট শিক্ষক নেই। নেই ক্লাসঘরও। |
এ সব দেখে পরিদর্শকেরা যান রাজ কলেজে। সেখানে জানা যায়, দশ বছর ধরে এই কলেজের দিবা বিভাগে কোনও অডিট হয়নি। কলেজের আংশিক সময়ের অনেক শিক্ষক অন্য কলেজেও পড়ান। ফলে ছাত্রছাত্রীরা অনেক সময়ে তাঁদের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন বলে অভিযোগ। এই সব শিক্ষকদের নামের তালিকা চান দলের সদস্যেরা। এই কলেজে পড়ুয়া সংখ্যা কেন কমছে, ভর্তি নিয়েই বা সমস্যা হচ্ছে কেন, সে সব প্রশ্নও তোলেন তাঁরা। কলেজের ছাত্রেরা পরিদর্শক দলের কাছে অভিযোগ জানান, শিক্ষকদের মধ্যে নিত্য অশান্তির জেরেই পঠনপাঠন শিকেয় উঠছে। কলেজের মাঠ, কমনরুম, ছাত্র সংসদ ইত্যাদির পরিকাঠামো নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন ছাত্রেরা।
এমইউসি মহিলা কলেজ ঘুরে অবশ্য পরিকাঠামো নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন দলের সদস্যেরা। চেয়ারম্যান আশিসবাবু বলেন, “এখানকার অডিট রিপোর্ট তৈরি রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্পর্কে ছাত্রীদের মূল্যায়নও ভাল। তবে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কলেজটির আরও অর্থ দরকার।”
পদ্মজা নাইডু মিউজিক কলেজে গিয়ে পরিকাঠামোগত সমস্যা সব চেয়ে বেশি চোখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন পরিদর্শকেরা। কলেজে ঢুকেই ছাদ থেকে জল চুঁইয়ে পড়ার দৃশ্য দেখেন সদস্যেরা। শিক্ষকের অভাব, ক্লাসঘরের সংখ্যা নগণ্য ইত্যাদি বিষয়ও দেখেন তাঁরা। কলেজে স্নাতোকোত্তর বিভাগ নেই কেন, এই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হাসান বলেন, “শহর সংলগ্ন কাজিরহাটে আমাদের নতুন হস্টেল তৈরি হচ্ছে। সেখানেই আমরা ভবিষ্যতে ক্লাস শুরু করব। তা ছাড়া উচ্চশিক্ষা দফতর অনুমোদিত ২৪ লক্ষ টাকা আমরা এখনও হাতে পাইনি। সেটা পেলেও অনেক কাজ করা যাবে।”
সব শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে যান পরিদর্শকেরা। সেখানে তাঁরা যখন পৌঁছন, তখন লোডশেডিং চলছে। সাধারণ পড়ুয়া থেকে হস্টেলের আবাসিকেরা, সকলেই তাঁদের কাছে অভিযোগ করেন, লোডশেডিংয়ের দাপটে ঠিক মতো ক্লাস হয় না। এমনকী পানীয় জলও মেলে না। আশিসবাবুর আশ্বাস, “এই সমস্যা যাতে তাড়াতাড়ি মেটানো যায়, সেই চেষ্টা করা হবে।” ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ করেন, শিক্ষকেরা ঠিক মতো না পড়ানোয় পাঠ্যসূচিও শেষ হচ্ছে না। শিক্ষক ও আধিকারিকদের জন্য ‘অ্যাকাডেমিক অডিট’ চালুর আবেদন-সহ মোট ১৫ দফা দাবিতে পরিদর্শক দলের হাতে স্মারকলিপিও দেয় পড়ুয়ারা। |