সাধারণ যাত্রীদের কথা না ভেবেই মহকুমার দুই গুরুত্বপূর্ণ রুটের মিনিবাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে আসানসোল মহকুমা পরিবহন অবস্থা, এমনই অভিযোগে আসানসোলের মহকুমাশাসক ও মহকুমা পরিবহণ সংস্থাকে চিঠি দিলেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে রুট দু’টিতে বাস চালানো হোক।
আসানসোল মহকুমা পরিবহণ দফতরের পাশাপাশি রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী মদন মিত্রের কাছেও চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁরা। আসানসোলের মহকুমাশাসক ও মহকুমা পরিবহণ সংস্থার তরফে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
মহকুমার পরিবহণ সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাকর থেকে চুরুলিয়া রুটের একটি মিনিবাস এতদিন কুলটি, নিয়ামতপুর, আসানসোল, কাল্লা ও দোমহানি হয়ে নিয়মিত জামুড়িয়া ও চুরুলিয়ায় যাতায়াত করত। বর্তমানে এই বাসটি বরাকর থেকে আসানসোল পর্যন্ত যাচ্ছে। কাল্লা, বারাবনির দোমহানি ও জামুড়িয়ার চুরুলিয়ায় ঢুকছে না।
অন্যদিকে, বরাকর থেকে ডিসেরগড় হয়ে বারাবনির আমুলিয়া ঘাট পর্যন্ত রুটের মিনিবাসটিও আমুলিয়া ঘাট পর্যন্ত যাচ্ছে না। পরিবর্তে বরাকর থেকে আসানসোল পর্যন্ত যাচ্ছে।
এই অবস্থায় রুট দু’টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বারাবনি ও চুরুলিয়ার বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, ওই রুটে আর কোনও বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা নেই। বড় বাসও চলে না। সরকারি যাত্রী-পরিবহন ব্যবস্থা নেই। সারাদিনে কেবল কয়েকটি ট্রেকার যাতায়াত করে। অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে তাতেই বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হন বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা, একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী অসীম দাস বলেন, “এতদিন মিনিবাসে যাতায়াত করেছি। এখন তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম সমস্যায় পড়েছি।’’ চুরুলিয়া কলেজের ছাত্রী মীনা রজক বলেন, “পরিবহনের অভাবে নিয়মিত কলেজ যেতে পারি না। বাস চালু হলে ভাল হয়।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়ে আসানসোলের মহকুমা শাসক ও মহকুমা পরিবহণ আধিকারিকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বারাবনি ব্লক যুব তৃণমূল কংগ্রেস। সংগঠনের ব্লক নেতা পাপ্পু উপাধ্যায় বলেন, “প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত আমরা মানছি না। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে রুট দু’টি ফের চালু করতে হবে।”
অন্য দিকে, মহকুমা পরিবহন সংস্থার আধিকারিক সৌমেন দাস জানান, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় আরটিএ বোর্ড। তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে পারেন না। তাঁর দাবি, “আমরা রুট বন্ধ করার কোনও সুপারিশ আরটিএ বোর্ডের কাছে পাঠায়নি। কেবল মাত্র তাঁদের নির্দেশমতো এই রুট দু’টির আশপাশের ভৌগলিক অবস্থানের বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠিয়েছি।” বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ও আশ্বাস দেন, এই রুট দু’টি পুনরায় চালু করার জন্য তিনি আরটিএ বোর্ডের সঙ্গে কথা বলবেন।
যাত্রীদের পাশাপাশি রুট দু’টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিক্ষোভ জানিয়েছে আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনও। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিকাশ চট্টরাজের অভিযোগ, প্রায় ১২ বছর ধরে এই রুট দু’টিতে বাস চলছে। আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন কয়েক হাজার সাধারণ যাত্রী।
বিকাশবাবুর বক্তব্য, এই রুট দু’টির আশপাশে প্রচুর গ্রাম রয়েছে। একাধিক স্কুল, কলেজ ও সরকারি, বেসরকারি সংস্থা রয়েছে। প্রতিদিন স্থানীয় লোকজনদের বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হয় রুটটি। তাঁরা যাত্রী পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হলেন। বিকাশবাবুর কথায়, “আমরা প্রশাসনের কাছে রুট দু’টি পুনরায় চালু করার আর্জি জানিয়েছি।”
আসানসোলের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার ভুঁইয়া বলেন, “২৭ অগস্ট সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হবে। সেখানেই আগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে।” |