|
|
|
|
ট্যাক্সির দৌরাত্ম্য |
মদনের বিধান শুধু ‘আধুনিক’ স্ট্যান্ড, পুরনো হুঁশিয়ারি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
হাওড়ায় যাত্রী-নিগ্রহের ঘটনার পরেও ট্যাক্সিচালকদের প্রত্যাখ্যান রুখতে তেমন কোনও দিশা দেখাতে পারল না পরিবহণ দফতর। শহরে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে যৌথ ভাবে ৩০টি আধুনিক সুবিধাযুক্ত ট্যাক্সিস্ট্যান্ড তৈরির ঘোষণা করেই কার্যত দায় সারলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। বুধবার মহাকরণে মদনবাবু-সহ চারটি ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতারা যাত্রী প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে ট্যাক্সিচালকদের উদ্দেশে যে হুঁশিয়ারি দেন, তা আগেও শোনা গিয়েছে। তাঁদের এই সমস্ত হুঁশিয়ারির ‘প্রতিধ্বনি’র মধ্যে রয়েছে, লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে চালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি। এবং ঘটনা হল, আগেও এই ধরনের ব্যবস্থা কখনওই কার্যকর করেনি ট্যাক্সি ইউনিয়ন এবং পরিবহণ দফতর। মদনবাবু এ দিন জানান, যাত্রীরা অভিযোগ জানালে সংশ্লিষ্ট ট্যাক্সিচালকের লাইসেন্স ৬ মাসের জন্য বাজেয়াপ্ত করা ছাড়াও অন্যান্য কড়া শাস্তি দেওয়া হবে। নিগৃহীত যাত্রী প্রীতম চট্টোপাধ্যায়ও এ দিন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।
হাওড়ার বৃন্দাবন মল্লিক লেনের বাসিন্দা অসুস্থ প্রীতমবাবু মাকে সঙ্গে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে যাবেন বলে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ হাওড়া ড্রেনেজ ক্যানাল রোডের নতুন রাস্তার মোড়ে ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে আসেন। এক ট্যাক্সিচালককে তিনি জানান, বৌবাজারে যাবেন। কিন্তু চালক যেতে অস্বীকার করেন। প্রীতমবাবু জানতে চান, কেন তিনি যাবেন না? এই প্রশ্নে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই চালক তাঁর সঙ্গে আরও দুর্ব্যবহার করেন। ইতিমধ্যে আরও কয়েক জন ট্যাক্সিচালক এসে ওই চালকের সঙ্গে যোগ দেন। তাঁরা শুধু প্রীতমবাবুকে মারধর করেই ক্ষান্ত হননি, ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর মা কৃষ্ণাদেবীকেও ওই চালকদের হাতে মার খেতে হয়। পরে পুলিশকে লিখিত ভাবে প্রীতমবাবু পুরো ঘটনা জানালে পুলিশ এক জনকে ওই রাতেই গ্রেফতার করে। তবে বুধবার বিকেল পর্যন্ত প্রধান অভিযুক্ত মুন্না সাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।
পরিবহণমন্ত্রী ছাড়াও হাওড়ার ঘটনার নিন্দা করেন সব ক’টি ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতারা। বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিমল গুহ বলেন, “যাত্রীকে প্রত্যাখ্যান করায় অনেক সময় ট্যাক্সিচালককে উত্তেজিত যাত্রীর মারধর করার কথা শুনেছি। কিন্তু এ কথা কোনও দিন শুনিনি যে ট্যাক্সিচালক যাত্রীর গায়ে হাত তুলেছে। ভাবতেই পারছি না কী করে এত সাহস চালকরা পেল। মন্ত্রীকেও বলেছি ওই ঘটনায় যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে। এই ধরনের ঘটনা ঘটালে আমরাও সেই সব চালকদের পাশে দাঁড়াব না।” এ দিন মন্ত্রীর সঙ্গে ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতারা যখন দেখা করেন, সেই সময় প্রীতমবাবুও মন্ত্রীর ঘরে ছিলেন। মন্ত্রী এবং ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি খুশি। তিনি বলেন, “মঙ্গলবার যেমন একটি নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হয়েছিল, আজ কিন্তু মন্ত্রী এবং ইউনিয়ন নেতাদের কথা শোনাটা একটা ইতিবাচক দিক। তবে আমি চাই আর কোনও দিন যেন অন্য কাউকে এ ভাবে মহাকরণে ছুটে আসতে না হয়।”
এ দিন মন্ত্রী জানান, ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলির সঙ্গে কথা বলে পাঁচ যাত্রী নেওয়ার বিষয়টি তিনি অনুমোদন করেছেন। মন্ত্রী যাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, “ছাপানো রসিদ না পেলে ভাড়া দেবেন না। বাসে যেমন ভাড়া দিলে টিকিট দেওয়া হয়, ট্যাক্সির ক্ষেত্রেই বা তা হবে না কেন!” মন্ত্রী অবশ্য প্রিন্টার লাগানো মিটারযুক্ত ট্যাক্সির কথাই বলেছেন, তবে পরোক্ষে ওই ধরনের মিটার অবিলম্বে লাগানোর জন্য অন্য চালকদের উপরে চাপও তৈরি করেছেন। তাঁর নির্দেশ, প্রত্যেক ট্যাক্সির সামনের আসনের পিছনে ট্যাক্সির নম্বর ও অভিযোগ জানানোর টোল ফ্রি নম্বর লিখতে হবে। কোনও চালক যেতে না চাইলে বা রসিদ দিতে না চাইলে টোল ফ্রি নম্বরে (১০০, ১০৭৩, ৬৪৫১-৬৭১৮) ফোন করে অভিযোগ জানালেই সেই চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মদন মিত্র আজ আরও বলেন, “কলকাতা পুরসভা, পূর্ত দফতর এবং পরিবহণ দফতর যৌথ ভাবে শহরের ৩০টি জায়গায় আধুনিক সুবিধাযুক্ত ট্যাক্সিস্ট্যান্ড করবে। যেখানে চালকদের বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। ওখান থেকে কোনও চালক যাত্রী প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না।” |
|
|
|
|
|