রূপনারায়ণের ভাঙনে অস্তিত্ব বিপন্ন শরৎচন্দ্রের বাড়ির
বির মতো সুন্দর মাটির দোতলা বাড়ি। দক্ষিণমুখী। টালির ছাউনি। একতলায় সামনে ছোট্ট ঘর। ঘরের পশ্চিমদিকে ঝকঝকে কাচের জানালা। এখানে চেয়ার টেবিল পেতে বসে লেখালেখি করতেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বিঘতখানেক দূর থেকে বয়ে যেত রূপনারায়ণ। লেখার অবসরে চোখ চলে যেত নদীর পানে। হাওড়ার বাগনানের এই সামতাবেড়েতেই নিজের বাড়ি তৈরি করেছিলেন কথাশিল্পী। পরবর্তী বছরগুলিতে নদী অনেকটাই সরে যায়। তৈরি হয় নতুন নতুন চর। যার বেশ কিছু কিনেছিলেন তিনি নিজেও।
কথাশিল্পীর মৃত্যুর ৭৩ বছর পরে ফের রূপনারায়ণ সামতাবেড়ের দিকে এগিয়ে আসছে দ্রুত লয়ে। পরিস্থিতি এতটা গুরুতর যে স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, এখনই পাকাপাকিভাবে পাড় বাঁধানো না-হলে শরৎচন্দ্রের বাড়ি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাবে রূপনারায়ণের গর্ভে। বাসিন্দাদের দাবির সঙ্গে একমত হাওড়া জেলা পরিষদ। জেলা সভাধিপতি মীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সামতাবেড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় রূপনারায়ণ সরে আসছে পাড়ের দিকে। এই সব এলাকায় নদীর ভাঙন রোধ করতে পাকাপাকি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ কথা জানিয়ে আমরা সেচ দফতরে জরুরি চিঠি পাঠিয়েছি।” ভাঙনের কথা স্বীকার করেছে সেচ দফতরও।
কথাশিল্পীর বাড়ি। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।
এই এলাকায় রূপনারায়ণের ভাঙন শুরু হয়েছে দু’বছর আগে। সেচ দফতরের বাস্তুকারেরা জানিয়েছেন, নদীর ‘চোরা স্রোত’ এই দিকে এগিয়ে আসায় এমন বিপত্তি ঘটেছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে সেই কারণে। ভাঙনের কবলে পড়ে দু’বছর ধরে বিরামপুর, গোবিন্দপুর, সামতা, মেল্লক প্রভৃতি গ্রামে শত শত বিঘা চাষের জমি তলিয়ে গিয়েছে। বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। একটি বেসরকারি সংস্থা চাষিদের কাছ থেকে জমি কিনে গোবিন্দপুর গ্রামে নদীর ধারে তৈরি করেছিল ‘ইকো পার্ক’। বাগান, বসার জন্য বেঞ্চ প্রভৃতি তৈরি হয়েছিল। পার্ক ভাড়া নিয়ে অনেকে চড়ুইভাতি করতেন। এ বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসেও ইকো পার্ক-এ চড়ুইভাতি করেছেন অনেকে। কিন্তু ছয় মাস ধরে ভাঙন হচ্ছে এখানেও। এলাকায় ঘুরে দেখা গেল ইকো পার্ক-এর অনেকটা অংশ তলিয়ে গিয়েছে নদীগর্ভে।
গোবিন্দপুর গ্রামে অমিয় গঙ্গোপাধ্যায়ের চার বিঘা জমি রয়েছে। বেশিরভাগই গিলে নিয়েছে রূপনারায়ণ। এলাকারই বাসিন্দা মদন হাজরা, মন্টু ধাড়াদের জমিও তলিয়ে গিয়েছে। মদনবাবু বললেন, “আমার দেড় বিঘা জমি ছিল নদীর চরে। মাত্র দু’বছরের মধ্যে সব জমি উধাও। অন্য জায়গায় কিছু জমি আছে। সেখানে চাষ করে কোনওমতে সংসার চলছে।” মন্টুবাবু খুইয়েছেন ১০ কাঠা জমি। মদন হাজরা, মন্টু ধাড়াদের মতো অবস্থা শত শত চাষির।
ভাঙনের গ্রাস। ছবি: হিলটন ঘোষ।
পানিত্রাস, গোবিন্দপুর এবং সামতা এই তিনটি গ্রামের সংযোগস্থলে বাড়ি কথাশিল্পীর। জায়গার নাম তিনি দিয়েছিলেন সামতাবেড়। কয়েক বছর আগে বন্যায় তাঁর বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মেনে সরকার বাড়িটিকে হেরিটেজ বলে ঘোষণা করে। এর সংস্কারে বরাদ্দ করা হয় ৪০ লক্ষ টাকা। সংস্কারের পরে বাড়িটি আবার ফিরে এসেছে আগের চেহারায়। প্রচুর পর্যটক আসেন এখানে।
স্থানীয় বাসিন্দা তথা শরৎ স্মৃতি গ্রন্থাগার ও শরৎমেলা পরিচালন সমিতির সম্পাদক ভাস্কর রায় বলেন, “নদী এত দ্রুত এগিয়ে আসছে যে শেষ পর্যন্ত শরৎচন্দ্রের বাড়ি তো বটেই, স্থানীয় জনপদও বাঁচানো যাবে কি না সন্দেহ।” তাঁর দাবি, “ভাঙন রোধ করতে একটি মাস্টার প্ল্যান চাই। পাকাপাকিভাবে পাড় বাঁধানো দরকার। আমরা গণসাক্ষর সংগ্রহ করছি। সেচ দফতর-সহ বিভিন্ন মহলে তা পাঠানো হবে।”
সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পানিত্রাস সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ২ কিলোমিটার অংশে রূপনারায়ণের পাড়ে ভাঙন হচ্ছে। এফএমপি (ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম) প্রকল্পে রাজ্য সরকারের কাছে ৩ কোটি টাকার স্কিম জমা দেওয়া হয়েছে। স্কিম অনুমোদিত হলে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের যৌথ টাকায় বোল্ডার ফেলে পাকাপাকিভাবে পাড় বাঁধানো হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.