কাজ চলছিল ঢিমেতালে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্সের (এইচআরবিসি) দফতরে গিয়ে কর্তাদের জানান, দ্রুত শেষ করতে হবে বিদ্যাসাগর সেতুর আধুনিক আলোকসজ্জা। পুজোর মরসুমে শহরবাসী এবং পর্যটকদের কাছে এটি হবে অন্যতম বড় আকর্ষণ। নির্মাতা সংস্থা এইচআরবিসি-র মতে, এটি হচ্ছে ‘ইনটেলিজেন্ট’ আলোয় সাজানো ভারতের প্রথম সেতু। খরচ হচ্ছে চার কোটি টাকা।
ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে আলোকসজ্জার পরীক্ষামূলক সাজ। সেতুর এই আধুনিক আলো-ব্যবস্থার পরিকল্পনা হয়েছিল বাম আমলে। ২০১০-এর ৭ জুলাই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী রঞ্জিত কুণ্ডু। কথা ছিল, ২০১১-র ৭ অক্টোবর এই কাজ শেষ হবে। তা হয়নি। ভোটের আগেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, গঙ্গা এবং তার দু’পাশে লন্ডনের টেম্স নদীর আদল আনতে চান। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তিনি ঘড়ি ধরে গঙ্গার সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের কাজ করার নির্দেশ দেন। সেই কাজ খতিয়ে দেখার সময়েই সেতুর আলোকসজ্জা দ্রুত শেষ করতে বলেন এইচআরবিসি-র কর্তাদের।
সংস্থা সূত্রে খবর, নীল-লাল-হলুদ-সবুজ, ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাবে এই আলোর রং এবং আদল। এই পরিবর্তন এত ধীরে হবে যে কী ভাবে বদল হচ্ছে, তা ধরা যাবে না। এ কথা জানিয়ে মুম্বই ভিত্তিক নির্মাতা সংস্থার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার অসীম দত্ত বলেন, “আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় আলো-প্রকল্পের কাজ করি। কিন্তু বিদ্যাসাগর সেতুর আলো-ব্যবস্থা হচ্ছে প্রকৃতই আধুনিক এবং আকর্ষণীয়।” বৈচিত্র বাড়াতে সেতুতে লাগানো হয়েছে পরিবেশ-বান্ধব ‘লাইট এমিটিং ডায়োড’ বা এলইডি বাতি। পাশাপাশি থাকছে জেনন এবং মেটাল হ্যালাইড বাতিও।
সেতুর নীচে ধার বরাবর থাকবে আলোর মালা। জল এবং নদীতীর থেকে দেখা যাবে সেগুলি। এইচআরবিসি-র ভাইস চেয়ারম্যান সাধনরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সেতুর দু’ধারে ১২৩ মিটার উঁচু দু’টি করে অর্থাৎ চারটি স্তম্ভে (‘পাইলন’) এবং ওই স্তম্ভের সংযোগকারী চারটি ধারক-বাক্সে (‘পোর্টাল’) লাগানো হচ্ছে এই বিশেষ আলো।” অসীমবাবু বলেন, “ভারতের কোনও সেতুর উপরে এত আধুনিক ও আকর্ষণীয় আলো-ব্যবস্থা হয়নি।” বিদ্যাসাগর সেতুর আদলে হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ বান্দ্রা-ওরলি সমুদ্র সেতুর আলোকসজ্জা।
এখন ৮২২.৯৬ মিটার দীর্ঘ বিদ্যাসাগর সেতুতে এক লক্ষ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। এর জন্য বছরে খরচ হয় ২৭ লক্ষ টাকা। নয়া আলোক-ব্যবস্থায় লাগবে ২০ হাজার কিলোওয়াট। কার্বন নির্গমনের হার কমবে। গোটা ব্যবস্থা হবে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত। রবীন্দ্র সেতুর ১২ কিলোমিটার উত্তরে, ১৯৯২ সালের ১০ অক্টোবর উদ্বোধন হয় বিদ্যাসাগর সেতুর। গোড়ার দিকে এর অপ্রতুল আলো নিয়ে কথা ওঠে। পরে এইচআরবিসি সেতুতে সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্প বসায়। ২০১০-এর মাঝপর্বে সিদ্ধান্ত হয়, ‘ইনটেলিজেন্ট ডায়নামিক লাইটিং’ নামে আধুনিক আলোক ব্যবস্থায় সেতুর আকর্ষণ বাড়ানো হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আপত্তি জানিয়ে একটি সংস্থা আইনি প্রশ্ন তুলে আদালতের স্থগিতাদেশ নেওয়ায় গোড়াতেই কাজে বিঘ্ন ঘটে। জটিলতা কাটার পরে শুরু হয় কাজ।
আলোকসজ্জার পাশাপাশি সম্প্রতি রং করা হয়েছে গোটা সেতু এবং এর ১৬টি র্যাম্প। এইচআরবিসি-র চেয়ারম্যান জানান, এ কাজে খরচ হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা।
|