পানাগড়ে জাতীয় সড়কের ধারে মোবাইলের দোকানে ‘টকটাইম রিচার্জ’ করাতে গিয়েছিলেন অশোক রুইদাস।
গিয়েছিলেন ভাল মনেই। হঠাৎ পাশে চোখ পড়তে চক্ষু চড়কগাছ!
নতুন ‘সিমকার্ড’ দেওয়ার জন্য এক খদ্দেরের ফর্ম পূরণ করানো হচ্ছিল। কিন্তু তাতে নাম লেখা ‘অশোক রুইদাস’। একই নামের অন্য লোক নাকি? ঝুঁকে দেখেন, ও বাবা! ফর্মে সাঁটা ছবিও যে তাঁরই। কিন্তু ঠিকানা তাঁর নয়।
ছবি ও সই জাল করে নানা ঠিকানায় নকল ‘সিম’ দেওয়ার কথা আগেই শুনেছিলেন কাঁকসার দোমড়া গ্রামের অশোকবাবু। এ বার তিনি নিজেও যে সেই জালে ফেঁসেছেন, তা আর তাঁর বুঝতে বাকি থাকে না। “ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যখন তখন ফেঁসে যেতে পারি!” উপলব্ধি করে তৎক্ষণাৎ কাঁকসা থানায় ফোন করেন তিনি। পুলিশ এসে দোকানদার আর তার কর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়। |
সেই ফর্ম হাতে অশোক রুইদাস। —নিজস্ব চিত্র। |
বেআইনি সিমকার্ডের রমরমা রুখতে নিত্য নতুন নির্দেশিকা জারি করছে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া। বৈধ সিমকার্ড নিতে হলে নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র ও ছবি জমা দিতে হয়। বেআইনি ভাবে বিক্রি হওয়া সিম ব্যবহার করে অপরাধমূলক কাজকর্ম করা হতে পারে। চালানো হতে পারে দেশবিরোধী কার্যকলাপও। এবং সে ক্ষেত্রে, যাঁর নাম-ছবি ব্যবহার করে ওই সিমকার্ড দেওয়া হয়েছে, তিনি ফেঁসে যেতে পারেন।
কিন্তু সরকারি নিয়ম এক জিনিস, আর তা কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ হওয়া অন্য। নানা নির্দেশিকা জারি করেও জাল সিমকার্ড বিক্রি যে আটকানো যাচ্ছে না, বুধবার তা-ই কার্যত ফের সামনে চলে এসেছে। পানাগড়ে বেসরকারি মোবাইল সংস্থার বরাত নেওয়া যে দোকানে এই কারবার চলছিল বলে অভিযোগ, সেটির মালিকের নাম সত্যপ্রকাশ কিশোরী। পুলিশ ওই সংস্থাকেও বিষয়টি জানাবে।
পুলিশের দাবি, ওই দোকান থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, একই ছবি ও সই ব্যবহার করে সিমকার্ড দেওয়ার কারবার তারা আগেও করেছে। গোপালপুরের তাপস দাস, আমলাজোড়ার মায়া বাউড়ি, গলসির তাপস ঘোষদের ছবি ও সই জাল করে বেআইনি সিমকার্ড বরাদ্দ করার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। অশোকবাবুর আশঙ্কা, “জানি না, ইতিমধ্যেই আমার নাম ও ছবি ব্যবহার করে কাউকে সিমকার্ড দেওয়া হয়েছে কি না!”
কাঁকসা থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই দোকান থেকে বিক্রি হওয়া বেশ কিছু সিমকার্ডের গ্রাহকের ঠিকানা সঠিক কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কাদের বেআইনি সিমকার্ড দেওয়া হয়েছে বা তাদের পেশা কী, তা-ও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। কাঁকসা থানার ওসি বিশ্বজিৎ কুণ্ডু জানান, আটক হওয়া দু’জনকে জেরা করে বিশদ জানার চেষ্টা চলছে। |