|
|
|
|
|
|
|
১৭৬৭-২০১০ : পথ বদলের বৃত্তান্ত |
নদীচিত্র |
তিরিশ বছর আগে ছাপা হয়েছিল ইরফান হাবিব-এর অ্যান অ্যাটলাস অব দ্য মুঘল এম্পায়ার। ইতিহাস-অনুরাগীদের কাছে এই মানচিত্র-সংকলনের গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বাংলা সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই অন্যতম মুঘল সুবার বেশি কিছু ছিল না। সুসান গোল-এর বিখ্যাত মানচিত্র সংগ্রহেও বাংলা অংশ মাত্র। ২০০৫-এ হাতে এল অ্যান অ্যানোটেটেড আর্কিয়োলজিক্যাল অ্যাটলাস অব ওয়েস্ট বেঙ্গল। কাস্ট-এর এই বিশাল গবেষণাকর্মটিতে ইতিহাস ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি হাত মিলিয়েছিল। সদ্য-প্রকাশিত অ্যাটলাস অব চেঞ্জিং রিভার কোর্সেস ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল (কল্যাণ রুদ্র, সি এক্সপ্লোরার্স ইনস্টিটিউট, পরি: শিশু সাহিত্য সংসদ) সেই ধারাতেই নতুন এবং বিশিষ্ট সংযোজন। |
|
নদীমাতৃক বাংলার নদীপথের এ এক আশ্চর্য ইতিবৃত্ত, নদীর পথ বদলেরও বৃত্তান্ত। বাংলার নদনদী নিয়ে বহু দিন ধরে কাজ করছেন কল্যাণ রুদ্র, বই-
|
রেনেলের মানচিত্রে বাংলার উপকূল। |
প্রবন্ধ লিখছেন, সম্পাদনা করছেন। শুধু নদী নয়, নদীর সঙ্গে যাঁদের জীবন ওতপ্রোত জড়িত, নদীর ভাঙাগড়ার খেলায় যাঁদের ভাগ্য রাতারাতি বদলে যায়, তাঁরাও তাঁর কাছের জন। গঙ্গা-ভাগীরথীর ভাঙন আর সেই ভাঙন ঠেকানোর নানা পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কয়েক দশক ধরেই সরব। এক দিকে ভাঙনের ফলে অন্য দিকে গড়ে ওঠা চর আর সেই চরের না-ঘরকা-না-ঘাটকা মানুষজনের অধিকার নিয়ে তাঁর সক্রিয়তা সুপরিচিত। বর্তমানে রাজ্য পরিবেশ দফতরের উপদেষ্টা তথা ওয়েস্টল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এই মানুষটি যখন বাংলার নদী নিয়ে কোনও আকর-সংকলনে নামেন, তখন তাকে আলাদা গুরুত্ব দিতেই হয়। মেজর জেমস রেনেল ১৭৬৭-তে সমাপ্ত সমীক্ষার ভিত্তিতে যে মানচিত্র তৈরি করেন (১৭৭৯ ও ১৭৮১-তে আ বেঙ্গল অ্যাটলাস নামে প্রকাশিত), তার আগে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বাংলার কোনও মানচিত্র আঁকা হয়নি। পরের প্রায় আড়াইশো বছরে বিভিন্ন সমীক্ষার ভিত্তিতে যে সব মানচিত্র তৈরি হয়েছে এবং উপগ্রহের মাধ্যমে যা তথ্য সংগৃহীত হয়েছে, তারই ভিত্তিতে কল্যাণ রুদ্র দেখিয়েছেন, বিশ্বের হলোসিন পর্বের ৩৬টি বদ্বীপের মধ্যে বৃহত্তম এই গাঙ্গেয় বদ্বীপে কী ভাবে নদীগুলি খাত বদলেছে বা মজে গিয়েছে। যেমন, ৩৫০ বছর আগে ভাগীরথী রাজমহলের কাছে গঙ্গা থেকে আলাদা হয়েছিল, আজ তা সরে এসেছে ৮৫ কিলোমিটার দূরে মিঠিপুরে। শুধু তাই নয়, বাংলার নদী, বন্যা, ভাঙন, জনজীবনের পরিবর্তন বুঝতে হলে বার বার ফিরে আসতে হবে এই বইয়ের কাছে। সকলকেই।
|
বিশেষজ্ঞ |
প্রথম পরিচয়, সংগ্রহশালা বিশারদ। গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ-এর এই প্রাক্তনী মিউজিয়োলজিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ মাউন্ট ফেলো। ১৯৬২-তে সূচনা থেকেই রবীন্দ্রভারতী মিউজিয়ম-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সমর ভৌমিক। আধুনিক সংগ্রহশালার সঙ্গে শিল্প-সাহিত্যের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন তিনি। ২১০টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন। ১,৯৬০টি প্রবন্ধ, ১০টি ক্যাটালগ ও ১৫টি শিল্প সংক্রান্ত বই প্রকাশ করেন। ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব লিটারেচার মিউজিয়ম’-এর পরিচালন সমিতির সদস্য হিসেবে নানা দেশের সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। যুক্ত ছিলেন কলকাতার রামমোহন মিউজিয়ম, বিদ্যাসাগর মেমোরিয়াল মিউজিয়ম প্রভৃতির সঙ্গে। সম্প্রতি ৭৭ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিনি।
|
|
সাহস করে |
আধুনিক চিকিৎসা উচ্চবিত্তের কুক্ষিগত, ধারণা ভাঙলেন শহরের এক অটোচালক দম্পতি। সন্তানহীনতায় ভুগছিলেন আশিস ও ইলা কাঞ্জিলাল। শেষে মরিয়া হয়ে ধারদেনা করে দ্বারস্থ হন শহরের এক সুপ্রজনন বিশেষজ্ঞের। প্রচুর খরচ জেনেও তাঁরা পিছিয়ে যাননি। আশিসের কথায়, ‘প্রথমে আর্থিক অবস্থার কথা বলিনি, গরিব শুনে যদি না করেন। স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর ডাক্তারবাবু আর কোনও টাকা নেননি।’ এঁরা সাহস করে এগিয়েছেন। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার জন্য অন্যরাও কি এগোতে সাহস পাবেন? চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর জানালেন, সন্তানহীনতার শেষ ভরসা আইভিএফ। অনেকেই আসছেন। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় আইভিএফ-এর খরচ কমছে। সুন্দরবনের এক মৎস্যজীবী ও রেলের এক হকারও একই চিকিৎসা করিয়েছেন। প্রথম বারে বাচ্চা না এলে নিম্নবিত্তদের ক্ষেত্রে পরের বারের চিকিৎসা বিনামূল্যে করি।’ বিশাল অঙ্কের ধার। তবু কোলে এসেছে যমজ সন্তান। ওঁদের আনন্দ সেটাই। আশিস জানালেন, ‘দিন-রাত অটো চালিয়ে ধার মেটাব।’
|
বন্দেমাতরম্ |
শুরুতে ছিল মাতৃবন্দনা। পরে দেশবন্দনা। বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম্ এক ইতিহাস। ১৮৮২-তে আনন্দমঠ উপন্যাসে প্রথম এর গীতরূপ পাওয়া যায়, কাওয়ালি তাল ও মল্লার রাগে। ১৮৮৩-তে প্রথম প্রকাশিত সুর দেবকণ্ঠ বাগচির। পরে সুর করেন যদুভট্ট, রবীন্দ্রনাথ, পঙ্কজ মল্লিক, দিলীপ রায়, তিমিরবরণ, হিমাংশু দত্ত বা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ১৮৯৬-এ ‘দেশ’ রাগে রবীন্দ্রনাথ স্বকণ্ঠে পরিবেশন করেন কংগ্রেস অধিবেশনে। ১৯০৫-এ কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদের দলের গীতে এটি হয়ে ওঠে দেশবন্দনা, পরে ভবানী দাসের রেকর্ডে বহুল প্রচলিত। গানটির ইতিহাস নিয়ে ‘আকাদেমি থিয়েটার’ সম্প্রতি আশুতোষ শতবার্ষিকী হলে করল ‘রূপে রূপান্তরে বন্দেমাতরম্’। উপস্থিত ছিলেন দেবজিত্ ও ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়, কথকতায় গৌতমমোহন চক্রবর্তী। আয়োজনে ভারতীয় সংগ্রহালয়।
|
সম্পর্ক |
দুই জনের জন্ম এক বছর সাত মাসের তফাতে। হাঁটা পথের দূরত্বে তাঁরা বড় হয়েছেন কলকাতার এ পাড়ায়, ও পাড়ায়। কিন্তু কেমন ছিল তাঁদের সম্পর্ক? কত বার দুই জনে কাছাকাছি এসেছিলেন? বিবেকানন্দ ছিলেন ছোট, কিন্তু জগদ্বিখ্যাত হয়েছিলেন ১৮৯৩-এ ৩০ বছর বয়সে। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি হলেন বাহান্ন বছর বয়সে, তার এগারো বছর আগে বিবেকানন্দ আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। স্বভাবতই, দুই জনের মধ্যে সাক্ষাৎ সে রকম না হলেও ছিল একটি যোগাযোগ। তা বোঝা যায় তাঁদের জীবন দর্শন ও সঙ্গীত ভাবনায়। স্বামী বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ-এর সম্পর্ক নিয়ে তাপস রায়ের আত্মিক মিলন-দুই মহাজীবন বইটি (হাওয়া কল) প্রকাশ পেল গত ২২ শ্রাবণ।
|
খেলনাবাটি |
কোনও স্ক্রিপ্ট ছিল না। কী দাঁড়াবে, সেটাও ছিল পুরোপুরিই অজানা। চরিত্র মাত্র তিনটি। যারা সমাজের ভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থানের মানুষ। মিল একটাই। এরা মা। প্রাচীন যুগ থেকে ভারতীয় সমাজ গঠনের চাবিকাঠিটি বরাবরই এই মায়েদের হাতে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের অধিবাসী হলেও শেষ পরিচয়, এরা মা। যুগ বদলেছে, কিন্তু মায়ের ভূমিকা একই থেকে গিয়েছে। সেখানেই এদের মিল। মৃন্ময় নন্দী তথ্যচিত্রের মাধ্যমে সেই মিলটাই খুঁজে বার করার চেষ্টা করেছেন। মায়েদের সঙ্গে পূর্বমাতৃকাদের বা পরবর্তী প্রজন্মের সম্পর্ক বা মা হিসেবে পরিবারের অন্য পুরুষদের সঙ্গে সম্পর্ক কী, তা-ও ধরা পড়েছে তথ্যচিত্রটিতে। এই মাতৃত্ব ভারতীয়ত্বের সঙ্গে কতখানি সম্পর্কিত, সে ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা আছে এখানে। ‘খেলনাবাটি’ এই মায়েদেরই গল্প।
|
রাগ ও রবীন্দ্রনাথ |
জয়জয়ন্তীর কাছে আমরা এমন কী ঋণে বদ্ধ যে তাহার নিকট অমনতর অন্ধ দাস্যবৃত্তি করিতে হইবে?’ সঙ্গীত চিন্তা-য় রাগরাগিণীর প্রতি কবির বক্তব্য এমনই। তাল-রাগ সবই ভাব প্রকাশের জন্য। অথচ পারদর্শী না হলে এর নাগাল মেলে না। ভাব প্রকাশের এই হাতিয়ারকে রবীন্দ্রনাথ সাধারণের করতে চেয়েছিলেন। সেই ভাবনা থেকেই রবীন্দ্র-গান সৃষ্টি। অথচ রবীন্দ্রনাথই রাগ অবলম্বনে লিখেছেন নানা গান। রাগরাগিণীর সঙ্গে কবির এই তিক্ত-মধুর সম্পর্ক নিয়ে ২৩ অগস্ট আই সি সি আর-এ অনুষ্ঠান ‘যন্ত্র, কণ্ঠ এবং রবীন্দ্রনাথ’। গানে সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেতারে তীর্থঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রন্থনায় দেবপ্রিয়।
|
থিয়েট্রিক্স |
কত সহস্র গ্রুপ-কমিউনিটি-পেজ রোজ গড়ে উঠছে ফেসবুকে। তার মধ্যে ওঁরা অনেকখানি ব্যতিক্রম। নাটককে ভালবেসে, নাটক নিয়ে কথা বলতে জনা কয়েক মিলে তৈরি করেছিলেন একটা গ্রুপ, থিয়েট্রিক্স। কিন্তু কালেভদ্রে এক-আধটা ‘আপডেট’ আর অভ্যাসবশত কিছু ‘লাইক’ নিয়ে খুশি থাকেননি। গত এক বছর ধরে সদস্যরা নিয়মিত কখনও একসঙ্গে, কখনও আলাদা নাটক দেখেছেন, নাটক নিয়ে তর্ক চালিয়েছেন ফেসবুকের দেওয়ালে। থিয়েট্রিক্স হয়ে উঠেছে নাট্যদর্শক আর নাট্যকর্মীদের মুখোমুখি কথা বলার অনন্য পরিসর। প্রথম বর্ষপূর্তিতে ওঁরা আয়োজন করছেন এক নাট্যসন্ধ্যার। ২২ অগস্ট শম্ভু মিত্রের জন্মদিনে অবন মহলে অভিনীত হবে হিপোক্রিটস-এর ‘কন্ডিশনস অ্যাপ্লাই’ এবং ফোর্থ বেল-এর ‘ফিফটিন মিনিটস টু ফেম’।
|
অচলায়তন |
‘মূর্খ যারা তারাই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে, যারা অল্প জানে তারাই জবাব দেয়, আর যারা বেশী জানে তারা জানে যে জবাব দেওয়া যায় না।’ রবীন্দ্রনাথের ‘অচলায়তন’-এ এটাই শেখানো হয়েছিল। সেই নাটকই, এই সময়ে, ‘পঞ্চম বৈদিক’-এর নতুন নাটক, ২২ অগস্ট অ্যাকাডেমিতে। সেই অ্যাকাডেমিতে, যেখানে বার বার ‘বহুরূপী’ প্রমাণ করেছে, রূপক-সাংকেতিক, তাত্ত্বিক ইত্যাদি তকমা পেরিয়ে রবীন্দ্রনাটকও রক্তমাংসের, অভিনয়যোগ্য। ‘বহুরূপী’র প্রাণপুরুষ শম্ভু মিত্রের জন্মদিনে নতুন এই ‘অচলায়তন’-এর অভিনয়। কিন্তু না, সমসময়কে জোর করে এ নাটকে ঢোকাননি নির্দেশক অর্পিতা ঘোষ। কেবল ইঙ্গিতে এসেছে সময়। ছাত্রদের পোশাক রেজিমেন্টেড সেনাবাহিনীর মতো, কোথাও বা গেরুয়া। তবু সমসময় কি একেবারেই নেই এ নাটকে? অর্পিতা বলছেন, ‘অচলায়তন নাটকের কাহিনী একটি আয়তন বা সংগঠন ঘিরে আবর্তিত হয়। এ সংগঠনে কোনও ধর্মীয়, শিক্ষা, রাজনৈতিক এমনকী বৃহত্তর অর্থে কোনও রাষ্ট্রের শাসনপদ্ধতির ছায়াও আমরা দেখতে পাই।’ সে কি নিহিত কোনও পাতালছায়া? বলবে সময়, এবং কলকাতার মঞ্চ।
|
নাগরিক |
সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ তখন তৈরি হচ্ছে। ভাঙা পড়ছে অনেক বাড়ি। সেই সময়ের কলকাতার গল্প ‘সাহেব বিবি গোলাম’। ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ কিংবা ‘বেগম মেরি বিশ্বাস’-এর মতো উপন্যাস বা অনেক ছোটগল্প বিমল মিত্রের সাহিত্যজীবনের সিংহভাগ এই কলকাতার কথা। পুরোদস্তুর নাগরিক এই কথাকারের শতবর্ষে তাঁর জীবন ও সাহিত্য নিয়ে একটি প্রদর্শনী ও আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছে জাতীয় গ্রন্থাগার ও বিমল মিত্র অ্যাকাডেমি। মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় গ্রন্থাগারের সভাগৃহে প্রদর্শনীর সূচনা করবেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। পরে বিমল মিত্র সম্পর্কে বলবেন শংকর ঘোষ, সবিতেন্দ্রনাথ রায় ও স্বপন মৈত্র। থাকবে বিমল মিত্রের গল্প অবলম্বনে ‘সংবর্ত’-এর পাঠ-অভিনয় ‘আমেরিকা’।
|
বিনয়কৃষ্ণ |
|
রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথের রাজনৈতিক শিষ্য, হিন্দুদের সমুদ্রযাত্রায় বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে সরব, বেঙ্গল একাডেমি অব লিটারেচার-এর (পরে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ) প্রথম সভাপতি, প্রয়াণ-শতবর্ষে রাজা বিনয়কৃষ্ণ দেব বাহাদুরকে স্মরণ করার কারণ নানাবিধ। পিছন থেকে যাঁরা চালিকাশক্তির কাজ করেন, তাঁদের কথা খুব কমই মনে রাখা হয়। বিনয়কৃষ্ণ ১৮৯৭-এর মিউনিসিপ্যাল বিলের বিরুদ্ধে রীতিমতো আন্দোলন সংগঠিত করেন, শেষে বিল আইনে পরিণত হলে সুরেন্দ্রনাথ এবং অন্য কাউন্সিলরদের সঙ্গে পদত্যাগও করেন। যোগ দিয়েছিলেন বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে। তাঁর বদান্যতা ছাড়া বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের টিকে থাকা কঠিন ছিল। বেনেভোলেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে সমাজসেবা, আর সাহিত্যসভার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের উন্নতিতে সচেষ্ট ছিলেন আমৃত্যু। তাঁর দি আর্লি হিস্টরি অ্যান্ড গ্রোথ অব ক্যালকাটা (১৯০৫) প্রথম ব্যক্তিগত উদ্যোগে লেখা এ শহরের ইতিহাস। সুতানুটি বইমেলা কমিটি ২৩ অগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ৬৭ই বিডন স্ট্রিটে ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়িতে তাঁর স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করেছে, দেবাশিস বসু বলবেন ‘আগামী কাল কলকাতার জন্মদিন নয়’ শীর্ষকে। সভামুখ্য অনুপ মতিলাল, প্রাক্কথনে সৌমিত্র শ্রীমানী। ‘স্মরণলেখ’ প্রকাশ করবেন প্রাক্তন রাজ্যপাল শ্যামলকুমার সেন।
|
সুরের সন্ধ্যা |
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
অনেকে বলেন, সুমন চট্টোপাধ্যায় কবীর সুমনের থেকে বড় সংগীতস্রষ্টা... কথাটা বলতেই হেসে উঠলেন কবীর সুমন। বললেন, “এটা যাঁরা বলেন তাঁরা বা তাঁদের একাংশ সুমন চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কেও এমনটাই বলতেন। আমার নাম, যদি ধরুন, সুমন চট্টোপাধ্যায় বা কবীর সুমন না হয়ে হত বালখিল্য সুমন তা হলেও গানটা তো করতাম আমি, আমার মতো। আর, আমি তো পাথর নই, আমি তো বদলাব, পরিবর্তন তো হবেই। এ বিষয়ে বড় সাংঘাতিক একটা কথা বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তাঁর ‘সংগীত ও ভাব’ প্রবন্ধে, ‘সংগীতে এতখানি প্রাণ থাকা চাই, যাহাতে সে সমাজের বয়সের সহিত বাড়িতে থাকে, সমাজের পরিবর্তনের সহিত পরিবর্তিত হইতে থাকে, সমাজের উপর নিজের প্রভাব বিস্তৃত করিতে পারে ও তাহার উপরে সমাজের প্রভাব প্রযুক্ত হয়।” সমাজের সেই প্রভাব, সাম্প্রতিককে আধুনিক করে তোলা, প্রক্রিয়াটা বার বার এসেছে সুমনের গানে। এই সে দিন, শিলাদিত্য চৌধুরীকে নিয়ে তৈরি করেছেন নতুন গান, ‘মম চিত্তে শিলাদিত্যে’। আজ, সপ্তর্ষি প্রকাশন আয়োজিত তাঁর একক অনুষ্ঠানে উপচে পড়বে যে-কলামন্দির সেখানে থাকবে রবীন্দ্রনাথ, হিমাংশু দত্ত এবং অবশ্যই তাঁর নিজের গান। রাজনীতি নয়, নিছক সুরের সেই সন্ধ্যা আগেই হাউসফুল। শুধু ফেসবুক-এ প্রচার করেই প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ হয়ে যাওয়ার এই ঘটনাও নিশ্চয় এ শহরের গানের ভুবনে এক পরিবর্তন। |
|
|
|
শততম জন্মদিন |
আজ ২০ অগস্ট, আজ কোথায় যাবেন? সার্ধশতবার্ষিক রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণমাস এখনও শেষ হয়নি। শত শত উদ্যাপনের দু’একটি থাকবে নিশ্চয় আজও। তবু, একটু অন্য পথে, মার্বেল বাঁধানো সিঁড়ি আর চকমিলানো উঠোনের একটু বাইরে যদি ভাবে এ কলকাতা মনে পড়বে হয়তো, ‘বারো ঘর এক উঠোন’-এর কথা। আর, মনে পড়বে, আজ, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর শততম জন্মদিন। কেউ তাঁকে বলেন ‘সুন্দরের কারিগর’, কেউ বলেন, ‘শব্দের জাদুকর’। কারও ভাবনায় চমক দেয় তাঁর প্রগতিশীলতা, কেউ খুঁজে পান মর্বিডিটি। কারও কাছে তিনি আত্মমগ্ন, কারও কাছে উত্তরণের দিশা। বাংলা সাহিত্যের বহু বিতর্কিত কিন্তু উপেক্ষিত ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীকে আজও কোনও সমগ্রতায় পাওয়া যায় না বইপাড়ায়। ছোটগল্পকার জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী প্রায় এক সাম্রাজ্যের অধীশ্বর। কিন্তু সাহিত্যের সেই ঔজ্জ্বল্য জীবনে ছিল না তাঁর। তিনি যেন এক ‘মলিন মানুষ’, এমনকী, পত্নীর স্মৃতি জানাচ্ছে, তিনি বিয়ে করতেও গিয়েছিলেন ময়লা ধুতি আর পাঞ্জাবি পরে! অধুনা বাংলাদেশের কুমিল্লার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শৈশব-কৈশোর কেটেছে, পড়েওছেন ওখানকার স্কুলে। বি এ পাশ করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে। কর্মজীবন পুরোপুরি কলকাতায়, টাটা এয়ারক্র্যাফট, জে ওয়াল্টার টমসন, আজাদ, যুগান্তর, জনসেবক। প্রথম গল্প ‘খেলনা’, প্রথম উপন্যাস ‘সূর্যমুখী’। জ্যোৎস্না রায় ছদ্মনামেও লিখতেন। ‘আজ কোথায় যাবেন’-এর মতো গল্পসংগ্রহ, ‘বারো ঘর এক উঠোন’-এর মতো উপন্যাস বাংলা সাহিত্যেই বিরল। তবু এই শতবর্ষেও তাঁকে নিয়ে তেমন উদ্যোগ নেই। কে জানে সেই বিস্ময় রয়ে গিয়েছিল তাঁর আর এক উপন্যাসের নামেই কি না ‘এই তার পুরস্কার!’ |
|
|
|
|
|
|
|