সম্মান রক্ষার্থে খুন
পাকিস্তানের আতঙ্ক কেন ব্রিটেনেও, প্রশ্ন নয়পল-পত্নীর
তাঁকে এখনও তাড়া করে বেড়ায় সেই দুঃসহ স্মৃতি। যে স্মৃতি পিছনে ফেলে তিনি পালিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু স্মৃতি তাঁর পিছু ছাড়েনি।
সম্মান রক্ষার্থে হত্যা, জোর করে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া এই সবই তাঁর দেশ, পাকিস্তানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। ১৯৯৬ সালে ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক ভি এস নয়পলের সঙ্গে বিয়ের পরে দেশের মাটি ছেড়ে ইংল্যান্ডে এসে হাঁপ ছাড়েন নাদিরা নয়পল। তাঁর কথায়, “মনে হয়েছিল সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি আর আমায় তাড়া করবে না।”
কিন্তু বাস্তবে ঘটল ঠিক উল্টো। পাকিস্তানের তুলনায় অনেক প্রগতিশীল লন্ডনেও সেই একই ছবি দেখে শিউরে উঠেছেন নাদিরা। তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন এখানকার সংবাদপত্রে। “এখানে বেড়ে ওঠা মেয়েদের চোখেমুখেও দেখি সেই আতঙ্ক। যে আতঙ্ক অনেক পিছনে ফেলে এসেছি বলে ভাবতাম,” লিখছেন নাদিরা।
বিশেষত সম্প্রতি ইংল্যান্ডের কিশোরী শাফিলিয়া আহমেদের ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পরে আরও উদ্বিগ্ন
নাদিরা নয়পল
নয়পল-পত্নী। পাক বংশোদ্ভূত শাফিলিয়ার জন্ম ইংল্যান্ডের ব্র্যাডফোর্ডে। সেই মেয়ের আধুনিক ভাবনাচিন্তা মেনে নিতে পারেনি তার রক্ষণশীল বাবা-মা। ১৭ বছরের মেয়েকে ‘শিক্ষা’ দিতে হাত-পা বেঁধে মুখে প্লাস্টিক গুঁজে শ্বাসরোধ করে খুন করে তার বাবা-মা। ন’বছর পরে শাফিলিয়ার বোন আলিশার সাক্ষ্যে সেই বাবা-মার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।
কিন্তু তাতে কী? নাদিরার আশঙ্কা, শাফিলিয়ার মতো ব্রিটেনে বেড়ে ওঠা এমন অনেক মেয়েই দু’ধরনের সংস্কৃতির চাপে হাঁপিয়ে উঠছে। নাদিরার কথায়, “মানসিক ভাবে পাকিস্তান আমায় শেষ করে দিয়েছিল। একটা হেরে যাওয়া লড়াই লড়তে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। ইংল্যান্ড সেই সময় আমার কাছে আশীর্বাদের মতো ছিল। কিন্তু সেই আতঙ্ক তো দেখি এখনকার মেয়েদেরও তাড়া করছে।” তিনি বুঝতে পারেন, ব্রিটেনে জন্মানো এই মেয়েরা পশ্চিমী জীবন ছাড়া কিছু জানে না। এই তরুণীরা বাইরে হয়তো দাপিয়ে কাজকর্ম করছে। কিন্তু বাড়ি ফিরে তাদের সেই বাবা-মায়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, যাঁরা পুরনো রক্ষণশীল সংস্কৃতিই আঁকড়ে বসে আছেন। তাঁরা মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন তাঁদের পছন্দ করা পাত্রের সঙ্গেই। যে হয়তো পাকিস্তানের কোনও গ্রামে বড় হওয়া দূর সম্পর্কের আত্মীয়। নাদিরা বলেন, “এই ধরনের বিয়ে ব্রিটেনে বড় হওয়া শিক্ষিত তরুণী কেন মানবে? আমি ওদের ভেতরের জমে থাকা রাগটা স্পষ্ট বুঝতে পারি।”
মুসলিম আধুনিকমনস্ক তরুণদের মধ্যেও এমন ক্ষোভের আঁচ টের পেয়েছেন লেখিকা। দুই প্রজন্মের এই সংঘাতে সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হয়, বাড়ে সম্মান রক্ষার্থে হত্যার মতো ঘটনাও মনে করছেন নাদিরা।
জোর করে বিয়ে বন্ধ করতে ব্রিটেনের বিদেশ দফতরে ‘ফোর্সড ম্যারেজ ইউনিট’ তৈরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার পরেও এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। নাদিরার মতে, শাফিলিয়ার মতো সবার হয়তো অতটা ভয়ঙ্কর পরিণতি হয় না। কিন্তু শাফিলিয়ার বাবা-মার মতো এমন অসংখ্য মানুষ ব্রিটেনে পাঁচ দশকেরও বেশি সময় জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের চিন্তায় পরিবর্তন ঘটেনি।
নাদিরার অভিযোগ, “যে সংস্কৃতিতে আত্মীয়দের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের রেওয়াজ রয়েছে, তা কেন ব্রিটেনের সরকার কখনও দেখারই চেষ্টা করেনি? ব্র্যাডফোর্ড বা লেস্টারের মতো শহরেও কেন কট্টর মুসলিমদের রক্ষণশীল মনোভাবকে কেউ চ্যালেঞ্জ করবে না?”
এদের বিরুদ্ধে উদারপন্থী মুসলিমদের সরব হতে অনুরোধ করছেন নাদিরা। আর কট্টরপন্থীদের প্রতি তাঁর বার্তা: “আপনি ইসলামের যে ভাবধারায় বিশ্বাসী, সেটা নিজের জায়গায় গিয়ে প্রচার করুন। এখানে ও সবের স্থান নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.