মানুষের বিশ্বাস জয় করার সংকল্পেই বিতর্কে মেলবন্ধন
এক অদ্ভুত বিতর্কসভা। তার্কিক মূলত চিকিৎসক ও সাংবাদিকেরা। কিন্তু সেখানে যুযুধান দু’পক্ষের বাদানুবাদ ছাপিয়ে উঠে এল পারস্পরিক সহমর্মিতা, বোঝাপড়া। বিতর্কের মধ্যে দিয়েই চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত ত্রুটি, নীতি সংক্রান্ত অসুবিধার কথা মেনে নিয়েছেন সাংবাদিকেরা। পাশাপাশি চিকিৎসকেরাও স্বীকার করেছেন, চিকিৎসা-সংক্রান্ত কোনও সমালোচনামূলক প্রতিবেদনের সঙ্গে ব্যক্তিগত আক্রোশের সম্পর্ক থাকে না, বরং থাকে সঠিক ঘটনা তুলে ধরার ব্যাপারে সাংবাদিকের পেশাগত দায়বদ্ধতা।
শনিবার বিকেলে প্রেস ক্লাবে আয়োজিত হয়েছিল বিতর্ক সভা, যার শিরোনাম ‘সংবাদমাধ্যম চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট।’ সেই তর্কসভা বদলে গেল আলোচনাসভায়, যেখানে পরস্পরের দিকে আঙুল না-তুলে সমস্যার শিকড় খুঁজে বার করার ব্যাপারে একমত হল দু’পক্ষই। চিকিৎসকদের সম্পর্কে মানুষের অবিশ্বাস তৈরির কারণটাকেই সমূলে উপড়ে ফেলায় জোর দিয়েছে উভয় পক্ষ।
আলোচনার শুরুটা হয়েছিল হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রজিৎ সর্দারের বক্তব্য দিয়ে, যিনি দাবি করেন, ডাক্তারদের নিয়ে চটকসর্বস্ব লেখায় সাংবাদিকদের আগ্রহ। “ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ সব সময় শিরোনামে থাকে। কিন্তু সেই অভিযোগ থেকে চিকিৎসক মুক্ত হলে সেই খবর ছাপা হয় ভিতরের পাতায় বিজ্ঞাপনের এককোণে।”
শুনে ফুঁসে উঠেছিলেন বিপক্ষের তার্কিক, ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল। “চিকিৎসকেরা ভুল করবেন আর তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু লেখা যাবে না! চ্যানেলে-চ্যানেলে চিকিৎসকেরা রোগ নিয়ে মতামত দেবেন। ম্যাগাজিন-খবরের কাগজে তাঁদের কথা ছাপা হবে। সে বেলা তো তাঁরা মিডিয়াকে হাতিয়ার করেই নিজেদের প্রচার করেন!”
চিকিৎসকদের পক্ষে অধ্যাপিকা চৈতালি মৈত্র যখন বলেন, “ডাক্তারেরা অন্যায় করলে তা দেখার জন্য মেডিক্যাল কাউন্সিল রয়েছে। কিন্তু প্রচারমাধ্যমের জন্য কেন কোনও নিয়ামক সংস্থা নেই?” তখনই বিপক্ষে বলতে উঠে একটার পর একটা ঘটনার উল্লেখ করেন সাংবাদিক দেবাশিস ভট্টাচার্য। গত কয়েক মাসে সংবাদপত্রে প্রকাশিত কয়েকটি চিকিৎসা সংক্রান্ত খবর। রোগীর বাঁ পায়ের বদলে ডান পায়ে অস্ত্রোপচার, অপারেশন রুমে একাধিক মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভকে ঢুকিয়ে স্টেন্টের দাম নিয়ে দরাদরি, অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে সদ্যোজাতের খুলি কেটে ফেলা। দেবাশিসবাবুর কথায়, “এই সব হবে আর সংবাদমাধ্যম কিছু লিখবে না? সাংবাদিকেরা তো ‘রিফর্মার’ নন, তাঁরা ‘ইনফর্মার’।”
চিকিৎসক শৈবাল চক্রবর্তী সাংবাদিকদের ঠুকে বললেন, “আজকাল রিপোর্টারেরা খবর রিপোর্ট করেন না, তৈরি করেন।” জবাবে বলতে উঠলেন শল্যচিকিৎসক কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। নিজে চিকিৎসক হয়েও এ দিন যিনি ছিলেন সাংবাদিকদের দলে। কৃষ্ণেন্দুবাবু বললেন, “সংবাদমাধ্যমের ধর্মই তো সমালোচনা। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই চিকিৎসাপদ্ধতি ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে লেখে মিডিয়া। আসলে সমাজই ডাক্তারদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আর সংবাদমাধ্যম সেই সমাজেরই দর্পণ।” তাঁরই কথার রেশ টেনে সাংবাদিক স্বাতী ভট্টাচার্যের গলায় শোনা যায়, “যে সব ডাক্তার হাসপাতালে পরিষেবা না দিয়ে প্রাইভেট সেক্টরকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, আমি সেই ডাক্তারদের বিরুদ্ধে লিখবই। যিনি কন্যাভ্রূণ হত্যা করছেন, তাঁর বিরুদ্ধে লিখবই।”
লেখিকা সুজাতা মুখোপাধ্যায়ের চিকিৎসা সংক্রান্ত দু’টি বই প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত শনিবারের বিতর্কসভায় প্রস্তাবের পক্ষের তার্কিকদের দলে ছিলেন চিকিৎসক কুণাল সরকার।
শেষ পর্যন্ত পক্ষহীন ভাবে আলোচনায় রফাসূত্র টেনে আনেন তিনিই। বলেন, “সাংবাদিক বনাম ডাক্তারের লড়াই নয়, উদ্বেগের জায়গাটা আসলে ডাক্তারি পেশার স্বাস্থ্য নিয়ে। মিডিয়া তো চিরকালই পক্ষপাতদুষ্ট। কিন্তু কেন পক্ষপাতদুষ্ট? কেন আজ এই বিতর্কসভার আয়োজন করতে হচ্ছে? আমরা এই বিশ্বাসটা পৌঁছে দিতে পারছি না যে আমরা ডাক্তারি পেশাটার প্রতি সৎ। চিকিৎসকদের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ফেরানোটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”

চিকিৎসায় সুযোগ নিয়ে
কলকাতায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ার সম্ভাবনা ও নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের সুযোগ খতিয়ে দেখতে গুড়গাঁওয়ের আরটেমিস হেল্থ ইনস্টিটিউটের এক প্রতিনিধিদল শহরে এসেছেন। তাঁরা বিভিন্ন চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন। কোনও হাসপাতালের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও তাঁরা ভাবছেন বলে ইনস্টিটিউটের তরফে জানান দেবলীনা চক্রবর্তী। ইন্দিরা গাঁধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আরটেমিস আইসিইউ নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয় বলে তিনি জানান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.