স্কুল ‘দখল’ করে তৃণমূলের সম্মেলন
স্কুলে এসেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। স্কুলের চাতাল জুড়ে তেরঙ্গা কাপড়ের ম্যারাপ। তৃণমূলের অজস্র পতাকা আর শিকলিতে প্রায় ঢেকে গিয়েছে স্কুল চত্বর। আর ছাত্র কোথায়? স্কুলের উঠোন, বারান্দায় হম্বিতম্বি করে বেড়াচ্ছে কয়েকশো তৃণমূল কর্মী।
ঠিকানা ভুল হল নাকি? শনিবার সকালে নদিয়ার শান্তিপুর উত্তরচাঁদড়া প্রাথমিক স্কুলে ঢুকে প্রধান শিক্ষক মিন্টু মুখোপাধ্যায় এমনই ধন্দে পড়েছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তৃণমূলের আড়বান্দি-১ অঞ্চল কমিটির কর্মী সম্মেলন হতে চলেছে। কিন্তু অনুমতি দিল কে? তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা জানিয়ে দেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির অনুমতি রয়েছে তাঁদের পকেটে।
শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতির দাপাদাপি ‘বরদাস্ত’ করা হবে না, স্কুল-কলেজে একাধিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই দলীয় নেতা-কর্মীদের এই বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও ঘটনা ঘটে চলেছে।
মিন্টুবাবু বলেন, “এ দিন মনসা পুজোর জন্য কম হলেও ছাত্রছাত্রীরা এসেছিল। কিন্তু অনেকেই স্কুলে ম্যারাপ বাঁধা দেখে ফিরে গিয়েছে।” তৃণমূল কর্মীদের কাছে কর্মী-সম্মেলনের কথা শুনে তিনি তখনই ফোন করেছিলেন জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের সভাপতি অর্চনা ঘোষ সরকারকে। তাঁর কাছেই শোনেন, অর্চনাদেবীই সম্মেলনের অনুমতি দিয়েছেন।
কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষককে না জানিয়ে সংসদ সভাপতি এমন ‘অনুমতি’ দিতে পারেন? সরকারি নিয়ম অবশ্য সে কথা বলছে না। রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “প্রাথমিক স্কুল চত্বরে কোনও সভা বা অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অনুমোদনই শেষ কথা। তাঁর সুপারিশ মেনেই অনুমতি দেয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। তবে স্কুল ছুটি দিয়ে নয়, সে অনুমোদনও নিয়মানুযায়ী ছুটির দিনে দেওয়ার কথা।”
অর্চনাদেবী অবশ্য দাবি করেন, “আমি ওঁদের স্কুল শেষে সভা করার অনুমতি দিয়েছিলাম।” কিন্তু প্রধান শিক্ষককে না জানিয়ে ওই অনুষ্ঠান হয় কী করে? শিক্ষা সংসদের সভাপতির সাফাই, “মনসা পুজো তো, আমি ভেবেছিলাম পড়ুয়ারা তেমন আসবে না। পঠনপাঠনের খুব ক্ষতি বোধহয় হয়নি।” সমালোচনার সুযোগ ছাড়ছে না সিপিএম। শান্তিপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক শান্তনু চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “এ ভাবে স্কুল চত্বরে দলীয় সম্মেলনের অনুমতি দিয়ে শিক্ষা সংসদ দেখিয়ে দিল শিক্ষাক্ষেত্রে কী করে নৈরাজ্য ডেকে আনতে হয়!”
এ দিন, সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক (রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম) পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “অহেতুক বিতর্ক হচ্ছে। আমি তো দেখেছি, ছুটির পরেই সম্মেলন হয়েছে।” অভিভাবকদের একাংশের পাল্টা দাবি, সকাল থেকেই তেড়েফুঁড়ে মাইক বাজানো হয়েছে। তবে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি শ্যামল বিশ্বাসের দাবি, “স্কুল চলাকালীন মাইক বাজানো হয়নি। স্কুল ছুটির পরে সম্মেলন শুরু হয়েছে। কোনও অন্যায় তো দেখছি না।”

আর্জি প্রত্যাহার
খুনের মামলা থেকে চার তৃণমূল কর্মীর নাম প্রত্যাহার করার আর্জি জানিয়েছিল রাজ্যের আইন দফতর। শনিবার সেই আবেদন খারিজ করে জেলা আদালতে মামলা পাঠালেন রানাঘাট ফাস্ট ট্র্যাক প্রথম আদালতের বিচারক কল্লোল চট্টোপাধ্যায়। ২০০৫-এর ২৮ জানুয়ারি হাঁসখালির ভায়নায় সিপিএম কর্মী স্বপন বিশ্বাস খুনের জেরেই এই মামলা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.