সময়টা ষাটের দশকের শেষ দিক। হাওড়ার দাশনগরে জন্মাষ্টমীর মেলায় গিয়ে আয়োজন দেখে অভিভূত হয়েছিলেন বার্নপুরের প্রান্তিক ক্লাবের এক কর্তা। নিজের এলাকাতেও এমন একটা মেলার আয়োজন করার ইচ্ছে জাগে তাঁর। ফিরে এসে ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরে শুরু হয় মেলা। ১৯৭০ সালে শুরু হওয়া এই মেলা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন আকারেও বেড়েছে।
ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানান, এলাকার মানুষের মধ্যে জন্মাষ্টমী পুজো উপলক্ষে মেলার চাহিদা ছিল। ক্লাবের বর্তমান সহ-সভাপতি পঙ্কজ ঘোষ জানান, এক সময়ে হাওড়ার দাশনগরে জন্মাষ্টমীর মেলায় নানা মডেলের প্রদর্শনী দেখে মুগ্ধ হন। তার পরেই ফিরে এসে এলাকায় তেমন একটি মেলা করার প্রস্তাব দেন। তাঁর কথায়, “১৯৭০ সালে মেলা চালুর সিদ্ধান্ত হয়। আমি দায়িত্ব নিই। আগে মেলা হত ১৫ দিন। এখন তা বেড়ে হয়েছে কুড়ি দিন। এই মেলা এলাকার এত বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে দেখে ভাল লাগে। কৃষ্ণলীলার প্রদর্শনী দেখতে এখনও প্রচুর ভিড় হয়।”
|
সম্পাদক তপন রায় বলেন, “মেলা শুরু হয়েছিল ক্লাব প্রাঙ্গণে। কিন্তু সেখানে কম জায়গায় সব মানুষের সঙ্কুলান সম্ভব হচ্ছিল না। তাই ১৯৮৬ সাল থেকে ইস্কোর ১০ নম্বর গেটের সামনে বড় মাঠে মেলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।” তিনি জানান, মানুষের ভিড় মেলা প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে উপচে পড়ে রাস্তায়। পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভিড় সামলাতে বড় ভূমিকা নেন ক্লাবের স্বেচ্ছাসেবকেরা। ইস্কো মাঠ ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে।
১৯৮৩ সাল থেকে এই মেলায় নিখরচায় স্বাস্থ্যপরীক্ষার আয়োজন করে আসছে ‘বার্নপুর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ভলান্টারি ব্লাড ডোনর্স অ্যাসোসিয়েশন’। প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত এই পরিষেবা দিয়ে তাকে তারা। ব্যবস্থা করা হয় ওষুধেরও। মেলায় আসা দোকানদারেরা জানান, এই স্বাস্থ্যপরীক্ষা শিবিরের জন্য তাঁরাও যথেষ্ট উপকৃত হন। ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন অ্যান্ড ইমিউনোহেমাটলজি’র আজীবন সদস্য প্রবীর ধর বলেন, “এই জন্মাষ্টমী উৎসবে ২২ দিন স্বাস্থ্যপরীক্ষা শিবির হয়। তাতে প্রায় ৪০ জন চিকিৎসক যুক্ত থাকেন। এতে চিকিৎসকেরাও উদ্বুদ্ধ হন।” আক্ষরিক অর্থেই এই মেলা এলাকায় মিলনমেলার চেহারা নেয়। পুরুষোত্তমপুর, সূর্যনগর, ধেনুয়া, বিনোদবাঁধ, হিরাপুর, সুভাষপল্লি, পুরনোহাট ও সংলগ্ন এলাকার বহু মানুষ সেখানে ভিড় জমান। ডিহিকার জ্যোৎস্না বড়ুয়া, হিরাপুরের উপানন্দ ঠাকুর, নবঘন্টির সুকান্ত ভট্টাচার্যদের কথায়, “সারা বছর আমরা যেন এই মেলার অপেক্ষাতেই থাকি।” |