শহরের রাস্তায় বেপরোয়া বাইক চলাচল রুখতে পুলিশ কড়া হাতে ব্যবস্থা নিক, চাইছে জলপাইগুড়ির সব রাজনৈতিক দলই।
চলতি মাসে পরপর দু’বার বেপরোয়া বাইক চালানোকে কেন্দ্র করে শহরে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে শুক্রবার পৃথক ভাবে স্মারকলিপি দিয়েছে কংগ্রেস-তৃণমূল-সিপিএম। শুক্রবার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের তরফে শহরের ট্রাফিক বিভাগে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠন ডিএসপি ট্রাফিককে স্মারকলিপি দিয়েছে। কংগ্রেস পরিচালিত জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান জেলা পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়ে বেপরোয়া বাইক আরোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। তিন ক্ষেত্রেই অভিযোগ একই। সকাল হোক বা সন্ধ্যা শহরের কদমতলা, পূর্ত দফতরের মোড়, পোস্ট অফিস মোড়, রেসকোর্স, বেগুনটারি, পান্ডাপাড়ার মত ব্যস্ত এলাকার ভিড়ে ঠাসা রাস্তা দিয়ে সজোরে হর্ন বাজিয়ে ঝড়ের গতিতে একেবেঁকে বাইক নিয়ে দল বেঁধে চলে যায় একাংশ যুবক। এই বাইক বাহিনী যাওয়ার পথে কোনও সাইকেল, রিকশা বা যানবাহন এলে এমন বিপজ্জনকভাবে পাশ কাটিয়ে ফুটপাতে বাইক উঠিয়ে দেওয়া হয়, যে পথচারীদের ধাক্কা লাগার আশঙ্কা তৈরি হয়। মাসখানেক আগে শহরের কদমতলা এলাকায় এমন এক বাইক আরোহীকে পথচারীরা আটকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণেই ওই ধরণের বাইক আরোহী যুবকদের রোখা সম্ভব হচ্ছে না অভিযোগ। হেলমেট ছাড়া অথবা তিনজনে কিংবা ট্রাফিক আইন ভেঙে জোরে বাইক চালালেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ। এ দিন জেলা পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “বিষয়টি দেখছি।” স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সপ্তাহখানেক আগে শহরের ৭৩ মোড় এলাকার বাসিন্দারা বাইক আরোহী তিন যুবককে আটকে গনপিটুনি দেয়। বাইকটি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, প্রতি সন্ধ্যায় একাংশ যুবক বেপরোয়া ভাবে বাইক নিয়ে এলাকায় দাপিয় বেড়ায়। এতে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা লেগে থাকে। যদিও যে বাইক আরোহীদের সেদিন গনপিটুনি দেওয়া হয়েছিল তারা কেউ দোষ করেননি বলে বলে পরে জানা যায়। অন্ধকারে বাসিন্দাদের একাংশ তাঁদের বাইক বাহিনীর সদস্য ভেবে ধরেন। এই ঘটনার পরে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের বাবুপাড়ার একটি প্রাথমিক স্কুলের তিন বছরের ছাত্রীকে পিষে দেয় একটি বাইক। অভিযোগ, তিন মদ্যপ যুবক বেপরোয়া ভাবে বাইক চালিয়ে এবং নানা কসরত দেখিয়ে যাওয়ার পথেই ওই ছাত্রীকে পিষে দেয়। তিন বছর বয়সী ছাত্রীটির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যদিও অভিযুক্ত আরোহীদের খুঁজে পায়নি পুলিশ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিবারই বেপরোয়া বাইক চালানোর ঘটনায় দুর্ঘটনা ঘটলে অভিযুক্তরা অধরাই থেকে যায়। পুলিশ দর্শকের ভুমিকায় থাকে।
পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “শহরের প্রতিদিনই এই ধরনের বাইক বাহিনীর জন্য দুর্ঘটনা ঘটে চলছে। অথচ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।” তৃণমূল যুব নেতা প্রতীকলাল ঝা বলেন, “পুলিশকে শহরে বাইকের অত্যাচার থামাতে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” ডিওয়াইএফ নেতা দীপশুভ্র সান্যাল বলেন, “পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে।” ট্রাফিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদর ডিএসপি প্রভাত চক্রবর্তী বলেন, “বাইকের দৌরাত্ম্য থামাতে দ্রুত অভিযান শুরু করা হচ্ছে।” |