বহরমপুরের পরে এ বার আলিপুরদুয়ারে। কাজে ‘গাফিলতি’র জন্য ‘শাস্তি’ দিতে অল্প বয়সী পরিচারিকার গায়ে চেপে ধরা হল গরম খুন্তি। বহরমপুরের বছর আটেকের শিবু সিংহের মতো আলিপুরদুয়ারের ১২ বছরের এরিনিতা মুণ্ডারও পাশে দাঁড়িয়েছেন পাড়ার লোকেরা। তাঁরাই এরিনিতাকে আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে এরিনিতাকে আলিপুরদুয়ার থানায় ‘সেফ কাস্টডি’তে রাখা হয়েছে।
|
এরিনিতা মুণ্ডা |
মুদির দোকানে ভিড় ছিল। তাই বহরমপুরের এক ব্যবসায়ী কিশোর ভকতের বাড়ির নাবালক পরিচারক শিবুর দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনে ফিরতে সামান্য দেরি হয়েছিল। তারই ‘শাস্তি’ জুটেছিল গালে গরম খুন্তির ছেঁকা। আলিপুরদুয়ার শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজি রোডের বাসিন্দা কৃষ্ণা সাহার পরিবারের পরিচারিকা এরিনিতা গিয়েছিল বাড়ির সামনের একটি কল থেকে জল আনতে। ফেরার পথে দেখতে পায় রাস্তার ধারের নালার সামনে একটা সাপ বেরিয়েছে। পাড়ারই কয়েকটি ছেলে সেটি দেখতে পেয়েছে। তাদের সঙ্গে জুটে এরিনিতাও কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে। তাতেই তার ফিরতে অল্প দেরি হয়ে যায়। এই ‘অপরাধে’ই কৃষ্ণাদেবী তার ডান হাতের কনুইতে গরম খুন্তিু চেপে ধরেন বলে অভিযোগ। ওই নাবালিকা চিৎকার করে উঠলে এলাকার বাসিন্দারা ছুটে যান। তাঁরাই এরিনিতার হাতের অবস্থা দেখে হাসপাতালে নিয়ে যান, খবর দেন পুলিশকে। এরিনিতার কনুইয়ে ফোসকা পড়ে গিয়েছে। কৃষ্ণাদেবীর অবশ্য দাবি, “গরম খুন্তি নিয়ে মেয়েটিকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম। গায়ে লেগে যাবে ভাবিনি। এর আগে বকাঝকা কিংবা সামান্য মারধরের বেশি কিছু করিনি।”
প্রতিবেশীদের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ কৃষ্ণাদেবীর বিরুদ্ধে শিশু শ্রম ও নাবালিকার উপরে অত্যাচারের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। তাঁকে আটক করা হয়েছে। আলিপুরদুয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত আইসি সুদীপ ভট্টাচার্য জানান, ওই মহিলাকে গ্রেফতার করা হবে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজের বাচ্চার দেখাশুনার জন্য কৃষ্ণাদেবী এরিনিতাকে শামুকতলা থানার চুড়িয়াঝোরা চা বাগান থেকে বছর দু’য়েক আগে নিয়ে আসেন। প্রায়ই এরিনিতাকে মারধর করেন তিনি বলেও অভিযোগ।
এরিনিতার বাবা সুখরাম চুনিয়াঝোরা চা বাগানে দিনমজুরির কাজ করেন। স্থানীয় বাসিন্দা তথা টাউন ব্লক কংগ্রেসের সদস্যা সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কৃষ্ণাদেবী পাড়ায় ভাল মহিলা বলেই পরিচিত। তিনি শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, স্বামী ও দুই বছরের মেয়েকে নিয়ে থাকেন। এরনিতা কৃষ্ণাদেবীর মেয়ের দেখাশোনা করত। এ দিন কেন এরকম ঘটনা ঘটল বুঝতে পারছি না।” |