|
|
|
|
|
|
|
নাটক সমালোচনা ২... |
|
শেষ হয় কৃষ্ণের মৃত্যুতে |
কলাপীর গীতা নাটকে। লিখছেন বিপ্লবকুমার ঘোষ। |
গীতার মতো একটি জটিল বিষয়বস্তুকে সহজবোধ্য ভাবে এবং নৈপুণ্যের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থাপন করেছেন জ্যোতির্ময় বক্সী। ‘কলাপী’ নাট্যমঞ্চের বয়স মাত্র কয়েক বছর হলেও এমন বিষয়কে মঞ্চস্থ করার জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ পাবেন। জ্যোতির্ময়ের দাবি, সম্ভবত তাঁরাই এই বিষয়কে প্রথম মঞ্চে নিয়ে এলেন। শুরুতেই বলতে হয় নাট্যকারের ভূমিকা। এত বড় কাহিনির প্রতিটি অধ্যায় স্পর্শ করে এবং মূল ভাবাবেগকে অক্ষুণ্ণ রেখে তা আড়াই ঘণ্টায় মঞ্চে উপস্থাপন সত্যিই নাট্যকারের অভাবনীয় মুন্সিয়ানা। এই গবেষণামূলক লেখনির দায়ভার সফল ভাবে করেছেন কমল চক্রবর্তী।
কৃষ্ণের ভূমিকায় জ্যোতির্ময় বক্সীর অভিনয় নাটকটিকে এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। কৃষ্ণ চরিত্রে তিনি যথার্থ ও সাবলীল। এর আগে ‘নষ্টনীড়’ নাটকেও তিনি সাবলীল অভিনয় করে প্রশংসা পেয়েছিলেন। সত্যি বলতে কি, কৃষ্ণ এই অতিমানবিক চরিত্রটি ঠিক কী রকম সে সম্বন্ধে আমাদের সঠিক উপলব্ধি না থাকলেও বড় পর্দায়, ছোট পর্দায় বা মঞ্চে বিভিন্ন অভিনেতার অভিনয় দেখে এবং মহাভারত পড়ে কৃষ্ণের একটা ছবি এমনিতেই তৈরি হয়ে আছে। কিন্তু জ্যোতির্ময়ের কৃষ্ণ চরিত্র সেই ধ্যানধারণা থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে।
এখানে কৃষ্ণকে দেখা গেছে ভারতের এক নেতা রূপেও। যিনি ভারতভূমিকে এক মহান দেশের তকমায় গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চান। এই লক্ষ্যে পৌঁছতে তিনি কখনও কূট, কখনও স্নেহ-বৎসল, কখনও রাগী, কখনও মনোবিজ্ঞানী কিন্তু ভাবলেশহীন হাস্যময় চরিত্র। |
|
প্রতিটি দিক জ্যোতির্ময় নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন। সাধুবাদ জানাতেই হয় শিল্পীকে। জ্যোতির্ময়ের অভিনয়ের শুরুর দিকটা দেখে মনে হয়েছিল উনি ব্রেখটের এপিক স্টাইলে কৃষ্ণ চরিত্রের প্রতিটি দিক আলাদা আলাদা ধরে নিয়ে সহজ ও প্রশস্ত রাজপথে হাঁটছেন। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে ততই মনে হয়েছে ঠিক তা নয়, স্তানিস্লাভস্কির পদ্ধতি মেনে তিনি চরিত্রের সব দিকে প্রায় সমান ভাবে ওই চরিত্রে ঘোরাফেরা করেছেন।
এই নাটক দর্শকদের কাছে অনেকটাই সহজবোধ্য হয়েছে কৃষ্ণরূপী জ্যোতির্ময়ের সংলাপগুলি। যেখানে তৎসম, তৎভব এবং মূল কাহিনির কঠিন শব্দগুলিও এই নাটকে সহজবোধ্য হয়ে উঠেছে। সুদর্শন অনির্বাণের শারীরিক উচ্চতা এবং সুন্দর কণ্ঠস্বরের জন্য অর্জুন চরিত্রে মনে দাগ কেটে যায়। কিন্তু নাটক যতই এগোতে থাকে ততই মনে হয়, তাঁর আরও মনোযোগী হওয়া উচিত ছিল। তাই শেষ দিকে তাঁর অভিনয়ের ধার কমেছে। নাটকে অন্য দুই চরিত্র ধৃতরাষ্ট্র এবং সঞ্জয়ের ভূমিকায় স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিশ্বজিৎ আচার্য বেশ মানানসই। নাটকের তিন মহিলা চরিত্রে দ্রৌপদী, কুন্তি এবং গান্ধারীর ভূমিকায় সংযুক্তা সেন, মধুপর্ণা এবং চৈতালী মৌলিক বেশ সাবলীল। বাচ্চাদের সঙ্গে খেলার দৃশ্যটিতে চৈতালীর অভিনয় নাটকটির এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। সৈনিক এবং জরা এই দুই ছোট ছোট চরিত্রকে অত্যন্ত নৈপুণ্যের সঙ্গে অভিনয় করেছেন নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য। তুরঙ্গি ও মঙ্গলের ভূমিকায় চিন্ময়ী ও রাজু যথেষ্ট ভাল।
মঞ্চ ভাবনায় শৈল্পিক দিক ফুটিয়ে তুলেছেন সোমনাথ মজুমদার। বাদল দাসের আলোয় প্রতিফলিত হয়েছে পৌরাণিক মায়ার খেলা।
এই নাটকের সবচেয়ে বড় চমক শেষ দৃশ্যে। যেখানে কৃষ্ণের মৃত্যু দেখানো হয়েছে যা গীতার বিষয়বস্তু না হলেও নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। বলতে নেই, চোখে জল এসে যায়। |
|
|
|
|
|