নাটক সমালোচনা ১...
রাজনৈতিক হত্যা
ঞ্চম বৈদিকের প্রযোজনার সঙ্গে পরিচয় বহু দিনের। শাঁওলী মিত্রকে জানি তারও আগে থেকে। তখন আমি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। শাঁওলীদির বাড়িতে অনেকের সঙ্গে একসঙ্গে বসে কিছু রবীন্দ্রকবিতার আবৃত্তি শিখেছিলাম। ‘আজিকে গহন কালিমা লেগেছে গগনে ওগো’ কিংবা ‘পথের পথিক করেছ আমায়, সেই ভালো ওগো সেই ভালো’ ইত্যাদি। শিখেছিলাম কোনও একটি অনুষ্ঠান উপলক্ষে। শাঁওলীদি সেই অনুষ্ঠানে আমাদের মতো কয়েকজনের সঙ্গে আবৃত্তি পরিবেশন করেছিলেন। শিখিয়েছিলেন স্তোত্র উচ্চারণও ‘রুদ্র ইয়ত্তে দক্ষিণং...’, ‘হে রুদ্র, তোমার যে প্রসন্ন মুখ, তাহার দ্বারা আমাদের প্রতিনিয়ত রক্ষা করো।’ সেই সব শিক্ষণীয় মুহূর্তের স্মৃতিগুলো আজও উজ্জ্বল। তার পর থেকে যখনই সুযোগ হয়েছে ছুটে গিয়েছি কোনও প্রেক্ষাগৃহে তাঁর আবৃত্তি কী পাঠের স্বাদ নিতে কিংবা কোনও নাট্য প্রযোজনায়। এ ভাবেই দেখা ‘নাথবতী অনাথবৎ’, ‘কথা অমৃতসমান’, ‘বিতত বিতংস’ কী ‘পশুখামার’। তিরিশ বছর পূর্ণ হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে তাদের নবতম প্রযোজনা ‘অচলায়তন’ এই সেদিন মঞ্চস্থ হল।
আমি যে নাটকটি ইতিমধ্যে দেখে এলাম, সেটি শাঁওলী মিত্রের নির্দেশনায় প্রথম মঞ্চস্থ হয় ‘রাজনৈতিক হত্যা’। মূল নাটক জঁ পল সার্ত্র-এর। অনুবাদক অর্পিতা ঘোষ।
চল্লিশের দশকে পৃথিবী জুড়ে যখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের হাওয়া, সেই ঐতিহাসিক পটভূমিতে এই নাটকের জন্ম। এ নাটক একাধারে রাজনৈতিক এবং মানবিক। সাম্যবাদ, রাজনৈতিক মতবিরোধ, বুর্জোয়া শ্রেণির প্রতি ঘৃণা, প্রেম, অনুরাগ, দ্বন্দ্ব এবং হত্যা সব মিলিয়ে দু’ ঘণ্টার টানটান উত্তেজনা। রুদ্ধশ্বাস বেশ কিছু মুহূর্ত। বিশেষ করে নবীন বুদ্ধিজীবী য়ুগো-র সঙ্গে প্রোলেতারিয়ন নেতা ওয়েদরা-র বোঝাপড়ার মুহূর্তগুলি। ওয়েদরা-কে সে হত্যা করতে এসেছে অথচ তার ব্যক্তিত্বের প্রতি সে আকৃষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তার পরও থেকে যায় অনেক প্রশ্ন। সাম্যবাদী রাজনীতির সঠিক পথ নিয়ে সংশয়। প্রশ্ন থেকে যায় রাজনৈতিক পদ্ধতিগুলি নিয়েও। সময় পাল্টে গেছে। কিন্তু প্রশ্নগুলি তখনও ছিল। এখনও আছে। সমাজ সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে সেই সব প্রশ্ন আমাদের প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। সার্ত্রর এই নাটক থেকে রাজনীতি সচেতন দর্শক তার উত্তর খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
য়ুগো না ওয়েদরা এই নিয়ে অনেকের মতো আমিও সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করেছি। আর চেষ্টা করেছি তড়িৎ ভট্টাচার্যের সঙ্গীতে, চন্দন দাসের আলোয় এবং পঞ্চম বৈদিকের অন্যান্য কুশীলব অনির্বাণ, স্বপন, পলাশ, পল্লব, দেবকমল, সৌম্য, অমিতেশদের আবেগের মধ্যে প্রায় কুড়ি বছর আগের নিজেকে খুঁজে পেতে, যে মেয়েটি শাঁওলী মিত্রের সামনে বসে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাঁর উচ্চারণ, দম, স্বরক্ষেপণ, বোধ পরিশ্রম ও নিষ্ঠা থেকে অনেক কিছু শিখে এবং বুঝে নেবার চেষ্টা করত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.