|
আপনার সাহায্যে... |
|
পেসমেকার নিয়ে ভয় পাবেন না
উত্তরবঙ্গে এখন তো এটা কোনও ব্যাপারই নয়। অনেকেই সিঁড়ি ভাঙা
থেকে ছুটন্ত বাসও ধরছেন।
স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ভরসা
জোগাচ্ছেন ডা. শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় |
পেসমেকার তো আজকাল ঘরে ঘরে। তাঁরা দিব্যি স্বাভাবিক। |
হ্যাঁ, তা বলতে পারেন।
|
দৌড়ে বাস ধরছেন, পাঁচতলার সিঁড়ি ভাঙছেন। এতটা স্বাভাবিক? |
নয় কেন? রেট রেসপনসিভ পেসমেকার লাগালে আপনি সব কিছু করতে পারবেন।
|
মানে? |
আপনি যখন হাঁটেন, হার্টকে যতখানি খাটতে হয়, যখন দৌড়ান, তার চেয়ে বেশি খাটতে হয় তো? এই পেসমেকার বুঝে নেয় কখন কতখানি খাটতে হবে। বুঝে সেই পরিমাণ শক্তি জোগান দেয় হার্টকে। মিটে গেল।
শক্তি বলতে?
ইলেকট্রিক কারেন্ট। হার্ট তো একটা পাম্প। তাকে চলতে গেলে তো কারেন্ট চাই। হার্টের নিজস্ব যোগান আছে। কমজোর হলে পেসমেকার বসিয়ে কমতিটা পুষিয়ে দেওয়া হয়।
পেসমেকার বসানো মানে তার-টার সব যাবে হার্টের মধ্য দিয়ে?
তা তো যাবেই।
কী করে যায়?
বুকের বাঁ দিকে কণ্ঠার নীচে চামড়া একটুখানি কেটে জেনারেটর আর কম্পিউটার সমেত বাক্সটা বসিয়ে দেওয়া হয়। জেনারেটর থেকে তার বেরোয়। এই তার শিরার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় হার্টের নির্দিষ্ট অংশে। চামড়াটা সেলাই করে নিলেই হল।
চলতে ফিরতে খুলে যাবে না?
না। তারের মাথায় কতকগুলো ছোট ছোট আংটা লাগানো থাকে। আংটাগুলো হার্টের ভিতরের দেওয়ালে আটকে যায়।
|
আপনি বাঁ দিক বলছেন, পেসমেকার তো ডান দিকেও লাগানো হয় দেখি। |
বাঁ হাতি হলে ডান দিকে লাগাতে হবে। না হলে বাঁ দিকেই।
|
ব্যথা লাগে না? |
না, অবশ করে নেওয়া হয়।
|
অজ্ঞান করা হয় না? |
দরকার লাগে না।
|
ইনফেকশন হতে পারে কি? |
সে সম্ভাবনা খুবই কম।
|
কোনও নিয়ম? |
নিয়ম বলতে, সরাসরি বুকে ধাক্কাটা না লাগে, খেয়াল রাখতে হবে।
|
মোবাইল ফোনে অসুবিধে হতে পারে? |
যদি সাবধান হতে চান, বুক পকেটে মোবাইল রাখবেন না। ফোন ধরবেন যে দিকে পেসমেকার বসানো হয়েছে তার উল্টো দিকের হাতে। |
|
পেসমেকার কি শুধু একই রকম হয়? |
দেখুন হার্ট ব্লকে সাধারণত দু’রকম পেসমেকার ব্যবহার করা হয়। সিঙ্গল চেম্বার এবং ডুয়াল চেম্বার। সিঙ্গল চেম্বার মানে হার্টের একটা চেম্বারে ইলেকট্রিক কারেন্ট যাচ্ছে, ডুয়াল চেম্বার মানে শক্তির জোগান পাচ্ছে দুটো চেম্বারই। স্বাভাবিক ভাবেই ডুয়াল চেম্বারে কাজ ভাল হবে। আরও ভাল ভাবে কাজ করার জন্য সিঙ্গল, ডুয়াল দুইয়ের সঙ্গে রেট রেসপনসিভ পেসমেকার জুড়ে দেওয়া যায়। এ বার এই রেট রেসপনসিভের কাজ কী? শরীরের প্রয়োজন বুঝে কমবেশি শক্তির জোগান দেওয়া। যার যেমন রোগ, যেমন জীবনযাপন, তার সঙ্গে মানিয়ে গুছিয়ে পেসমেকার বসাতে হয়।
|
সবই এত জটিল! |
জটিল কিছু না। কিছু জায়গায় সিঙ্গল চেম্বার বসালে হয়তো মোটামুটি কাজ চলে যায়, কিন্তু বসানো যায় না তাঁর জীবনযাপনের জন্য। যেমন ধরুন, বয়স্ক মানুষ, মোটামুটি শুয়ে বসে থাকেন তার সিঙ্গল চেম্বার বসানো গেল, কিন্তু এটাই যদি কমবয়সি, খুব দৌড়ঝাঁপ করেন, এমন কারও হয়, তাঁর অসুবিধে হবে। তাঁর দরকার ডুয়াল চেম্বার। কোন রোগ হলে বসাতে হয় পেসমেকার? অধিকাংশ পেসমেকার বসানো হয় হার্ট ব্লকে। আর অধিকাংশ হার্ট ব্লকের কারণ বয়স। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হার্টের নিজস্ব ব্যাটারি কমজোর হয়। কারও আগে কারও পরে। সামান্য কিছু অসুখের জন্য হার্ট ব্লক হতে পারে। তখন কিছুটা ঠেকানোর প্রশ্ন আসে।
|
যেমন? |
ইস্কিমিয়া বা হার্ট অ্যাটাক। হার্টে ইনফেকশন হলে। এ ছাড়া কিডনির অসুখে অনেক সময় রক্তে পটাসিয়াম বাড়ে। এ থেকে সাময়িক ভাবে হার্ট ব্লক হতে পারে। কিছু ওষুধ থেকেও হয় এ রকম। ওষুধ বন্ধ করলে আবার ঠিক হয়ে যায়।
|
কী করে বুঝব যে হার্টব্লক হচ্ছে? |
বয়সের কারণে যে হার্টব্লক হয় তা তো অনেকটা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে হয়, ফলে কষ্টগুলির সঙ্গে শরীর কিছুটা মানিয়ে নেয়। কাজেই উপসর্গ অতটা তীব্র হয় না। শ্বাসকষ্ট থাকে। চলাফেরা করলে বাড়ে। ক্লান্তি, দুর্বলতা থাকে। মাথা ঝিমঝিম করে মাঝেমাঝে। রোগ বেড়ে গেলে কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখ অন্ধকার করে অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। হঠাৎ হার্টব্লক হলে আচমকা মাথা ঘুরতে শুরু করতে পারে। দু’ এক সেকেন্ডের জন্য অজ্ঞান হতে পারেন।
|
মারা যাওয়ার আশঙ্কা নেই তো? |
প্রথম অ্যাটাকেই তা খুব একটা নেই। চিকিৎসা মানেই কি পেসমেকার? ওষুধপত্র দিয়ে চালানো যায় না? রক্তে পটাসিয়াম বাড়ার জন্য যদি হার্টব্লক হয়, ওষুধপত্রের ভূমিকা আছে। কোনও ওষুধ থেকে হলে ওষুধ বন্ধ করলে সমস্যা মিটে যায়। বাকি ক্ষেত্রে পেসমেকার বসানো ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই।
|
পেসমেকার বসালে কত দিন চলবে? |
মোটামুটি ৮-১৫ বছর।
|
তার পর? |
নতুন ব্যাটারি বসাতে হবে।
|
মানে, আবার অপারেশন? |
অপারেশন কোথায়? বুকে একটু খানি চামড়া কেটে বাক্সটা বার করতে হবে। আধঘন্টা থেকে ৪৫ মিনিটের মামলা।
|
আচমকা ফুরিয়ে গেলে কী হবে?
মাথা ঘোরা বা অবস্থা জটিল হয়।
আচ্ছা, হার্টফেলিওর হলেও নাকি পেসমেকার লাগানো যায়? |
হ্যাঁ, রোগীর শ্বাসকষ্ট, হাঁপ ধরা খুব বেড়ে গেলে লাগাতে হয় অনেক সময়। |
যোগাযোগ: ৯৭৪৮৮১৬৪০৭ |
|