|
মুখোমুখি ১... |
|
সুনিধি জানে না আমার শহর কলকাতা... শ্রোতারা তো জানে |
বললেন শ্রেয়া ঘোষাল। পুজোয় নতুন বাংলা অ্যালবাম। প্রেম।
পাগলামো। শুনলেন সংযুক্তা বসু |
পত্রিকা: আগে শ্রেয়া ঘোষাল মানে ছিল লিরিকাল গান। এখaন আপনি ফুট ট্যাপিং গানও গাইছেন.....
|
শ্রেয়া: হ্যাঁ আমি খুব খুশি, সুখী যে এত গান গাইছি, এত ব্যস্ততায় আছি। নতুন নতুন কমপোজারদের সঙ্গে কাজ করে দারুণ লাগছে।
|
পত্রিকা: লোকে বলে সুনিধি চহ্বাণের গলায় যে গান মানায়, সেগুলো আপনি আজকাল অনায়াসে গাইছেন। এতে সুনিধির বাজার পড়ছে। |
শ্রেয়া: আমি নানা ধরনের গান গাইতে চাই। তাই গাওয়ার চেষ্টা করছি। তাতে সুনিধির বাজার পড়ছে বলে আমার মনে হয় না।
|
পত্রিকা: কিন্তু বলিউডে আপনার এই একচেটিয়া দৌরাত্ম্যে তো নতুন শিল্পীরা উঠতেই পারছেন না। আর কেউ গান গাইবেন না? |
শ্রেয়া: একদম ভুল কথা। প্রচুর নতুন মেয়ে গান গাইছে। তারাও চেষ্টা করছে ভাল গাইতে।
|
পত্রিকা: আপনি যদি ইন্ডাস্ট্রির নতুন লতাজি হন, সুনিধি চহ্বাণ নতুন আশাজি... লোকে তো তাই বলে। আপনি কী ভাবেন? |
শ্রেয়া: বড্ড বাড়াবাড়ি। চরম ঔদ্ধত্য। আমার মনে হয় সুনিধিও তাই বলবে। আমাদের গানে হয়তো ওঁদের প্রভাব আছে। ব্যস এইটুকুই বলা যায়।
|
পত্রিকা: আপনি সুনিধি চহ্বাণের গান শোনেন? |
শ্রেয়া: শুনি না মানে? ওর অনেক গানই তো হিট করে। সবই শুনতে পাই।
|
পত্রিকা: আপনার কাছে সুনিধির গাওয়া তিনটে প্রিয় গান কী কী? |
শ্রেয়া: ‘বিড়ি জ্বালাই লে’ (ওমকারা) ‘আ জারা করিব’ (মার্ডার টু) ‘শাট আপ অ্যান্ড বাউন্স’ (দোস্তানা)। কিন্তু আমরা এ সব কথা এত বলছি কেন? আমাদের তো পুজোর অ্যালবাম নিয়ে কথা বলার কথা। জানেন আমার কতটা আনন্দ হচ্ছে? |
|
পত্রিকা: কেন? |
শ্রেয়া: সাত বছর বাদে পুজোয় বাংলা গানের অ্যালবাম বেরোচ্ছে। সেই ছোটবেলা থেকে মা-বাবাকে দেখেছি পুজোর গান শোনার জন্য মুখিয়ে থাকতে। সেই সব গান এখনও আমাদের বাড়িতে বাজে। একটা গান এখনও শুনি। ‘মহুয়ায় জমেছে আজ মউ গো’। আর ডির সুর।
|
পত্রিকা: বাংলা ছবির গান এত গাইছেন কিন্তু একটা বাংলা আধুনিক গানের অ্যালবাম বের করতে সাত বছর লেগে গেল! |
শ্রেয়া: কী করব? তার আগে আমি স্ট্রাগল করছিলাম। বলিউডে যে কোনও গানের অফার থাকলে গাইতাম। জায়গাটা তৈরি করার জন্য। এখন থিতু হয়েছি। নিজের গান নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছি। এত ব্যস্ততার মধ্যেও কিছু ফুরসত আছে। তাই এই বছরই করে ফেললাম।
|
পত্রিকা: দেবজ্যোতি মিশ্র, অনুপম রায়, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত তো বটেই, এই রকম আরও অনেক সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করেছেন। কিন্তু পুজোর অ্যালবাম বের করার সময় আপনি বাছলেন সুরকার হিসেবে জয় সরকার, গীতিকার শ্রীজাতকে। কেন? |
শ্রেয়া: ‘মুখর পরাগ’ বলে একটা অ্যালবাম বেরিয়েছিল। আমার যখন তেরো বছর বয়স। জয়দা কাজ করেছিল সেটায়। তার পর ওর সঙ্গে ‘যদি একদিন’ ছবির কাজ করার সময় বুঝলাম মিউজিক অ্যালবাম বের করলে জয়দার সঙ্গেই কাজ করব। ওর সঙ্গে আমার গানের ভাবনা মেলে। অনেক কাজ করেছি জয়দার সঙ্গে। জয়দাকেই জিজ্ঞেস করেছিলাম গান লিখবে কে? ও শ্রীজাতদার নাম বলল। শ্রীজাতদার লেখা গান আমি আগেও গেয়েছি। ‘চল রাস্তায় সাজি ট্রামলাইন’। শ্রীজাতদা শুধু কবি নয়, গীতিকারও। গান গাইতে জানে। সুরের মেলোডি বুঝে কথাকে খেলাতে জানে। সেই জন্যই আমি, জয়দা আর শ্রীজাতদা মিলে কাজটা শুরু করে দিলাম। আমরা এখন একটা ব্যান্ডের মতো।
|
পত্রিকা: অ্যালবামের নাম কী? |
শ্রেয়া: ‘মন কেমনের স্টেশন’... সব রকম অনুভূতির গান আছে। বন্ধুত্ব, প্রেম, অভিমান, শহর কলকাতা। আমার প্রিয় গানটা অবশ্য শীতকাল আর মন কেমন নিয়ে।
|
পত্রিকা: আপনার বুঝি শীতকালে খুব মন কেমন করে? |
শ্রেয়া: মন কেমন তো হয়ই। মন খারাপও আমার যখন তখন হয়। কারও ব্যবহার ভাল না লাগলে, কেউ আমাকে তেমন পাত্তা না দিলে। আমি চাই আমাকে সবাই ভালবাসুক। আসলে আমি খুব এক্সট্রিম। যখন দুঃখ হল তখন ভীষণ মন খারাপ, অভিমান হল, যখন আনন্দ হল তখন আনন্দে মেতে গেলাম।
|
পত্রিকা: বিশেষ কারও জন্য মন খারাপ হয়। |
শ্রেয়া: আমি বুঝতে পারছি আপনি কোনও বিশেষ বন্ধুর কথা জিজ্ঞেস করছেন, তাই তো? না আমার কোনও বিশেষ বন্ধু নেই। এমনিতে অনেক বন্ধু আছে। বাবা-মা ভাই আছে। সকলের প্রতি কখনও না কখনও অভিমান হয়। আবার খানিক বাদে সেটা কেটেও যায়।
|
পত্রিকা: অর্থাৎ আপনার কোনও বয়ফ্রেন্ড নেই। লোকে বিশ্বাস করবে এটা? |
শ্রেয়া: না করুক। যদি থাকে তা হলেও বলব না।
|
পত্রিকা: পুজোর অ্যালবাম বের করার জন্য তিন দিন নাকি কলকাতায় এসে কাটিয়ে গেছেন শুনলাম। এমনিতে তো বাংলা গানের রিহার্সাল, রেকর্ডিং, ডাবিং সবই মুম্বইতে বসেই করেন। এবার কেন কলকাতা ছুটে এলেন? |
শ্রেয়া: আসলে ফোনে বা মেলে জয়দা আর শ্রীজাতদা আমাকে গানগুলো শোনাত আর আমার মন আনচান করত কলকাতায় এসে এই প্রজেক্টের কাজে ওদের সঙ্গে থাকার জন্য। পুজোর অ্যালবাম বলে কথা। কত দিনের স্বপ্ন। সেই জন্যই কলকাতায় এসে হইহুল্লোড় করে আমরা গান বেঁধেছি। কী পাগলামো না করেছি আমরা। |
|
পত্রিকা: শ্রীজাত বলেছেন, আপনার মতো পাগল মেয়ে উনি আর একটা দেখেননি... |
শ্রেয়া: তাই বুঝি? জয়দা, শ্রীজাতদাও পাগল। আড্ডা, হই-হই, ফাজলামো, উল্টোপাল্টা কথা। আসলে এক ধরনের ক্রেজিনেস না থাকলে শিল্প হয় না। জাস্ট হয় না।
|
পত্রিকা: কিছু দিন আগে সুনিধি চহ্বাণ কলকাতায় এসেছিলেন অনুষ্ঠান করতে। জমজমাট অনুষ্ঠান। মনে হচ্ছিল বলিউডের কোনও শো হচ্ছে। এত গ্ল্যামারাস সে আসর। আপনি জানেন? বা শুনেছেন? |
শ্রেয়া: (হাসি) কলকাতায় শো করতে কত শিল্পীই তো যায়, এর মধ্যে নতুন কী আর আছে।
|
পত্রিকা: সুনিধি বলেছেন, কলকাতা যে শ্রেয়ার শহর সেটা উনি জানেন না। অবাক লাগে না? |
শ্রেয়া: সেটা ওর যা মনে হয়েছে তাই বলেছে। হয়তো ও না জানতে পারে। শ্রোতারা জানলেই হল কলকাতা শ্রেয়ার শহর। এবং তাঁরা জানেনও।
|
পত্রিকা: খুব পলিটিকালি কারেক্ট থাকতে চান আপনি সব উত্তরে। |
শ্রেয়া: না মোটেই না। মনের কথাই বলছি।
|
পত্রিকা: গান ছাড়া অবসর সময়ে কী করেন? |
শ্রেয়া: বিকেলে কাজ সেরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার চেষ্টা করি। তারপর গান শুনতে শুনতে এক ঘণ্টা স্নান। বেরিয়ে অ্যারোমা ক্যান্ডেল জ্বালাই। সুগন্ধে আর গানের রেশে ঘর ভরে যায়। মাঝে মাঝে বন্ধুদের বাড়িতে আড্ডায় যাই।
|
পত্রিকা: সেখানে বাকি বন্ধুদের ভিড়ে বিশেষ কোনও বন্ধু থাকে না? |
শ্রেয়া: আবার সেই প্রশ্ন। আপনি বড্ড চালাক। থাকে সে। মাঝে মাঝে সে আসে (সরবে হাসি)। |
|