মনোরঞ্জন ২...
দুই ‘বোন’
ত হপ্তায় তিন জন প্রথম শ্রেণীর সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে আড্ডা হচ্ছিল। বান্দ্রার এক ক্যাফেতে। দেখলাম তাঁরা একটা বিষয়ে একমত। দু’জন গায়িকার রেকর্ডিং থাকলে, মোটামুটি একবেলা কাজ করলেই হয়ে যায়। তাঁরা এতই তুখড়, যে নোটেশান মিলিয়ে গান তুলে, রিহার্সাল করে, ফাইনাল টেক নিয়ে সকালের মধ্যেই কাজ শেষ। তার পর বাড়ি গিয়ে নিশ্চিন্তে দুপুরের ঘুমটা দেওয়া যায়। ঠিক যেমনটা হত পঞ্চাশের দশকে। দুই মরাঠি বোন যখন গাইতেন।
আর এখন? কারা এই দুই গায়িকা?
কারা আবার? শ্রেয়া ঘোষাল আর সুনিধি চহ্বাণ।
আপনাদের হয়ত মনে থাকবে দুই মরাঠি বোনকে চালেঞ্জ জানাতে বিভিন্ন সময়ে অনেকেই উঠে এসেছিলেন। গীতা দত্ত, সামশাদ বেগম, সুমন কল্যাণপুর, বাণী জয়রাম, রুনা লায়লার। কিন্তু কেন জানি না, এত জন থাকা সত্ত্বেও লতা মঙ্গেশকর এবং পরবর্তী কালে বোন আশা ভোঁশলে কী করে যেন সবাইকে ছাপিয়ে বলিউডে বহু দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন। ওঁরাই পেরেছিলেন পঞ্চাশের দশক থেকে আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত গানের বাজারকে একচেটিয়া ভাবে দখল করে রাখতে।
আজকেও গানের দুনিয়াতে রাজত্ব করছেন এমনই ‘দুই বোন’। তাঁদের রক্তের সম্পর্ক নেই। কিন্তু লতা-আশা যেমন মহিলা প্লে-ব্যাক জগৎটা মোনোপোলাইজ করে ফেলেছিলেন, এই দুই ‘এস’-ও তাই করছেন।
এক দিকে শিশুশিল্পী হিসেবে আদেশ শ্রীবাস্তবের হাত ধরে ধূমকেতুর মতো ওঠা সুনিধি চহ্বাণ আর অন্য দিকে ইসমাইল দরবারের আবিষ্কার শ্রেয়া ঘোষাল। যেখানে সুনিধি বলিউডকে উপহার দিলেন ‘রুকি রুকি’র (মস্ত) মতো গান যার ছন্দে দুলেছিল আপামর জনসাধারণ সেখানে শ্রেয়ার ‘বৈরি পিয়া’ (দেবদাস) ছুঁয়ে গিয়েছিল আসমুদ্রহিমাচল শ্রোতাদের হৃদয়। মঙ্গেশকর বোনেদের মতোই এই দুই গায়িকাও তাদের সঙ্গীত জীবন শুরু করেছিলেন ছোটখাটো সুরকারদের সঙ্গে। তাঁদের হাত ধরেই শ্রেয়া-সুনিধির প্রতিভার সঠিক বিচ্ছুরণ ঘটেছিল।
মঙ্গেশকর বোনেদের সঙ্গে শ্রেয়া সুনিধির জীবনের তুলনা চলে না। তবু কিছু তুলনা কোনও না কোনও ভাবে এসেই পড়ে। ঠিক যে ভাবে মঙ্গেশকর বোনেরা তাঁদের সমসাময়িক শিল্পীদের পেছনে ফেলে প্রতিভার দৌড়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন, শ্রেয়া আর সুনিধির ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে।
শ্রেয়া আর সুনিধি যখন গানের জগতে এলেন, তখন রাজত্ব করছেন অলকা যাজ্ঞিক, কবিতা কৃষ্ণমূর্তি। ঠিক এমনটাই ঘটেছিল লতাজি আশাজির বেলায়। লতার কাছে গানের রোল মডেল ছিলেন নূরজাহান। আশার গানে প্রভাব পড়েছিল গীতা দত্তের। কিন্তু কোনও শিল্পী যখন আরেক সমসাময়িক শিল্পীকে ছাপিয়ে এগিয়ে যান তার কারণ হয়ে ওঠে তাঁর বা তাঁদের গায়কীর মৌলিক শৈলী।

সুনিধি
বয়স ২৯ বছর।
জীবনসঙ্গী ১৮ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে। সেই বিয়ে ভেঙে যায়। তারপর এ বছর এপ্রিলে ছোটবেলার বন্ধু হীতেশ সোনিককে বিয়ে করেন।
ইমপ্যাক্ট আইটেম সং বা ফুট-ট্যাপিং গান হলেই প্রযোজক-সঙ্গীত পরিচালকরা প্রথমেই তাঁর কথা ভাবেন। আজকাল স্ট্র্যাটেজি পাল্টেছেন। শ্রেয়ার একাধিপত্য যেখানে, সেই মেলোডিয়াস সুরের দুনিয়াতেও পা রাখছেন। ‘আ জরা’র মতো গান দিয়ে লাইভ শো-তেও এই বৈচিত্র তুলে ধরছেন। সঙ্গীত-পরিচালক, সাউন্ড রেকর্ডিস্টরা বলেন সুনিধি অসম্ভব ভালো মিমিক, যে কারণে ভীষণ তাড়াতাড়ি যে কোনও গান তুলে নিতে পারেন
লাইভ গাইতে কত নেন ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা।

মিল-অমিল

তবে যে কোনও মুহূর্তেই ভেঙে যেতে পারে শ্রেয়া বা সুনিধির এই একাধিপত্য। হয়তো আজই ঘটল সেটা। কিন্তু বাস্তব তথ্য বলছে গত ১৩ বছরে অজস্র গায়িকা এলেও সুনিধি-শ্রেয়াকে ছাপিয়ে যাওয়া তো দূরস্থান, সমকক্ষও হয়ে উঠতে পারেননি।
সঙ্গীত পরিচালক শান্তনু মৈত্র অনেক কাজ করেছেন শ্রেয়ার সঙ্গে। কিন্তু তাঁর কাছেও শ্রেয়া-সুনিধি একই গোত্রের শিল্পী। “শ্রেয়া আর সুনিধির মধ্যে কোনও তুলনায় আমি যাব না। দু’জনেই উঁচুদরের শিল্পী। সব চাইতে বড় কথা হল এই দুই মেয়ে গত ১৩ বছর ধরে একচেটিয়া ভাবে চালিয়ে তো দিল। আশাজি-লতাজির পর অসামান্য গায়িকাদের দরকার ছিল। সেই ফাঁকা জায়গাটা ওরা দুজনে পূরণ করেছে দাপটের সঙ্গে। তুলনায় কিন্তু রফি-কিশোর-মান্না দের পর তেমন এককচেটিয়া ভাবে গান গেয়ে চলা গায়ক বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে আসেনি। প্রচুর ছেলে গান গাইছে। কিন্তু শ্রেয়া বা সুনিধির মতো অনিবার্য হতে পারছে না। আজকাল যদি দশটা গান হিট করে, তার মধ্যে ন’টাই শ্রেয়া বা সুনিধির গাওয়া,” বলছেন শান্তনু।
হিন্দি প্লেব্যাক দুনিয়ায় অবশ্য সাফল্যের দুটো শর্ত আছে। প্রথমত কণ্ঠস্বর আর সুর লাগানোর নতুনত্ব। দ্বিতীয়ত বৈচিত্রময়তা। প্রথমটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার। যার আছে তার আছে, যার নেই তার নেই। দ্বিতীয় ব্যাপারটা অনেকটাই নির্ভর করে একাগ্র পরিশ্রম আর সুযোগের ওপর।
শ্রেয়া আর সুনিধি দুজনেই বেড়ে উঠেছেন কল্যাণজি-আনন্দজির সান্নিধ্যে। সেই কল্যাণজি আনন্দজি, যাঁরা ষাটের দশক থেকে বলিউডি শিল্পীদের প্রায় এক তৃতীয়াংশের উত্থান ঘটিয়েছেন।
দিল্লির এক আসরে টেলিভিশন সঞ্চালক তবস্সুমের নজরে পড়েন সুনিধি। বয়স বছর দশেক তখন। সুনিধির বাবা-মাকে রাজি করিয়ে মুম্বইয়ে আনার ব্যবস্থা করেন তিনি। বলিউডের বড় বড় গুণিজনদের সঙ্গে আলাপও করিয়ে দেন। শুরু হয় সিনেমার গানে সুনিধির প্রশিক্ষণ। মাস কয়েকের রেওয়াজের পরেই কল্যাণজি আনন্দজির ট্রুপ ‘লিটল ওয়ান্ডারস’-এর উজ্জ্বল তারা হয়ে ওঠেন সুনিধি।
সে সময়ে সুনিধির কাছে সবাই শুনতে চাইতেন ‘লমহে’র সুপারহিট গান ‘মোরনি বাগা মা বোলে’। এবং সুনিধির স্পেশালিটি ছিল, গানটা ইলা অরুণ আর লতা মঙ্গেশকর, দু’জনের গলাতেই গাওয়া। এর পরেই দূরদর্শনে ‘মেরি আওয়াজ সুনো’ জেতেন তিনি। কল্যাণজি আনন্দজির শেষ সাউন্ডট্র্যাকেও গেয়েছিলেন সুনিধি। ছবির নাম ছিল ‘মাসুম গাওয়া’। গায়িকা হিসেবে সুপরিচিত হওয়ার পর সুনিধি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নেওয়া শুরু করেন।
সুনিধি দিল্লির এক অখ্যাত থিয়েটার কর্মীর সন্তান। অন্য দিকে শ্রেয়া এসেছিলেন একেবারেই ভিন্ন পরিবেশ থেকে। কাকতালীয় ভাবে শ্রেয়া আর সুনিধি দু’জনেই গানের তালিম শুরু করেন চার বছর বয়সে। ধ্রুপদী সঙ্গীতে পারদর্শী মায়ের কাছেই শ্রেয়ার গান শেখা শুরু। শ্রেয়ার বাবা নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার। রাজস্থানের কোটায় চাকরি করতেন।

শ্রেয়া
বয়স ২৮ বছর।
জীবনসঙ্গী অবিবাহিত। অবশ্যই বয়ফ্রেন্ড আছেন। সে সম্বন্ধে কোনও আলোচনায় যেতে চান না। দুর্গাপুরের মেয়ে। বড় হওয়া রাজস্থানে।
ইমপ্যাক্ট বলিউড ছাড়িয়ে বাংলা এবং দক্ষিণী ছবির বাজারেও দারুণ রমরমা। প্রেমের গান, মেলোডিয়াস গান হলেই সারা দেশের প্রযোজক-সঙ্গীত পরিচালকদের প্রথম পছন্দ। হালে ‘উলাল্লা’র মতো গানও গাইছেন। ফলও পাচ্ছেন। আগে আইটেম সং হলে সুনিধির কথা ভাবা হত। আজ সেখানেও শ্রেয়া দাগ কাটছেন। শাহরুখ-সলমন-হৃত্বিকদের উল্টো দিকে নায়িকার কোনও গান হলেই প্রযোজক এবং নায়ক, দুজনেরই প্রথম পছন্দ তিনি।
লাইভ গাইতে কত নেন ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা।

বাবার উৎসাহেই শ্রেয়া সপ্তাহে তিন দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাতায়াত করতেন গুরুজি মহেশচন্দ্র শর্মার কাছে গান শিখতে।
মুম্বইতে ‘সারেগামাপা’ অনুষ্ঠানে জিতে এবং কল্যাণজির সান্নিধ্যে বদলে যায় শ্রেয়ার জীবন। কল্যাণজিই উৎসাহেই শ্রেয়ার বাবা বদলি নিয়ে চলে আসেন মুম্বই। কিন্তু কল্যাণজি দেখে যেতে পারেননি শ্রেয়ার সেই সাফল্য। ‘দেবদাস’ করার আগে দুটি মরাঠি গানের অ্যালবাম প্রকাশ হয় শ্রেয়ার। ঘটনাক্রমে সুনিধির জীবনে ‘লাকি ব্রেক’ ছিলেন সোনু নিগম। রাম গোপাল বর্মার ‘মস্ত’ ছবির সঙ্গীত পরিচালক সন্দীপ চৌতার সঙ্গে সুনিধির আলাপ করিয়ে দেন তিনিই।
সে ছবির বিখ্যাত ‘রুকি রুকি থি জিন্দেগি’ গানটি দিয়েই বলিউডের নক্ষত্রলোকে সুনিধি ঢুকে পড়েন। অন্য দিকে দ্বিতীয় দফায় ‘সা রে গা মা পা’তে শ্রেয়ার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে সঞ্জয় লীলা বনশালী তাঁর খোঁজখবর শুরু করেন। পুরনো হিন্দি গানের কয়েকটা মহড়া দিয়ে শ্রেয়া ‘দেবদাস’ এ সুযোগ পেলেন। শ্রেয়ার পাঁচটা জাতীয় পুরস্কারের মধ্যে প্রথমটা এসেছিল ওই ‘বৈরি পিয়া’র সুবাদেই। অন্যগুলো ‘ধীরে জ্বলনা’ (পহেলি), ‘ইয়ে ইশ্ক হায়’ (জব উই মেট), ‘জীব রঙ্গালা’ (মরাঠি ছবি জগোয়া) এবং ‘ফেরারী মন’ (অন্তহীন) গানগুলির জন্য।
অন্য দিকে সুনিধি এনরিকে এগলেশিয়াসের অ্যালবাম ‘ইউফোরিয়া’র ট্র্যাক ‘হার্ট বিট’ আর একটা পাকিস্তানি ট্র্যাকের সঙ্গে গান গেয়েছেন।
শ্রেয়া কিন্তু এখনও বিদেশের কোনও শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেননি।
দু’জনেরই একটা বড় গুণ লাইভ শো-তে দুর্দান্ত গাইতে পারা। বিশেষ করে এই সময়ে যেখানে একটা ট্র্যাক নানা রকম ইলেকট্রনিক কারিগরির মাধ্যমে বানানো হয়। আগেকার দিনের কিংবদন্তি শিল্পীদের মতোই এঁরা দু’জন নিখুঁত সুরে মঞ্চে গান গাইতে পারেন।
কিছু দিন হল শ্রেয়া আর সুনিধি নন-ফিল্মি গানের দিকেও ঝুঁকেছেন। সুনিধি শাড়ি পরে সাবেকি ভাবে বসে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে মাত করেছেন বাঙালিকে। আর শ্রেয়া বাংলা সিনেমাতেও গাইছেন আবার গজলও গাইছেন। শান্তনু বলছেন, “এখন নানা ধরনের গান দুজনেই গাইছে। শ্রোতাদের হয়তো মনে হতে পারে আমি শ্রেয়াকে বেশি পছন্দ করি। আমার কমপোজিশনে শ্রেয়ার গলা বেশি ব্যবহার করেছি। কারণ আমি যে ধরনের গান কম্পোজ করি তাতে শ্রেয়ার গলা ভাল যায়। সুনিধির গলাও ব্যবহার করেছি বেশ কয়েকবার। সম্প্রতি ‘কৃষ্ণ অ্যান্ড কংস’ বলে একটা ছবিতে সুনিধিকে দিয়ে গাইয়েছি। সে গান শুনলে মনে হবে সুনিধি রকস্টার।”

মঙ্গেশকর বোনেদের মতোই এঁরাও সঙ্গীত জীবন শুরু করেছিলেন ছোটখাটো সুরকারদের সঙ্গে। তাঁদের হাত ধরেই শ্রেয়া-সুনিধির প্রতিভার সঠিক বিচ্ছুরণ ঘটেছিল
ওঁদের মতে
রূপম ইসলাম
আমার মনে হয় সুনিধি চহ্বাণ-এর থেকেও শ্রেয়া বেশি ভার্সেটাইল। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আমি শ্রেয়া ঘোষালের সঙ্গে ‘বেডরুম’ ছবিতে কাজ করেছি। অসম্ভব প্রফেশনাল। ওকে গলার টোনালিটির জন্য বেছেছিলাম। অনেক রকম গান ও এমনভাবে হ্যান্ডেল করে যে মনে হয় না সুনিধি সেটা করতে পারবে বলে।
সোমলতা আচার্য চৌধুরী
শ্রেয়া ঘোষালেরও আগে থেকে আমি সুনিধির গান শুনছি। তার পর যখন শ্রেয়া এলেন একটা নতুন দিগন্ত খুলে গেল। আমি শ্রেয়ার গলার আওয়াজকে আর সুনিধির রেঞ্জকে হিংসা করি। ওঁদের মধ্যে কোনও তুলনা করতে চাই না।
অনুপম রায়
আমি হিন্দি গান খুব একটা শুনি না। কারণ কোনওটাই শোনার যোগ্য বলে মনে হয় না। তবে দু’জনেই ভাল গান। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে শ্রেয়ার সঙ্গে আমি কাজ করেছি। তুখড় গায়িকা। ওঁর গলায় একটা ব্যাপার আছে। দু’জনের মধ্যে প্রফেশনাল রাইভালরি থাকতেই পারে। কিন্তু গায়িকা হিসেবে কাউকেই আমি অন্যের থেকে বেশি নম্বর দেব না।

শ্রেয়া কিন্তু ক্রমাগত সুনিধিকে টক্কর দিচ্ছেন

শ্রেয়া-সুনিধি দু ’জনেরই গায়কীর মোক্ষম অস্ত্র হল বৈচিত্রময়তা। শ্রোতাদের মন জয় করার আর দুটো কারণ দুজনেই অল্পবয়সী এবং ইন্ডাস্ট্রিতে তুলনামূলকভাবে নতুন।
বৈচিত্রময়তা নিয়ে কথা উঠলে শ্রেয়া ঘোষাল বলেন, “আমার সৌভাগ্য যে আমার দ্বিতীয় বড় ছবি এম এম ক্রিমের ‘জিস্ম’ এ সুযোগ পাওয়া। ‘যাদু হ্যায়, নেশা হ্যায়’ আর ‘চলো তুমকো লেকর চলে’ এই দুটো সম্মোহিনী গান ‘দেবদাস’এর তথাকথিত রোম্যান্টিক গানের চেয়ে একেবারেই আলাদা। ওঁর জন্যেই আমি বিশেষ কোনও ধরনের গানের স্টাইলে ব্র্যান্ডেড হয়ে যাইনি। তার পর আরও ভ্যারাইটি এল অনুজির (মালিক) সুরে ‘সায়া’ আর ‘ম্যায় হুঁ না’তে। (এটাই প্রথম ছবি যেখানে শ্রেয়া আর সুনিধি একসঙ্গে গাইলেন ‘গোরি গোরি’)।
সুনিধিও মনে করেন ওঁর উত্থানের পেছনে অনু মালিকের বিরাট অবদান। “প্রথমে অনুজি আমাকে দিয়ে দুটো আইটেম নাম্বার গাইয়ে ছিলেন। ‘রুকি রুকি থি জিন্দেগি’ (মস্ত) আর ‘তু সির্ফ মেরা মেহেবুব’ (অজনবী)। পরে উনি প্রযোজক ভেনাসের সঙ্গে রীতিমতো ঝগড়া করেন আমাকে দিয়ে ‘অজনবী’র টাইটেল ট্র্যাক গাওয়ানোর জন্য। এর পরই আমি একেবারে টিপিক্যাল কোমল নায়িকাদের লিপে গান গাওয়ার সুযোগগুলো পেতে শুরু করি।”
আজ শ্রেয়া যেমন তেড়েফুড়ে ‘উলাল্লা’ বা ‘চিকনি চামেলি’ গাইছেন তেমনই কোমল ‘খাট্টি মিঠি’ও গাইছেন। সুনিধিও কম যান না। তিনিও সফট্ নাম্বার ‘উড়ি’ (গুজারিশ) যেমন গাইছেন তেমনই সাংঘাতিক সম্মোহিনী ‘আ জারা করীব সে’ও (মার্ডার ২) গাইছেন। দুজনেই একে অপরের জায়গা দখল করার অদ্ভুত খেলায় মেতেছেন। আর সেখানেই আসল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দু’জন শ্রেষ্ঠ গায়িকারই নিজের-নিজের ঘরানা বদলানো সব সময়ই শ্রোতাদের কাছে দারুণ খবর।
তবে ‘দাবাং’এর পর গত দু’-বছরে শ্রেয়া কিন্তু সুনিধিকে দারুণ টক্কর দিচ্ছেন ক্রমাগত। ‘দাবাং’ ছবিতে ‘তেরে মস্ত মস্ত দো নয়ন’ আর ‘চোরি কিয়া রে জিয়া’ এই দুটি গান গাইবার পর থেকেই শ্রেয়ার গায়কী সুনিধির গলায় মানায় এমন গানগুলির স্টাইল ধরে ফেলেছে।
সুনিধির গাওয়ার মতো অজস্র গান এখন শ্রেয়া গাইছেন। শ্রেয়া তো ট্যুইট করেছেন ‘ডেঞ্জারাস ইশ্ক’ ছবির গান তাঁর একান্ত প্রিয় । শ্রেয়া এই প্রতিবেদককেও জানিয়েছেন ‘তেরি মেরি দোস্তি কা’ তাঁর কাছে রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং একটা গান ছিল। কারণ শ্রেয়া এত নিচু গলায় (শাস্ত্রীয় পরিভাষায় খাদে) গান আগে আর কখনও গাননি। শ্রেয়ার কেরিয়ারে উজ্জ্বল মাত্রা যোগ করেছে ‘তেরি মেরি মেরি তেরি’ , ‘সাইবু’ , ‘জাদু হ্যায় নেশা হ্যায়’, ‘তেরি ওর’ এর মতো সুখশ্রাব্য গান।
শ্রেয়ার এই রংবদল দেখে সুনিধিও পিছিয়ে নেই। তিনি যেমন ফিল্মি গান গাইছেন, তেমনই দাপটের সঙ্গে গাইছেন পাশ্চাত্য সংগীতও এবং আরও নানা রকম গান। নতুন ধাঁচে পুরনো গান গাওয়ার ক্ষমতাও দেখাচ্ছেন দুর্দান্ত। যেমন ‘ওয়ানস আপন এ টাইম ইন মুম্বই’ ছবিতে ‘পর্দা হ্যায় পর্দা’, থেকে ‘শিখ লে’ , ‘ভাগে রে মন’ (চামেলি) ‘বিড়ি জ্বালাইলে’ (ওমকারা), ‘আইনওয়াই আইনওয়াই’ (ব্যান্ড বাজা বারাত) ‘শীলা কি জওয়ানি’ (তিস মার খান) এই রকম নানা ধরনের গান গেয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন উৎকর্ষ থেকে উৎকর্ষতর হওয়ার যাত্রা।
দু’জনে একসঙ্গে অনেক গানই গেয়েছেন। তবে তার বেশিরভাগ গানেই অন্যান্য গায়ক-গায়িকারাও ছিলেন। একমাত্র ব্যতিক্রম ‘ইমান কা অসর’ (ডোর)।
মাঝে মাঝে একসঙ্গে গাইলেও আসলে শ্রেয়া আর সুনিধি একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। করছেন নিজেদের সঙ্গেই। এবং তার ফলে বলিউডি গানে একটা আলাদা মাত্রা তৈরি হচ্ছে। সেটা যেন শ্রেষ্ঠত্বের আইএসআই মার্কা। এতটাই উচ্চমানের যে অন্তত এই মুহূর্ত পর্যন্ত তার কাছাকাছিও অন্য কেউ আসতে পারছেন না।
সাধে কি তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সেই বিখ্যাত দুই বোনের কথা মনে পড়াচ্ছে শ্রোতাদের?

লেখক হিন্দি গানের বিশেষজ্ঞ এবং কলামনিস্ট


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.