দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
বেহাল পরিকাঠামো
পরিষেবা সম্প্রসারণ
চিকিৎসা-পরিষেবাকে উন্নত করতে নতুন ইউনিট খোলার কথা জানালেন হাসপাতালের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু চিকিৎসক, কর্মী ও রোগীদের একাংশের বক্তব্য, চিকিৎসক এবং কর্মীসংখ্যা না-বাড়িয়ে ইউনিট বাড়ালে কোনও লাভ হবে না।
সম্প্রতি বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে যোগ দিয়ে নতুন ইউনিট খোলার কথা জানান শিল্পমন্ত্রী। কিন্তু অভিযোগ, বর্তমানে রোগীর তুলনায় কর্মী এবং চিকিৎসকের সংখ্যা এতটাই কম যে, রীতিমতো ধুঁকতে ধুঁকতে চলছে এই হাসপাতাল। তার উপর ইউনিট বাড়লে অবস্থাটা আরও খারাপ হবে বলে অভিযোগ।
ডায়মন্ড হারবার, বেহালা, ঠাকুরপুকুর, আমতলা থেকে শুরু করে মহেশতলার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে রোজ বহু মানুষ আসেন এই হাসপাতালে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রধান সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হিসাবেও এটিকে গণ্য করা হয়। কিন্তু সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে রোগীদের যে মানের চিকিৎসা ও পরিষেবা দেওয়ার কথা, চিকিৎসক এবং কর্মীর অভাবে তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল-সূত্রে জানা গেল, হাসপাতালে এখন শয্যাসংখ্যা মোট ২৮৬। কিন্তু চিকিৎসকের সংখ্যা তার তুলনায় নগণ্য। আরএমও পদ নেই, হাউসস্টাফ নেই, অ্যাকাউন্টস বিভাগেও লোক নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। এমনকী, হাসপাতালের পরিষেবা দেওয়ার জন্য সুপারকে নিজে অ্যাকাউন্টস বিভাগের ও সহযোগী সুপারকে ক্লার্কের কাজ করতে হয় বলে তাঁদের অভিযোগ।
হাসপাতাল-সূত্র জানাচ্ছে, এখন স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞের সংখ্যা চার, সাধারণ ফিজিশিয়ন দুই, চোখের ডাক্তার এক, ইএনটি এক, অর্থোপেডিক এক। তা-ও অর্থোপেডিক ডাক্তারকে অবসর নেওয়ার পরে পুনর্বহাল করা হয়েছে। সার্জারিতে দু’জন ডাক্তার সপ্তাহের ছ’দিন অপারেশন করে চলেছেন। চক্ষু বিশেষজ্ঞ সপ্তাহে তিন দিন বহির্বিভাগে রোগী দেখেন, দু’দিন ছানি এবং এক দিন সাধারণ ছোটখাটো অপারেশন করেন। জানা গেল, রোগীর অ্যানাস্থেসিয়াও তাঁকেই করতে হয়। শুধু তাই নয়, চশমার পাওয়ার ঠিক আছে কি না, সেটাও তাঁকে দেখে দিতে হয়। কারণ অপটোমেট্রিস্ট নেই। আগে এক জন সহকারী চিকিৎসক থাকলেও, আট মাস আগে তাঁকে স্বাস্থ্য দফতর তুলে নিয়েছে বলে হাসপাতাল থেকে জানা গিয়েছে। এ ছাড়াও হাসপাতালে তিন জন অ্যানাস্থেটিস্টের এক জন নেই। ক্লার্ক থাকার কথা ১২ জন, আছেন চার জন।
পরিকাঠামোর এই বেহাল অবস্থায় সম্প্রতি শিল্পমন্ত্রী সদ্যোজাত শিশুদের জন্য এসএনএসইউ ইউনিট, ডায়ালিসিস ইউনিট, সিটি স্ক্যানের ইনভেস্টিগেশন সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাঙ্ক খোলার কথা বলেছেন। এর মধ্যে সিটি স্ক্যান ইনভেস্টিগেশন সেন্টারটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও হাসপাতালের ভবন তিন তলা থেকে বাড়িয়ে চার তলা করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
হাসপাতালের সুপার পরমার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যেহেতু ইনডোর ও আউটডোর দুটো বিভাগেই যথেষ্ট ভিড় হয়, তাই চিকিৎসার মান বাড়াতে গেলে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। অন্যান্য কর্মীর সংখ্যাও বাড়ানোর প্রয়োজন।”
যদিও স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “বিদ্যাসাগর হাসপাতালে এই মুহূর্তে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা কম। তবে আমরা রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ করব। ওই হাসপাতালেও প্রয়োজনমতো চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে।”
পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিদ্যাসাগর হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নয়নের বিষয়ে সব রকম ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। ওখানে কর্মীর অভাব নেই। চিকিৎসক কিছু কম আছে। সুপারকে বলা হয়েছে, কাজ করার জন্য আরও সক্রিয় হতে হবে। চিকিৎসকের ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। পুরসভা, পূর্ত দফতরের সঙ্গেও কথা বলেছি যাতে রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংলগ্ন রাস্তার হাল ফেরানো যায়।” তিনি জানান, নতুন ডায়ালিসিস ইউনিট চালু হবে। চালকের অভাবে একটি ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স অকেজো হয়ে পড়ে ছিল। এখন দু’টি শিফ্টে চালক নিয়োগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে হাসপাতালের হাল ফেরানোর ব্যাপারে পুরোদস্তুর চেষ্টা শুরু হয়েছে।

ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.