উত্তর কলকাতা
জলপ্রকল্পে গতি
অপেক্ষা শেষের পথে
দীর্ঘ ছ’বছর পরে থমকে থাকা ধাপা জলপ্রকল্পের কাজে হাত দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। বাগবাজারে ‘মায়ের ঘাট’ থেকে গঙ্গার অপরিশোধিত জল তুলে ধাপায় ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পরিশোধন করে সরবরাহের লক্ষ্যে এই প্রকল্প গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ২০০৬ সালে। কাজ শুরু হলেও জেটি নির্মাণ, পাইপ বসানো-সহ পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যায় এই প্রকল্পের কাজ আটকে যায়। এত দিনে সেই সমস্যার জট কাটার ফলে এ বার দ্রুত গতিতে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও জেটির জায়গা পাওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। পুর-কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়েছে। প্রকল্পটির রূপায়ণে খুব দ্রুত কাজ হবে। পুরো কাজ শেষ হতে আরও বছর দেড়েক লাগবে।” প্রকল্পের জন্য ধার্য করা হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
২০০৬ সালে পুরসভা পরিকল্পনা নেয়, বাগবাজারের ‘মায়ের ঘাট’ থেকে অপরিশোধিত জল তুলে পাইপের মাধ্যমে তা ধাপায় ট্রিটমেন্ট প্লান্টে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পরিশোধন করে পূর্ব কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হবে পানীয় জল। জল তোলার জন্য জেটির প্রয়োজন ছিল। কিছু আইনি জটিলতা থাকায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে। সেই সময়ে পুর-কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, ২০১১ সালে এই প্রকল্প গড়া হবে। তার পরেই জল তোলার জন্য জেটি নির্মাণে কিছু সমস্যা তৈরি হওয়ায় মায়ের ঘাট থেকে ধাপা প্রকল্প পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ন’কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন পাতার কাজ বছরখানেক আটকে থাকে। এখন এই কাজ পুরোদমে চলছে। ‘মায়ের ঘাট’ থেকে এই লাইন মাটির তলা দিয়ে ক্যানাল ওয়েস্ট রোড, ধাপা এবং বাইপাস হয়ে সরাসরি যুক্ত হবে ধাপা জলপ্রকল্পের সঙ্গে। তবে, রাস্তার দু’ধারে ঝুপড়ি থাকায় এই কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে বলেও পুর আধিকারিকেরা জানিয়েছেন। পুরসভার দাবি, এই কাজ আপাতত প্রায় ৭০ শতাংশ এগিয়েছে।
পাইপলাইন পাতার ক্ষেত্রে সমস্যা কী হয়েছিল?
পুরসভার জল দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বন্দর কতৃর্পক্ষের কাছ থেকে জমি নিয়ে ‘মায়ের ঘাট’-এ জেটি গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই জায়গাটি-সহ ঘাট সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অংশে চক্ররেলের জন্য ‘ডবল লাইন’ পাতার সিদ্ধান্ত নেয় রেল। সে ক্ষেত্রে ওই জায়গায় আর জেটি নির্মাণ সম্ভব ছিল না। বিষয়টি জানিয়ে বন্দরের কাছে বিকল্প জায়গা চায় পুরসভা। অন্য দিকে, বন্দর কর্তৃপক্ষ পুরসভাকে যে বিকল্প জায়গা নেওয়ার প্রস্তাব দেন, সেখানে তাঁদেরই একটি পুরনো বাড়ি রয়েছে। জেটি গড়তে হলে বাড়িটি ভাঙতে হত। বন্দর কর্তৃপক্ষকে তা জানানো হলে সম্মতি মেলে। কিন্তু বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রেও কিছু আইনি জটিলতা তৈরি হয় । নির্মাণ নিয়ে এই ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ায় প্রকল্পটি আর বাস্তবায়িত করা যায়নি।
এর পরে বিষয়টি রেল দফতর এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে কলকাতা পুরসভা। সিদ্ধান্ত হয়, রেল কর্তৃপক্ষ জেটি নির্মাণের জায়গা ছেড়ে লাইন পাতবেন। ফলে, পুরসভা পুরনো জায়গাতেই জেটি নির্মাণ করতে পারবে। পুরসভার জল দফতরের ডিজি বিভাস মাইতি বলেন, “রেল পূর্ব নির্ধারিত জায়গাতেই জেটি নির্মাণের অনুমতি দেওয়ায় পাম্পিং স্টেশন ও জেটি নির্মাণের কাজ চলছে। জল নিয়ে যাওয়ার জন্য পাইপ বসানোর কাজও চলছে। এখন এখানে কোনও জটিলতা নেই। জেটির নকশা আমরা রেল কর্তৃপক্ষের কাছেও পাঠিয়েছি।”
কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, পুরসভা জেটির জন্য অন্য জায়গা চাইলে সমস্যা তৈরি হয়। এখন পুরসভা আবার পুরনো জায়গাতেই জেটি নির্মাণ করবে বলে জানিয়েছে। আগের জায়গাতেই জেটি ও পাম্পিং স্টেশন গড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলের এক আধিকারিক। এই প্রকল্প শেষ হলে গড়ফা, তপসিয়া, তিলজলা, কসবা, ঢাকুরিয়া, প্রিন্স আনোয়ার শাহ কানেক্টর-সহ পূর্ব এবং দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশের বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। বর্তমানে উত্তর কলকাতার টালা-পলতা প্রকল্প এবং দক্ষিণে গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্প থেকে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, পলতা প্রকল্প থেকে শহরে জল সরবরাহ হয় দৈনিক প্রায় ১৮ কোটি গ্যালন। অন্য দিকে, গার্ডেনরিচ প্রকল্প থেকে দৈনিক দক্ষিণ কলকাতায় জল সরবরাহের পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি গ্যালন। কিন্তু পুরসভার বাইপাস সংলগ্ন এলাকা জলকষ্ট রয়েই গেছে। ধাপায় প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পূর্ব কলকাতায় দৈনিক ৩ কোটি গ্যালন জল সরবরাহ হবে।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.