পূর্ব কলকাতা
‘শিকেয়’ সচেতনতা
আশায় বাঁচে মশা
চেতনতাই মূল ওষুধ।
এমনটাই মনে করেন চিকিৎসক থেকে বিভিন্ন ওয়াকিবহাল মহল। তা হলেই মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে দাবি সকলেরই। কিন্তু অভিযোগ, প্রতি বছরই মশাবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা যায়। তা যখন অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন নড়েচড়ে বসে সকলে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে হয়ে ওঠে ফের সেই সচেতনতাই।
এ বারেও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। বিধাননগর ও কলকাতার বেশ কয়েকটি এলাকায় মশাবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে ক্রমশ। বিশেষত ডেঙ্গি। দেরিতে হলেও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে বিধাননগর বা কলকাতা পুরসভা, সকলেই এই রোগের প্রকোপের কথা স্বীকার করেছে। রোগ প্রতিরোধে ফের মশার তেল স্প্রে, ফগিং, জঙ্গল সাফ, জমা জল সরানোর জন্য বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। যদিও বিধাননগরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশাবাহিত রোগ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে সচেতনতার প্রচারের দেখা মেলে না বছরভর। সমস্যা হলে তবেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অবশ্য এমন অভিযোগও ওঠে ফি বছরই। প্রশাসন যদিও তা মানতে নারাজ। বিধাননগর পুর-কর্তৃপক্ষের যেমন দাবি, বছরভর মশার তেল স্প্রে-সহ সাফাইয়ের কাজ নিয়মিতই হয়। এ বার মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ায় এই কাজে আরও জোর দেওয়া হচ্ছে।
মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে চিকিৎসকদের পরামর্শ, জমা জল দ্রুত সরাতে হবে। বাগানের টব বা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহারে যাতে জল না জমে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবার একাংশের দাবি, নর্দমা পরিষ্কার, নিয়মিত জঙ্গল সাফ করাও জরুরি। পাশাপাশি প্রশাসনের একাংশের মতে, বসতি বেড়ে চলেছে। নির্মাণের সংখ্যাও বাড়ছে। জল জমছে নির্মাণস্থলে।
বিধাননগরও তার ব্যতিক্রম নয়। পাঁচ নম্বর সেক্টর, সুকান্তনগর, মহিষবাথান, নয়াপট্টি, মূল সল্টলেকে মেট্রো প্রকল্প-সহ একাধিক নির্মাণকাজ চলছে। সেখানেও এর নজির মিলেছে। ফাঁকা প্লটগুলিতে গজিয়ে উঠেছে জঙ্গল। ঝুপড়ি এলাকায় আবার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। পরিস্রুত পানীয় জলের অভাবে সেখানকার বাসিন্দারা জল ধরে রাখেন। তা-ই হয়ে ওঠে মশার আঁতুড়। ছবিটা এক সংযুক্ত এলাকাতেও। সিটি সেন্টার থেকে করুণাময়ী গেলে মেট্রো প্রকল্প এলাকা, ঝুপড়িতে গেলে অস্বাস্থ্যকর, অপরিচ্ছন্নতার ছবিটা সুস্পষ্ট।
অন্যান্য বছর সংস্কারের অভাবে বিধাননগরের দু’দিকে কেষ্টপুর খাল ও ইস্টার্ন ড্রেনেজ খালের বদ্ধ জল মশার আঁতুড় হয়ে দেখা দেয় বলেই অভিযোগ বাসিন্দাদের। বিধাননগর পুরসভার দাবি, এ বার কেষ্টপুর খালে জলের প্রবাহ বজায় রাখার চেষ্টা করেছে তারা। পাশাপাশি, নবদিগন্ত কর্তৃপক্ষও ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলের একাংশে সংস্কারের কাজ করেছেন। যদিও চ্যানেলের বাইপাস সংযোগকারী অংশে জল বদ্ধ অবস্থায় রয়েছে বলে অভিযোগ।
বাসিন্দাদের দাবি, পুরসভা এই ধরনের কাজে নাগরিকদের যুক্ত করুক। আবাসিক সংগঠন বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘এই ধরনের রোগ প্রতিরোধ শুধু পুরসভার পক্ষে সম্ভব নয়। নাগরিকদেরও সচেতনতার প্রয়োজন। বছরভর এমন প্রচারের অবশ্য দেখা মেলে না। পুরসভা নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে এ কাজ করলে তা অনেক বেশি ফলপ্রসু হবে।’’
ইতিমধ্যে অবশ্য সচেতনতার প্রচারে উদ্যোগী হয়েছে বিধাননগর পুর ও মহকুমা প্রশাসন। পাশাপাশি চলছে সাফাইয়ের কাজ। বিধাননগরের স্কুলগুলিতেও সাফাইয়ের কাজে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান বিধাননগরের মহকুমাশাসক মলয় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘একটি স্কুলে কাজ হয়েছে। অন্যান্য স্কুলগুলিতেও সাফাইয়ের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে ঢিলেঢালা মনোভাবের অভিযোগ মানতে নারাজ বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘এই অভিযোগ ঠিক নয়। সারা বছর নিয়মিত মশার তেল স্প্রে করা-সহ শহর পরিষ্কার রাখার কাজ করা হয়। এ বার রোগের প্রকোপ বাড়ায় আমরা এ দিকে আরও জোর দিচ্ছি। পাশাপাশি, নাগরিকদের সচেতনতার প্রসারে প্রচারেও বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।’’

ছবি: শৌভিক দে




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.