‘ভোজ’বাজি
মায়াবী আলোর দেশে
ঢুকতেই চমক!
লালচে আলো-ছায়ায় ডিজাইনার আলপনা। এক পলকেই দরজার বাইরের পার্ক স্ট্রিটটা যেন কয়েক আলোকবর্ষ দূরে। সব মিলিয়ে কিছুক্ষণের চোখ ধাঁধাঁনো। আচমকা মোবাইলটা বেজে উঠলে ঘোর কাটতেই পারে। তবু আলো-আঁধারে হাতড়ে বেড়ানো মন যেন তখনও অন্য কোথাও, অন্য কোনও সময়ে। বাস-ট্রাম-মেট্রোর ব্যস্ত শহরের নাগালের বাইরে এই কয়েকটা অলস মুহূর্ত একটু অন্য ভাবেই উপভোগ করার!
না, বহু যুগ পুরনো কোনও রাজপুরীর সন্ধান নয়। মায়াবী আলোয় ঝলমলে এ জায়গা শহরের বুকেই নতুন এক রেস্তোরাঁ মাত্র। নাম ‘বেদ’।
তবে পার্ক স্ট্রিট পেরিয়ে প্রবেশপথের সিঁড়ি দিয়ে উঠে আলো-আঁধারির চমকে চোখ সয়ে নেওয়ার পরেও খাবারের তালিকা পর্যন্ত ভাবনাটা ফিরিয়ে আনতে আরও খানিকটা সময় চাইবে মন। চারপাশের ঝলমলে ঠেকরি কারুকাজ অন্য সবের আগেই অতিথির নজর আটকে ফেলে যে! এমন কাচের কাজের আরও নিদর্শন দেখতে যেতে হবে সুদূর রাজস্থানের কিছু রাজবাড়ি বা প্রাসাদে। সে কারুকাজই এ রেস্তোরাঁ চেনটির স্বাক্ষর হিসেবে ব্যবহার করেছেন মালিক, ফ্যাশন ডিজাইনার রোহিত বাল। তাই যে কোনও শহরেই ‘বেদ’ মানে এমনই কাচের কারুকার্য, সন্তর্পণে ব্যবহৃত আলো-ছায়া, বাছাই করা শ্যান্ডেলিয়ার আর মাথার উপরে একটি ডোম।
বসার জায়গার সাজসজ্জাই অতিথিকে বুঝিয়ে দেয়, ঠিক কী ধরনের আহার রয়েছে অপেক্ষায়। দেওয়ালে বাহারি আয়না থেকে শুরু করে থামের সূক্ষ্ম নকশা সবটাই বুঝিয়ে দেবে, এ জায়গা মেজাজে ও রুচিতে খাঁটি ভারতীয়। কখনও নবাবি, কখনও বা অত্যন্ত রাজকীয় এই পরিবেশ বারবারই ওলট-পালট করে দিতে চাইবে অতিথির স্থান-কালজ্ঞান। এমনই এক মুহূর্তে গ্লাস-টপ টেবিলে হাজির হবে মার্গারিটা গ্লাস। হাল্কা কমলা টলমলে তরলে ভাসমান চেরি এ যেন সত্যি বইয়ে পড়া কোনও নবাবের দাওয়াত। সে ভাবনাকে আরও একটু উস্কে দিতেই আসবে গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়ানো গরমগরম বাদশাহি কাবাব, মুর্গ কালি মির্চ। এরই সঙ্গে স্টার্টারে চেখে দেখা যায় আরও নানা ধরনের মোগলাই কাবাব। যার মধ্যে চিজ আর রসুন দেওয়া লাসুনি মুর্গ, জাফরানি ভারওয়ান টেংরি কাবাব বা কারি পাতা, গরম মশলা ছড়ানো চিকেন ৬৫ অবশ্যই বোঝাবে ভারতীয় রসনার এখনও কত কী চেনা হয়নি তেমন।
কিংবা হয়তো একেবারেই না চাখা। সঙ্গে অতি পছন্দের চাপোলি, গালোতি, ল্যাম্ব চপ তো থাকছেই। ভোজ শুরু করা যায় সি ফুডেও। তন্দুরি পমফ্রেট, তন্দুরি প্রন, হিলশা অমৃতসরী, তাওয়া ভেটকি বা বেজিল পাতা, অলিভ অয়েল দিয়ে গ্রিল করা ভেটকির ‘বিলায়েতি মাচ্চি’ সাবেক আহারে আনতে পারে নতুনত্বের ছোঁয়া।
যে কোনও ভারতীয় রেস্তোরাঁয় খাওয়ার থেকে এ রেস্তোরাঁয় ভোজের অভিজ্ঞতা অন্য রকম করে তোলার উপরেও নজর দেওয়া হয়েছে। তাই অতি পরিচিত উত্তর ভারতীয় সুখাদ্যের পাশাপাশি মেনু কার্ড সেজেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নানা ধরনের রেসিপিতে। একইসঙ্গে স্থান পেয়েছে মাহি হিলশা মসল্লম, ডাব চিংড়ি, ঝিঙা কোরমা আর স্টিমড্ ভেটকি ইন গন্ধরাজ মতো নানা ধাঁচের রান্না। মেন কোর্সের পরে মিষ্টিমুখেও ধরে রাখা হয়েছে সাবেক স্বাদ আর আধুনিকতার ফিউশানের মেজাজ। চেনা কুলফি ফালুদা থেকে শুরু করে গন্ধরাজ-ছানার কেক আর মিষ্টি দইয়ের ম্যুসের মতো নতুন ধরনের রেসিপিতেও জমিয়ে তোলা যায় শেষ পাত।

ছবি: বিশ্বনাথ বণিক




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.