|
খুশিতে বাঁচুন |
|
নজর দিন গোড়ালিতে
গোড়ালিকে অবহেলা করবেন না। ঠিকমতো যত্ন না
নিলে
নানা সমস্যা হতে পারে। জানাচ্ছেন রণদীপ মৈত্র |
|
পায়ের নীচের অংশ। তাই সহজে নজরে আসে না। কিন্তু গোড়ালিকে অবহেলা করলে সমস্যা। ব্যথা শুরু হলে দীর্ঘ দিন ভোগায়। মুক্তি পেতে অস্ত্রোপচারও করতে হতে পারে। তাই সময় নষ্ট করবেন না। এ বার গোড়ালি নিয়েই
কথা বলব।
গোড়ালি নমনীয়, স্থিতিস্থাপক অস্থিসন্ধি। কাঁধ, নিতম্ব এবং হাঁটুর সঙ্গে মিলিত ভাবে গোড়ালি শরীরের ভার বহন করে। গোড়ালিকেই সব চেয়ে বেশি ভার নিতে হয়। কোনও কারণে সেই ভার আরও বেড়ে গেলেই সমস্যা। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে। চেয়ারের কথা কল্পনা করুন। চেয়ারের জোড়গুলিকে অস্থিসন্ধি ভাবতে পারেন। চেয়ার নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া করলে জোড়গুলি দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন কোনও জোড়ায় বেশি চাপ পড়লে সমস্যা। চেয়ার ভেঙেও যেতে পারে। একই ভাবে শরীরের অস্থিসন্ধিগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে কোনও অস্থিসন্ধির উপর বেশি চাপ পড়তে পারে। গোড়ালির সমস্যার মূল কারণ এই অতিরিক্ত ভার বহনই। |
|
দু’ভাবে গোড়ালির ক্ষতি হতে পারে। গোড়ালির উপরে ভার বাড়লে ‘কাফ’ মাংসপেশি শক্ত ও সঙ্কুচিত হয়ে যায়। ঠিকমতো চলাফেরা করতে হলে পায়ের পাতা ও আঙুলের ‘ডরসিফ্লেক্স’ করার প্রয়োজন। পায়ের পাতা আর আঙুলের ‘সিন বোন’-এর দিকে এগিয়ে যাওয়া বা পিছিয়ে আসাকেই ‘ডরসিফ্লেক্স’ বলে। হাঁটা বা ছোটার সময়ে পায়ের পাতা যখন মাটি ছোঁয় তখন ‘সিন বোন’ পায়ের পাতার দিকে এগিয়ে যায়। ফলে গোড়ালির উপরে চাপ কম পড়ে। কিন্তু এ সময়ে ‘কাফ’ মাংসপেশি শক্ত হয়ে থাকলে গোড়ালি ‘সিন বোন’-এর বিপরীত দিকে সরে যায়। ফলে অস্থিসন্ধিগুলির উপরে শরীরের ভার ঠিকমতো পড়ে না। বিশেষ করে গোড়ালির ভিতরে বেশি চাপ পড়ে।
অন্য ভাবেও গোড়ালির ক্ষতি হতে পারে। যেমন প্রভাব পড়ে ‘অ্যাচিলেস’ টেন্ডনেও। ‘অ্যাচিলেস’ টেন্ডন ‘কাফ’ মাংসপেশির সঙ্গে গোড়ালির সংযোগ রক্ষা করে। ‘অ্যাচিলেস’ টেন্ডনে সাধারণত আঘাত লাগে না। এর বিপরীত দিকের টেন্ডন ‘গ্যাসট্রোনেমিয়াস’ মাংসপেশির সঙ্গে ‘ফিমার বোন’-এর সংযোগ রক্ষা করে। ‘ফিমার বোন’ আবার হাঁটুর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হাঁটুতে কোনও সমস্যা হলে ‘গ্যাসট্রোনেমিয়াস’ মাংসপেশি হয়ে ‘অ্যাচিলেস’ টেন্ডনের উপরে চাপ অনেক বেড়ে যায়। ফলে চাপ বাড়ে গোড়ালিতে। এর থেকে গোড়ালির নীচের হাড় বেড়ে ‘হিল স্পার’ও হতে পারে। অনেক সময় মুক্তি পেতে অস্ত্রোপচারেরও দরকার পড়ে।
তবে ভয় পাবেন না। শরীরচর্চা করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নীচের ব্যায়ামগুলি করতে পারেন।
দ্য ডাউনওয়ার্ড ডগ: পুশ-আপ করুন। হাতের তালু এবং পায়ের পাতা শুধু মাটি ছুঁয়ে থাকবে। এ অবস্থায় গোড়ালি মাটিতে ছোঁয়ানোর চেষ্টা করুন। ‘কাফ’ মাংসপেশি শক্ত থাকলে পুরো গোড়ালি মাটিতে ছোঁয়ানো শক্ত। এ ভাবে ২০-৩০ সেকেন্ড থাকুন।
স্ট্যাটিক ব্যাক: মাটিতে পিঠ রেখে শুয়ে পড়ুন। তালু উপরের দিকে রেখে দু’পাশে হাত ছড়িয়ে রাখুন। দু’পা সমকোণে ভাঁজ করে কোনও বক্স বা চেয়ারের উপরে রাখুন। এ বার ডায়াফ্রাম থেকে পাঁচ-দশ মিনিট নিঃশ্বাস নিন। এতে গোড়ালি ও পায়ের পাতার স্বাভাবিক কাজে সুবিধা হয়।
স্ট্যাটিক ওয়াল: দেওয়ালের কাছে মাটিতে পিঠ রেখে শুয়ে পড়ুন। দু’পা জড়ো করে দেওয়ালের সঙ্গে ছুঁইয়ে সোজা উপরে তুলে দিন। পায়ের পাতা ও আঙুল বেঁকিয়ে ‘সিন’-এর দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। শরীরের উপরের অংশ রিল্যাক্স অবস্থায় রাখুন। এ ভাবে ৩-৫ মিনিট থাকুন। এতে থাই, পায়ের নীচের অংশের মাংসপেশি-সহ পায়ের অন্যান্য পেশির নমনীয়তা বাড়ে। |
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|