‘বলে বলে গোল’ নামে একটা গানের সিডি গত বার বের করেছিল ইস্টবেঙ্গল।
ট্রেভর জেমস মর্গ্যান ম্যাচের আগে ড্রেসিংরুমে ওই সিডিটা বাজাননি। মাঠে কিন্তু সেটা বেজেই উঠল। তবে অন্য আঙ্গিকে। চিডি-র পাসে, বলজিতের দুরন্ত ফর্মে। পাস-পাস-পাসের ফুলঝুরিতে। হোক না প্রতিপক্ষ দুর্বল ইস্টার্ন রেল। তাতে কী? ‘পাঁচ গোল’ শব্দটা ইপিএল রমরমার যুগে এখনও যে সাতের দশকের মতোই ময়দানে সমান আকর্ষণীয়!
টোলগে-রবিন সিংহ যুগলবন্দির সাফল্য দেখে মশাল সমর্থকরা নাম দিয়েছিলেন টলি-রলি জুটি। চিডি-বলজিতের শুক্রবারের বর্ণচ্ছটাকে দেখার পর কী নাম দেওয়া হবে? ট্র্যাজিক জুটি!
কাদের সামনে রেখে যুদ্ধে নেমেছিলেন ব্রিটিশ কোচ? চিডি--সালগাওকর যাঁকে চুক্তি থাকা সত্ত্বেও রিলিজ করে দিয়েছে এ বার! ফর্ম খারাপ বলে। বলজিৎ সাহনিগত বছর যাঁর লাল-হলুদ রিজার্ভ বেঞ্চে বসে বসেই পায়ে মরচে পড়ে গিয়েছে! কিন্তু কে জানত মরমে মরে থাকা সেই দুই বাতিল ট্র্যাজিক নায়ক যুবভারতীতে জ্বালিয়ে দেবেন মশাল। মরসুমের প্রথম ম্যাচেই।
ম্যাচের ছত্রিশ মিনিটের মধ্যেই ফল ৪-০। চিডি একটি গোল নিজে করেছেন। বাকি দুটি গোলের পিছনেও কম- বেশি তাঁরই অবদান। গোল করিয়েছেন বলজিৎকে দিয়ে। কেভিন লোবোর গোলের ক্রসটাও তো চিডিরই। বিরতির পর হ্যাটট্রিক করে এসে বলজিৎ জড়িয়ে ধরলেন চিডিকেই। |
মর্গ্যানও মনে হয় এই দৃশ্যটাই দেখতে চেয়েছিলেন। না হলে ম্যাচের পর কেন তাঁর গলা থেকে বেরিয়ে আসবে উষ্মা এবং উচ্ছ্বাসের মিশেল। “চিডিকে নেওয়ার কথা বলেছিলাম বলে অনেকেই সমালোচনা করেছিলেন। এখন নিশ্চয়ই সেটা থামবে।” বলজিতের প্রশংসাতেও পঞ্চমুখ লাল-হলুদ কোচ। “এখানে তো কাউকে সময়ই দেওয়া হয় না। একটা ম্যাচ খারাপ খেললেই হইচই শুরু হয়ে যায়।” বলে দিলেন মগ্যার্ন।
পি কে বন্দ্যোপাধ্যায় যে টিমে খেলে মহা-তারকা হয়েছেন সেই ইস্টার্ন রেলে এখন অতীতের ছায়া। শান্তনু বিট, বাপন বেরা, বাবুন করদের মতো রেল কর্মীদের নিয়ে বছরের পর বছর খেলে যাওয়াই তাদের ভবিতব্য। কখনও তারা নেমে যায় নীচের ডিভিশনে, কখনও টিঁকে যায় কোনওক্রমে। পুরো রেল টিমের বাজেট ইস্টবেঙ্গলের প্রথম একাদশের যে কোনও ফুটবলারের চেয়ে কম।
মর্গ্যানের চতুর স্ট্র্যাটেজির সামনে এ রকম একটা টিম মুখ থুবড়ে পড়বে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল কৃতিত্ব পাবে অন্য কারণে। ছয়-ছয় জন ফুটবলার নেহরু কাপের শিবিরে। সই না হওয়ায় দুই তারকা ওপারা-পেন গ্যালারিতে বসে। লেন-সুবোধরা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে। তা সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু বল ধরলেন পুরো ম্যাচে সাকুল্যে গোটা ছয়েক।
ইউরো কাপের ছোঁয়ায় মর্গ্যান তাঁর ফর্মেশন বদলান কি না সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের তৃতীয় ইনিংস শুরুর দিনে ৪-৩-১-২ ফর্মুলাই অটুট রেখে দিয়েছেন তিনি। দুই ফরোয়ার্ডের পিছনে একজন পিভট। মুক্ত থেকে বল সাপ্লাই দেওয়ার জন্য। যে জায়গাটায় খেলেন পেন ওরজি। এ দিন খেললেন কেভিন লোবো। মাঝমাঠে তিনের মধ্যে দু’জন মাঝেমধ্যে সরে গিয়ে উইং হবেন। ইসফাক বা ভাসুম সেটা এ দিন করতে পারেননি। এটা ঘটনা। কিন্তু চিডি, বলজিৎ বা লোবোর ‘দৌরাত্ম্যে’ সব কিছুই ঢাকা পড়ে গিয়েছে।
গতবার কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মর্গ্যান-ব্রিগেড। সকালের রোদ্দুর দেখে যেমন সারা দিন কেমন যাবে তা বলা সম্ভব নয়, তেমনই শেষ পর্যন্ত লিগ কে পাবে তা বলা কঠিন। বুটে যখন শান দিচ্ছেন ওকোলি ওডাফা, র্যান্টি মার্টিন্স, কার্লোস হার্নান্ডেজরা। তবে এটা কিন্তু লেখাই যায় যে, শুরুটা চ্যাম্পিয়নের মতোই করল ইস্টবেঙ্গল।
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, সৈকত (অভিষেক), অর্ণব, সফর, সৌমিক, ভাসুম (অ্যালভিটো), হরমনজিৎ, ইসফাক, লোবো, চিডি, বলজিৎ (ব্র্যাঙ্কো)। |