|
|
|
|
নারী নিগ্রহ রুখতে বিশেষ নজরদারি পুলিশের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চুঁচুড়া |
রাজ্যে নারী নির্যাতন প্রতিদিন উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে বলে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠছে। তাতে মাথাব্যথা ক্রমেই বাড়ছে পুলিশের। এই পরিস্থিতি রুখতে বিশেষ বাহিনী গড়ে রাস্তায় নামল হুগলি জেলা পুলিশ। মেয়েদের উপর অত্যাচার রুখতে জেলার এসডিপিওদের নেতৃত্বে চার মহকুমায় বিশেষ বাহিনী গড়া হল। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন।
কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় মহিলাদের উপর অত্যাচার নিয়ে ইদানীং রাজ্যজোড়া বিতর্ক হয়েছে। অভিযোগকারিণীর বক্তব্যে আমল না দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে বিভিন্ন থানার বিরুদ্ধে। এই ধরনের ঘটনা আটকাতে অথবা অভিযোগের পেয়ে দ্রুততার সঙ্গে যথাযথ তদন্ত করার ক্ষেত্রে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা যে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না, নতুন বাহিনী গড়ার মধ্যেই তা পরিস্কার। হুগলি পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলার কোথাও মহিলাদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ হলে এই বাহিনী সেই তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।
নতুন এই পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী। তিনি জানান, এ জাতীয় যে সমস্ত অভিযোগ পাওয়া যাবে, পুলিশের বিশেষ দলটি খোঁজখবর নেবে। মামলা হলেও তারা বিশেষ ভাবে তদারকি করবে। |
|
ছবি: তাপস ঘোষ। |
ইতিমধ্যেই নারী নির্যাতন ঠেকানোর ব্যবস্থা হিসেবে আগাম সতর্কতার বিষয়টিতেও অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন পুলিশকর্তারা। সেই লক্ষ্যে সোমবার থেকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পুলিশ নিজেদের উদ্যোগে সচেতনতা শিবির শুরু করেছে। সোমবার চুঁচুড়া বাণীমন্দির এবং মঙ্গলবার বিনোদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও হুগলি উইমেন্স কলেজে পুলিশ অফিসারদের একটি দল যায় ডিএসপি (শৃঙ্খলা এবং প্রশিক্ষণ) দেবশ্রী সান্যালের নেতৃত্বে। একই ভাবে শ্রীরামপুর মহকুমাতেও এ দিন কয়েকটি স্কুলে এবং কলেজে এসডিপিও রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যান পুলিশ অফিসারেরা। শ্রীরামপুর গার্লস কলেজ, রমেশচন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, উত্তরপাড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, অমরেন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে (বালিকা) পুলিশের দলটি যায়। চন্দননগরের এসডিপিও সৈকত ঘোষের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল চন্দননগর সরকারি কলেজ এবং কৃষ্ণভাবিনী নারী শিক্ষামন্দিরে যায়। একই ভাবে আরামবাগের এসডিপিও শিবপ্রসাদ পাত্র আরামবাগ গার্লস কলেজে যান। ছাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ অফিসারেরা।
স্কুলে যাতায়াতের পথে কোনও ভাবে হেনস্থা হলে বা কটুক্তির শিকার হলে তৎক্ষণাৎ কী করতে হবে, তা ছাত্রীদের বুঝিয়ে বলেন পুলিশকর্তারা। কী ভাবে বিষয়টি পুলিশের গোচরে আনতে হবে, তারও পরামর্শ দেন তাঁরা। এ জন্য প্রয়োজনীয় কোন কোন ফোন নম্বর সঙ্গে রাখতে হবে, তা-ও জানানো হয়। দরকারের সময় প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর হাতের সামনে না থাকলে ১০০ ডায়াল করে পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এই সমস্ত পরামর্শের পাশাপাশি মেয়েদের আশ্বস্ত করা হয়, এই ধরণের ঘটনা ঘটলে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। দরকার হলে অভিযোগকারিণীর নাম গোপন রাখা হবে। |
|
ছবি: প্রকাশ পাল। |
পুলিশ জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে জেলার আরও কিছু স্কুলে এই ধরনের শিবির করা হবে। সচেতনতা ছড়ানোর পাশাপাশি পুলিশ ছাত্রীদের থেকে জেনে নেবে, তাদের যাতায়াতের পথে কোথায় তারা কটূক্তির মুখে পড়ে। পুলিশের বিশেষ দল সাদা পোশাকে সেই সমস্ত এলাকায় টহল দেবে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রয়োজনে ঘটনাস্থল থেকেই ‘রোমিও’দের গ্রেফতারও করা হবে বলে জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা দাবি করেন।
কিন্তু শুধু শহরাঞ্চলে পুলিশের গতিবিধি বাড়লেই কি আমূল বদলে যাবে গোটা পরিস্থিতি? পুলিশকর্তাদের দাবি, গ্রামের স্কুলগুলিতেও পুলিশ একই ভাবে ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলবে। বাড়ানো হবে নজরদারি।
|
|
‘লোকলজ্জা’ ভুলে বাবা-মায়েদেরও সচেতন হতে হবে। |
অভিযোগকারিণীর নাম গোপন রাখা হবে। |
কটূক্তির শিকার হলেই ফোন করতে হবে পুলিশকে। সঙ্গে রাখতে হবে ওসি-আইসি, এসডিপিও-দের ফোন নম্বর। |
মেয়েদের স্কুল-কলেজের আশপাশে বিশেষ কয়েকটি জায়গায় বিশেষ নজর রাখবে পুলিশ। |
ভিড়ের সুযোগে অচেনা যুবক অশালীন আচরণ করলে বা মোবাইলে ছবি তুললেও তৎক্ষণাৎ খবর দিন পুলিশকে। |
|
|
|
|
|
|