একসঙ্গে বহু এসএমএসে নিষেধাজ্ঞা জারি কেন্দ্রের
কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির আশ্বাস সত্ত্বেও আতঙ্ক কাটছে না দক্ষিণ ভারতে বসবাসকারী উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের। অসমের হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে হামলার গুজবের ফলে গত দু’দিন ধরে বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, সেকেন্দরাবাদ থেকে পালাচ্ছেন উত্তর-পূর্ব ভারতের আতঙ্কিত ছাত্র-কর্মীরা। আজও তা অব্যাহত রয়েছে। এ দিন মহারাষ্ট্র এবং দক্ষিণ ভারতের অন্য রাজ্যগুলি থেকেও পালাতে শুরু করেছেন মানুষজন। কেন্দ্রীয় সরকারের মতে গোটা ঘটনাটিই পরিকল্পিত ভাবে দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা। গুজব ছড়ানোর পিছনে ‘বিদেশি’ শক্তির মদত রয়েছে বলেও মনে করছে দিল্লি। ঘটনার তদন্তে নেমেছেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী এসএমএস এবং এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতীয়দের উপরে হামলার গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তাই গুজব ঠেকাতে আজ দেশ জুড়ে ১৫ দিনের জন্য একসঙ্গে অনেকগুলি এসএমএস (বাল্ক) এবং এমএমএসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্র। মোবাইল সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে একসঙ্গে পাঁচটির বেশি এসএমএস কেউ পাঠাতে না পারেন। বেশ কিছু ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক-টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার উপরেও নজরদারি চালানো হচ্ছে। এ দিন সংসদে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ জানিয়েছেন, যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তারা দেশের ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। এদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অসমমুখী ট্রেনে ওঠার মরিয়া চেষ্টা। শুক্রবার বেঙ্গালুরুতে। ছবি: রয়টার্স
সরকারের এই পদক্ষেপেও সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গত দু’দিনে বেঙ্গালুরু শহর থেকে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ পালিয়ে গিয়েছেন। এসএমএসের মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এ দিন ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে কর্নাটক পুলিশ। কাল রাতে বেঙ্গালুরু থেকে গুয়াহাটির উদ্দেশে দু’টি বিশেষ ট্রেন ছাড়া হয়েছে। রেলের ডিভিশন্যাল ম্যানেজার অনিলকুমার অগ্রবাল বলেন, “ওই দু’টি বিশেষ ট্রেনের জন্য ৯ হাজার ৭১৮টি টিকিট বিক্রি করেছে রেল।
প্রশ্ন উঠেছে, আতঙ্ক কাটানোর বদলে বেঙ্গালুরু-সহ দক্ষিণ ভারতের শহরগুলিতে উত্তর-পূর্বের জন্য বিশেষ ট্রেনের বন্দোবস্ত করা হল কেন? অসমের বিজেপি সাংসদ বিজয়া চক্রবর্তী এ দিন সংসদে এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রেল মন্ত্রকের যুক্তি, স্টেশনে হাজার হাজার মানুষ এসে জড়ো হওয়ায় বিশেষ ট্রেন চালানো ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, কর্নাটক বা অন্ধ্রের মতো রাজ্যগুলি প্রথম দিকে যথেষ্ট সতর্ক হলে গুজব কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেত। যদিও রাজ্যগুলির দিকে আঙুল না তুলে এখন নিজের পিঠ বাঁচানোর কৌশল নেওয়াকেই শ্রেয় বলে মনে করছে কেন্দ্র। গুজব বন্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্নাটক, অন্ধ্র ও মহারাষ্ট্র পুলিশকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। সংখ্যালঘু সংগঠনগুলিকে আশ্বস্ত করতে তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার জন্যও রাজ্য সরকারগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছে।
কিন্তু কারা গুজব ছড়াচ্ছে, তা নিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে গোয়েন্দারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দেও স্বীকার করে নিয়েছেন, ইন্টারনেট বা এসএমএস-এর মাধ্যমে কারা গুজব ছড়াচ্ছে, তার হদিস পাওয়া কঠিন। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বেঙ্গালুরু বা পুণের মতো শহরে এসএমএস-এর মাধ্যমেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দাদের উপর হামলার আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছিল। পাশাপাশি এমএমএস-এর মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ‘ভুয়ো’ ভিডিও দেখানো হচ্ছিল। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা একটি ওয়েবসাইট চিহ্নিত করেছেন। ওই ওয়েবসাইটের ব্লগ থেকে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের মিথ্যে তথ্য ও জাল ছবি ছড়ানো হচ্ছিল। ওই ব্লগের লেখকের সন্ধানে নেমেছেন গোয়েন্দারা।
উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দাদের পালানোর হিড়িক লেগেছে দক্ষিণ ভারতের অন্য শহরগুলিতেও। আজও কর্নাটকের মহীশূর, ম্যাঙ্গালোর শহরের রেলের টিকিট কাউন্টারে উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষদের লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে। তামিলনাড়ুর চেন্নাই থেকে পালিয়েছেন হাজারের বেশি মানুষ। আতঙ্কিত মানুষজন পালাচ্ছেন পুণে থেকেও। বেঙ্গালুরুতে বসবাসকারী ত্রিপুরার পড়ুয়াদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন তাঁদের অভিভাবকরা। তাঁদের অনেকেই আজ দেখা করেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গে। বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দারা যাতে চলে না যান, তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে কর্নাটক সরকার। সরকার জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের কোথাও কোনও হিংসাত্মক ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তাই উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দাদের গুজবে কান না দিয়ে থেকে যাওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। কর্নাটকের সংবাদপত্রগুলিতে মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ শেত্তার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর অশোকের সই করা বিজ্ঞাপনও প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞাপনে উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষদের জানানো হয়েছে তাঁরা এই রাজ্যে একদম সুরক্ষিত। রাজ্যে তাঁদের স্বাগত জানানো হচ্ছে। বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন জায়গায় ছয় কোম্পানি র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ) মোতায়েন করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্নাটক সরকার।
অন্ধ্রের উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দাদের অযথা আতঙ্কিত হতে নিষেধ করেছে রাজ্য পুলিশ। ডিজিপি ভি দীনেশ রেড্ডি বলেন, “হায়দরাবাদ সাম্প্রদায়িক সম্প্রদায়ের জন্য বিখ্যাত। অসমের মানুষ এখানে পুরোপুরি সুরক্ষিত। এখনও পর্যন্ত হায়দরাবাদে অসমীয়দের উপর কোনও আক্রমণ হয়নি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.