মরলে নিজের ভিটেয় মরব, দল বেঁধে ফিরছেন ভয়ার্ত মানুষ
ভিন্ন বর্ণের মেয়ে বিয়ে করেছিলেন মাজুলির যুবক লক্ষ্যজিৎ ওঝা। পরিবার তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র করে। বাবার ভয়ে বউ নিয়ে সোজা হায়দরাবাদ পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। গত দু’বছর বাড়ির সঙ্গে এক বারও কথা হয়নি। কিন্তু গুজবের ‘সৌজন্যে’ তিন দিন আগে লক্ষ্যজিতের মোবাইলে ভেসে এল বাবার আর্তি, “বিয়ে মেনে নিচ্ছি। এক্ষুণি বাক্স গুছিয়ে বাড়ি ফিরে আয়।” আতঙ্কে থাকা ছেলেও দেরি করেননি ট্রেন ধরতে। নবি মুম্বইয়ে ওষুধ নির্মাণ সংস্থায় কাজ করতেন বাবুল বসুমাতারি। পাঁচ বছরের আস্তানায় এত দিন কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু আজাদ ময়দানে সংঘর্ষের পরেই সংখ্যালঘু বাড়িওয়ালা জানিয়ে দিলেন, “সময় থাকতে পালাও। পরে দায়িত্ব নেব না।”
বন্যায় জমি-বাড়ি হারানোর পরে লখিমপুর ছেড়ে বেঙ্গালুরু পাড়ি দিয়েছিলেন মুকুল ও রূপালি শইকিয়া। মুকুল নিরাপত্তারক্ষীর কাজ পান। রূপালি শপিং মলে সেলসগার্ল ছিলেন। অগস্টের প্রথম সপ্তাহে মলের খদ্দেররাই রূপালিদেবীকে বললেন, তিনি আক্রান্ত হতে পারেন। ভাই ফোনে জানালেন, নানা রাজ্যে অসমিয়ারা আক্রান্ত হচ্ছে। পাড়ায় রটে গেল, ‘কারা যেন’ বলে গিয়েছে, ২০ অগস্টের মধ্যে এলাকা খালি করতে হবে। আর দেরি করেননি মুকুল-রূপালি। সোজা হাজির স্টেশনে। সেখানে তখন তিলধারণের জায়গা নেই। রাতে যশবন্তপুর এক্সপ্রেস এলে কামরার দরজা দিয়ে ঢোকার অবস্থা ছিল না। খুলে ফেলতে হয় জরুরিকালীন জানলা। সেখান দিয়ে ঢোকার সময় হুড়োহুড়িতে বেশ কয়েক জন জখম হন। তারপর কামরার মেঝেয় বসে কেটে গিয়েছে ৬০ ঘণ্টা। যেটুকু খাবার সঙ্গে ছিল, সেটাই সম্বল।
ওরাও কি উৎকণ্ঠায়? গন্তব্য গুয়াহাটি। বেঙ্গালুরু থেকে
আসা ট্রেন হাওড়া ছুঁল শুক্রবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
কাল থেকে আজকের মধ্যে মুম্বই এবং গোটা দক্ষিণ ভারত থেকে প্রায় আট হাজার মানুষ এ ভাবেই অসমে ফিরেছেন। সাধারণত বেঙ্গালুরু থেকে গুয়াহাটি আসার জন্য দিনে গড়পড়তা ৩০০ টিকিট কাটা হয়। গত ৪৮ ঘণ্টায় সংখ্যাটা ছ’হাজার ছাড়িয়েছে। হায়দরাবাদ, মুম্বইয়ের অবস্থাও তথৈবচ। হায়দরাবাদ থেকে ফেরা দিপু শইকিয়া, গজেন নেওগ, পিংকু শর্মারা জানাচ্ছেন, সিদ্দিক নগরে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা ২০ তারিখের আগে তাদের রাজ্য ছাড়ার হুমকি দিয়ে যায়। এক অসমিয়া নিরাপত্তারক্ষীকে মারধরও করা হয়। এর পর তাঁরা আর ওখানে থাকার ভরসা পাননি। হায়দরাবাদ, মুম্বই, চেন্নাই সর্বত্রই এক আতঙ্ক। কেউ বেকারি, কেউ কাচ কারখানা, কেউ বা নির্মাণসংস্থায় কাজ করতেন। গুজবের জেরে রোজগারের মায়া ত্যাগ করে ফিরে এসেছেন সবাই। মুম্বইয়ে চিনা রেস্তোঁরার কর্মী দীনেশ বড়ো বলেন, “শুনছিলাম ঈদের পরেই বড়ো ও অসমিয়াদের উপরে হামলা হবে। আমি নিজে এসএমএস পাইনি। কিন্তু ভাবলাম, মরতে হলে জন্মভূমিতে মরাই ভাল।”
গত কাল পুণেয় ফের মণিপুরের রোজিনা চিরম নামে এক ছাত্রীর উপরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুণের ডি ওয়াই ডেন্টাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রোজিনার দাবি, সকাল ৯টা নাগাদ ডাক্তারি যন্ত্রপাতি কিনে ফেরার সময় বাইক আরোহী তিন ব্যক্তি তাঁর পিছু নেয়। তাদের মধ্যে এক জন তলোয়ার বের করে রোজিনাকে কোপ মারার চেষ্টা করে। কোনও মতে আঘাত এড়ান তিনি। একটি বাড়ির দরজা খোলা পেয়ে সেখানেই আশ্রয় নেন। পরে কলেজের শিক্ষকরা তাঁকে উদ্ধার করেন। রোজিনার পরিবার জানিয়েছে, পুণের কমিশনার কলেজে গিয়ে রোজিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ উত্তর-পূর্বের ছাত্রছাত্রীদের ১৫ দিনের ছুটি দিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই বাড়ি ফিরছেন।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও মণিপুরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গাইখংবাম অবশ্য সকলকে অভয়ই দিচ্ছেন। বলছেন, বিক্ষিপ্ত ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে সকলের ফিরে আসার প্রয়োজন নেই। কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কেরলের সরকারও উত্তর-পূর্বের মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। অসম থেকে মন্ত্রী চন্দন ব্রহ্ম ও নীলমণিসেন ডেকা কর্নাটক এবং রকিবুল হুসেন ও প্রদ্যোৎ বরদলৈ হায়দরাবাদ যাচ্ছেন। কিন্তু সরকারি আশ্বাসকে হারিয়ে দিচ্ছে আতঙ্ক। আগামীকাল সকালে বেঙ্গালুরু থেকে দুটি বিশেষ ট্রেনে, আরও অন্তত চার হাজার মানুষ উত্তর-পূর্বে ফিরবেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.