নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন প্রাক্তন বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পরিবার। এতটাই যে, শারীরিক ভাবেও আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা তাঁদের।
দু’রাতে তিন বার হুমকি-ফোন এসেছে। কেউ আবাসনের সামনে তাঁর নামের ফলক থেকে ‘জাস্টিস’ (বিচারপতি) শব্দটিও ঘষে তুলে দিয়েছে। এই অবস্থায় প্রাক্তন বিচারপতির আবেদনের ভিত্তিতে পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁর জন্য নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত মঙ্গলবার বিচার ব্যবস্থা নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেছিলেন বিধানসভায়। তার পরে এবিপি আনন্দে বসে ওই ব্যাপারে মতামত দেন প্রাক্তন বিচারপতি সমরেশবাবু। তার পর থেকেই গত দু’দিন ধরে তাঁকে টেলিফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে সমরেশবাবুর অভিযোগ।
|
শুধু হুমকি নয়, শুক্রবার প্রাক্তন বিচারপতি জানতে পারেন, বাড়ির নীচে তাঁর নামের ফলক থেকে ‘জাস্টিস’ শব্দটি ঘষে তুলে দেওয়া হয়েছে। ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সমরেশবাবু এবং তাঁর স্ত্রী সুনন্দাদেবী। মানসিক ভাবেও তাঁরা বিধ্বস্ত। সমরেশবাবুর অভিযোগ, এ-সবই ঘটানো হচ্ছে পরিকল্পিত ভাবে। তিনি বলেন, “কয়েক দিনের মধ্যেই পরপর এই সব ঘটনা ঘটেছে। নামের ফলকে লেখা মোছার বিষয়টি শুক্রবার নজরে আনেন আমার নিরাপত্তারক্ষী। আমার ধারণা, কেউ আমাদের উপরে নজর রাখছে। আমি পুলিশকে জানিয়েছি। এ বার শারীরিক ভাবে আক্রমণ করা হতে পারে বলে আমার আশঙ্কা।”
পুলিশি সূত্রের খবর, হুমকি-ফোনের অভিযোগ দায়ের করার পরে সমরেশবাবুর নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সল্টলেকের পূর্বাচলের যে-ক্লাস্টারে সমরেশবাবুর বাড়ি, তার প্রধান ফটকের সামনেই বসানো হয়েছে পুলিশি পাহারা। দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে পুলিশের গাড়ি। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলেও পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হচ্ছে। অনুমতি মেলার পরে তাঁর ঘরের দরজা পর্যন্ত সাক্ষাৎপ্রার্থীদের পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশই। |
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার, পরপর দু’রাতে তিন বার টেলিফোন করে হুমকি দেওয়া হয় সমরেশবাবুকে। বুধবার দু’টি ফোনই প্রাক্তন বিচারপতি নিজে ধরেছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে ফের হুমকি-ফোন আসে। যে-মোবাইল নম্বর থেকে তাঁর বাড়ির ল্যান্ডলাইনে মহিলা কণ্ঠের ফোন এসেছিল, তার নম্বর বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশকে দিয়েছেন সমরেশবাবুর স্ত্রী সুনন্দাদেবী। ওই ফোনটি তিনিই ধরেছিলেন। সুনন্দাদেবী এ দিন বলেন, “সমস্যা হচ্ছে টেলিফোন নিয়ে। অনেক দরকারি ফোনও আসে। কিন্তু ফোন ধরতেই অস্বস্তি হচ্ছে।” আপাতত টেলিফোনের রিসিভার নামিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সমরেশবাবু পুলিশকে হুমকি-ফোনের কথা জানিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় এ-পর্যন্ত কাউকেই ধরতে পারেনি পুলিশ। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, “দু’টি আলাদা মামলা চালু হয়েছে। কল লিস্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত ঘটনার কিনারা হবে।” রাতে পুলিশ জানায়, দু’রাতেই ফোন এসেছিল টাকি এলাকার একটি মোবাইল থেকে। মোবাইলের সিম কার্ড এক মহিলার নামে।
নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হলেও নিজের বক্তব্যে সমরেশবাবু অবিচল। এ দিন তিনি বলেন, “সংবিধানকে কেউ অপমান করলে আমি সহ্য করতে পারব না। মুখ্যমন্ত্রীর জায়গায় অন্য যে-কেউ হলেও আমি বিরোধিতা করতাম। মুখ্যমন্ত্রী এত মানুষের দ্বারা নির্বাচিত। তিনিই যদি এই ধরনের কথা বলেন, তবে তো সাধারণ মানুষ বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাবে। দেশে নৈরাজ্য নেমে আসবে।” |