কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন পদে মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের প্রস্তাবে সায় দিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার মহাকরণে এ কথা জানিয়ে বলেছেন, ধাপে ধাপে রাজ্য পুলিশের সব শাখায়, বিশেষত জঙ্গলমহলে এই সংরক্ষণ নীতি রূপায়ণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
একই সঙ্গে কলকাতা পুলিশ ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কর্মীদের সব অ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদন প্রত্যাহার করে নেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর মন্ত্রিসভার বৈঠকে পুলিশকর্মীদের অ্যাসোসিয়েশনগুলির অনুমোদন প্রত্যাহার করার যে-প্রস্তাব পেশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, এখন থেকে পুলিশকর্মীরা শুধু সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য সমবেত হতে পারবেন। তবে কোনও অ্যাসোসিয়েশনের নামে সঙ্ঘবদ্ধ হওয়া যাবে না।
মহাকরণ সূত্রের খবর, মহিলা পুলিশের ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাস্তবায়িত করতে পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলকাতা পুলিশে মহিলাদের সব পদ পূরণ করতে আরও ২২০৭ জন মহিলাকে বাহিনীর বিভিন্ন পদে নিয়োগ করতে হবে। প্রাথমিক ভাবে অর্থ দফতর ৪৮৪ পদে মহিলা কর্মী নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৪০০ জনকেই নিয়োগ করা হবে লেডি কনস্টেবল পদে। ২৪ জন এসআই, ৫০ জন এএসআই, ছ’জন ইনস্পেক্টর, তিন জন এসিপি এবং এক জন ডিসিপি নেওয়া হবে।
কিন্তু পুলিশ সমিতি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে কেন?
সরকারি সূত্রের খবর, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে পুলিশকর্মীদের অভাব-অভিযোগ মেটানোর জন্য ইতিমধ্যেই কল্যাণ পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই পর্ষদই পুলিশকর্মীদের আবাসন, অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা, চিকিৎসার সুযোগ, তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ও পেশাগত ব্যাপারে পরামর্শ এবং চাকরির পরিবেশ সংক্রান্ত সব অভাব-অভিযোগের দেখভাল করবে। তাই কলকাতা বা রাজ্য পুলিশে অ্যাসোসিয়েশনগুলির আর প্রয়োজন নেই। গত বছরের শেষ দিকে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেই প্রস্তাব অনুমোদিতও হয়। কিন্তু সেই সময় পুলিশ সমিতিগুলির অনুমোদন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়নি। তাই বৈঠকে উল্লেখ পর্বে সমিতিগুলির অনুমোদন প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র দফতরের বক্তব্য, পুলিশবাহিনীর অধিকার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে ১৯৬৬ সালে তৈরি আইনের ৩(ক) ও ৩(খ) ধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার বা তার অনুমোদিত কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট সম্মতি ছাড়া পুলিশকর্মীদের ইউনিয়ন বা অ্যাসোসিয়েশন গড়া যাবে না। তবে রাজ্য সরকার পুলিশবাহিনীর অভাব-অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য মাঝেমধ্যে আপনা-আপনি (অনুমোদনবিহীন) গড়ে ওঠা কিছু সমিতিকে কাজ করতে দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কল্যাণ পর্ষদ গঠনের পরে সেগুলির অস্তিত্ব থাকবে না।
মন্ত্রিসভার এ দিনের বৈঠকে হাওড়া কমিশনারেট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে বালি ও জগাছা থানাকে ভেঙে ছ’টি থানা গড়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বালি, জগাছা ছাড়া বাকি চারটি থানা হবে বেলুড়, নিশ্চিন্দা, দাসনগর ও সাঁতরাগাছি। |