চার দিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ঝকঝকে তকতকে মেঝে। এক লক্ষ ২০ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল। এ দিন পরীক্ষামূলক ভাবে চারটি উড়ান নামল সেখানে। নতুন টার্মিনালে পা দিয়ে বলিউড তারকা বোমান ইরানি বললেন, “প্রথম দেখায় প্রেম বলে একটা কথা আছে না! এক ঝটকায় মন কেড়ে নিল এই সৌন্দর্য।”
কলকাতার শুক্রবার সকালে জেট এয়ারওয়েজের মুম্বই-কলকাতা উড়ানের যাত্রীরা বলিউডের এই তারকাকে নিয়ে নতুন টার্মিনালে ঢোকেন মালপত্র নিতে। বোমান বলেন, “এক মাস আগে এবিপি-র একটি অনুষ্ঠানে কলকাতায় এসেছিলাম। ধারণাই ছিল না, এত সুন্দর একটা টার্মিনাল রয়েছে এখানে।”
বোমানের সঙ্গে ওই উড়ানেই কলকাতায় নামলেন রাধিকা চোখানি। বললেন, এই প্রথম কলকাতার কোনও কিছুর জন্য গর্ব অনুভব করছেন। “এই তো ক’দিন আগেই পুরনো টার্মিনাল (এখন যেটা যাত্রীরা ব্যবহার করছেন) দিয়ে যাওয়ার সময়ে দেখেছিলাম ভয়ঙ্কর নোংরা।” নতুন টার্মিনালে কলকাতার এত দিনের এই ‘বদনাম’টাই ঘোচাতে চাইছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিশাল এলাকাটি গত দু’দিন ধরে বাইরের এক সংস্থাকে দিয়ে পরিষ্কার করানো হয়েছে। তবে নিয়মিত উড়ান চালু করার পরিস্থিতি এখনও আসেনি। জেট এবং ইন্ডিগোর কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে কর্তৃপক্ষ চেয়েছিলেন, তাড়াতাড়ি নতুন টার্মিনাল থেকে নিয়মিত উড়ান চালু হোক। কিন্তু দুই বিমানসংস্থাই জানিয়েছে, ন্যূনতম পরিকাঠামো ছাড়া নতুন টার্মিনাল থেকে উড়ান চালু করা সম্ভব নয়। সুতরাং এখনও পরীক্ষামূলক ‘অ্যারাইভাল’-এই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। |
নতুন টার্মিনালে উড়ানের পরীক্ষামূলক ‘অ্যারাইভাল’ এর আগেও হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক উড়ানের ‘অ্যারাইভাল’ বা টার্মিনাল থেকে ‘ডিপারচারে’র পরীক্ষা এখনও হয়নি। এ দিন সকালে জেটের মুম্বই উড়ানের ৭৫ জন যাত্রী, এয়ার ইন্ডিয়ার পোর্টব্লেয়ার উড়ানের ১৪৪ জন যাত্রী, স্পাইসজেট ও ইন্ডিগোর বেঙ্গালুরু উড়ানের যথাক্রমে ৭৭ জন ও ১৭১ জন যাত্রী নতুন টার্মিনাল দিয়ে শহরে বেরোলেন। এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানে ছিলেন ১৫ জন স্বাধীনতা সংগ্রামীর বিধবা স্ত্রী। ৯১ বছরের অনিমা চক্রবর্তী এক গাল হেসে বলেন, “খুব সুন্দর।” বেঙ্গালুরুর জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর সত্যব্রত গুহ বলেন, “দেখে তো বেশ ভালই লাগছে। কিন্তু পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কাজটা আরও কঠিন। সেটাই করে দেখাতে হবে।”
বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা জানান, চালু হয়ে যাওয়ার পরে নতুন টার্মিনাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ বাইরের এক পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে করানো হবে। তার জন্য দরপত্রও ডাকা হয়েছে। “বিমানবন্দরের নিজস্ব যে কর্মীরা এই কাজে যুক্ত, তাঁরা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিল্ডিং-এ নিয়মিত কাজ করছেন। তাঁদের পক্ষে এতটা এলাকার দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়।” বি পি শর্মা জানিয়েছেন, নতুন টার্মিনালের মোট সাত লক্ষ বর্গফুট এলাকার কাজ শেষ করতে ১৮টি সংস্থার দু’হাজার কর্মী এখন কাজ করছেন।
পুজোর আগেই নতুন টার্মিনাল চালু করার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে মহালয়ার সময়ে টার্মিনালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। তবে যাত্রীদের জন্য দরজা খুলতে আরও দু’মাস সময় লাগবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যতই থাকুক, পরিকাঠামো তৈরি হতে এখনও ঢের দেরি। বিমানসংস্থার কর্তাদের মতে, ডিপারচারের জন্য এক্স-রে মেশিন, চেক-ইন কাউন্টার, নিরাপত্তা বেষ্টনী, কনভেয়ার বেল্ট-এর মতো পরিকাঠামো প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক উড়ানে আসা যাত্রীদের জন্য প্রয়োজন অভিবাসন ও শুল্ক দফতরের কাউন্টার। নতুন টার্মিনালে সে সব ব্যবস্থা এখনও তৈরি হয়নি। যে ১৮টি এরোব্রিজ (বিল্ডিং থেকে বিমানে ওঠার স্বয়ংক্রিয় বারান্দা) আসার কথা ছিল, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার সংখ্যাও কমে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, আপাতত ১৪টি এরোব্রিজ আসছে। যার মধ্যে অগস্ট মাসে আসার কথা ছ’টি। বাকি আটটি কলকাতায় পৌঁছবে ডিসেম্বর মাসে। |