ফের আত্মসমালোচনার সুর সিপিএমে। বামফ্রন্টের জমানায় কী করে কিছু কলেজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসএফআই জিতত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন প্রাক্তন ছাত্র-নেতা তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব।
এসএফআইয়ের কলকাতা জেলা সম্মেলন উপলক্ষে শুক্রবার শ্যামবাজারে সমাবেশে গৌতমবাবু দলের ছাত্র সংগঠনের বর্তমান নেতৃত্বকে কার্যত এক হাত নিয়ে বলেন, “বামফ্রন্টের শেষের দিকে দেখেছি, বিভিন্ন কলেজে ভোট হলেও কয়েকটি কলেজে ভোট হয় না। এসএফআই এবং সিপিএম নেতাদের তখনই আমি বলেছি, সব কলেজে যখন ভোট হয়, তখন এই কলেজগুলোতে ভোট হয় না কেন? এ সব কলেজে কি কংগ্রেস, তৃণমূলের কেউ নেই? তা কি হতে পারে? তা হলে কেন ভোট হয় না? কী করে বছরের পর বছর বছর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এএসএফআই জেতে? এটা ভাল নয়!” গৌতমবাবু এ কথা বলার সময়ে মঞ্চে ছিলেন এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি কৌস্তুভ চট্টোপাধ্যায়, বিধানসভার প্রার্থী শতরূপ ঘোষ (দিল্লিতে সংগঠনের কাজে তাঁকে পাঠানো হচ্ছে বলে গৌতমবাবু জানান) প্রমুখ। এসএফআই নেতাদের প্রতি গৌতমবাবুর প্রশ্ন, “যখন রাজ্যের আসন ক্ষমতায় আমরা, শহরের মেয়র, অধিকাংশ পুরসভা, জেলা পরিষদ আমাদের দখলে, তখন দু’একটা কলেজ আমাদের হাতে না-থাকলে কী ক্ষতি হত?”
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে তাদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, কলেজের ছাত্র সংসদে অবাধ নির্বাচনে তারা বাধা দিচ্ছে। অধিকাংশ জায়গাতেই এসএফআই কর্মীদের উপরে হামলা-আক্রমণ করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্র সংসদ দখল করছে। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র-সহ জেলা নেতারা সকলেই এ দিন এই অভিযোগ তোলেন। |
কিন্তু গৌতমবাবুর কথায় স্পষ্ট, বামফ্রন্ট আমলেও কিছু কলেজে কার্যত ‘গায়ের জোরে’ দখল করত এসএফআই। সে কাজ যে ঘোরতর ‘অন্যায়’ হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের আত্মসমালোচনায় তা উঠে আসছে। এসএফআই কর্মীদের প্রতি গৌতমবাবুর পরামর্শ পড়াশোনা করতে হবে। কংগ্রেস, তৃণমূল, নকশালপন্থী ছাত্রদের সঙ্গে মিশতে হবে। তাদের সঙ্গে বিতর্কে অংশ নিতে হবে। মারামারি-কাটাকাটি করা চলবে না। বিরোধী মনোভাবাপন্ন ছাত্রদেরও বুঝিয়ে এসএফআইয়ের দিকে টানার চেষ্টা করতে হবে।
একই দিনে আলিমুদ্দিনে বাম জমানার প্রয়াত মন্ত্রী অম্বরীষ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে একটি স্মরণিকা সংকলনের প্রকাশ অনুষ্ঠানে আত্মসমালোচনা শোনা গিয়েছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর গলাতেও। অম্বরীষবাবুর উদাহরণ টেনে বিমানবাবু বলেন, “উনি মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারতেন। রাজনীতিতে মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। আমাদের অনেকের মধ্যে নিজেকে সরিয়ে রাখার প্রবণতা থাকে। উনি নিজেকে সরিয়ে রাখতেন না।” বিমানবাবুর এই বক্তব্যের সময় মঞ্চে ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বিমানবাবু এ দিন আরও বলেছেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে প্রবল নৈরাজ্যের বিষবাষ্প বইছে। সেখানে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজন।”
এসএফআইয়ের সমালোচনার পাশাপাশি এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সমালোচনা করতে ছাড়েননি গৌতমবাবু। কর্মসংস্থানের প্রশ্নে মমতার সত্যবাদিতা নিয়ে তিনি কটাক্ষ করেন। গৌতমবাবুর কথায়, “উনি বলছেন, ৩ লক্ষ সরকারি চাকরি দিয়েছেন। আর তাঁর আমলে ৩ লক্ষ বেসরকারি চাকরি হয়েছে। পুরো মিথ্যে কথা!”
গৌতমবাবু যে ভাবে মমতাকে এ দিন কটাক্ষ করেছেন, তাতে মুখ্যমন্ত্রী মানহানির মামলা করতে পারেন। তা জেনেও কেন তিনি এমন মন্তব্য করলেন? গৌতমবাবুর ব্যাখ্যা, “উনি যাতে মিথ্যা কথা না বলেন, নিজেকে পরিবর্তন করেন, তাই বলেছি।” গৌতমবাবু জানান, মমতার সঙ্গে সাক্ষাতের আবেদন করে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে আবেদন করেছেন। আগামী ১ অক্টোবর উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম ধর্মতলায় সভা করতে চায়। যার অনুমতি এখনও প্রশাসন দেয়নি। সেই সূত্রেই কিছু দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে চান সিপিএম নেতৃত্ব। গৌতমবাবু বলেন, “তখনই মমতাকে বলব, ভাল ভাবে সরকার চালান। যে কাজ করতে পারবেন, তা-ই মানুষকে বলুন!” মমতা কত ‘অবাস্তব’ কথা বলেন, তার উদাহরণ দিতে গিয়ে গৌতমবাবু বলেন, “আশপাশের জমি না-নিয়ে দমদম থেকে পর্যন্ত বনগাঁ পর্যন্ত যশোহর রোড বরাবার উড়ালপুল তৈরির কথা বলেছেন মমতা। কিন্তু এ কাজ করা বাস্তবে অসম্ভব! কারণ, খরচ পড়বে ২৫ হাজার কোটি টাকা। যা খরচ করা রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়।” মমতাকে কটাক্ষ করে গৌতমবাবুর মন্তব্য, “উনি এমন কিছু প্রতিশ্রুতি দিন, যা ওঁর সময়ে শুরু করে শেষ করা যায়!” |