দেওয়ালে প্রায় পিঠ ঠেকে যাওয়া অর্থনীতিকে ফের চাঙ্গা করতে সংস্কারকেই আঁকড়ে ধরতে চায় ‘টিম-মনমোহন’।
বিশ্ব জুড়ে মন্দার ছায়া। আর দেশে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে সমস্যায় পড়া কৃষি। মূলত এই দু’য়ের জেরে চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধি যে ৬.৭ শতাংশে নামতে পারে, শুক্রবার তা মেনে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ। এবং সেই থমকে যাওয়া বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে আর্থিক সংস্কার ত্বরান্বিত করার উপরই জোর দিয়েছে তারা।
পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজনের মতে, ঘুরে দাঁড়াতে দ্রুত সংস্কারের সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন্দ্রকে। এ বিষয়ে তাঁর প্রস্তাব
• বহু ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসায় খুলে দেওয়া হোক বিদেশি লগ্নির দরজা
• এ দেশের বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলিতে অংশীদারি কেনার সুযোগ দেওয়া হোক বিদেশি বিমান পরিষেবা সংস্থাগুলিকে
• কড়া হাতে রাশ টানা হোক রাজকোষ ঘাটতিতে। যতটা সম্ভব কমানো হোক মূলধনী খাতের ঘাটতিও
• ঘাটতি কমাতে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের জন্য কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিক কেন্দ্র। যেমন, বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দাম বাড়ুক ডিজেলের। পরিবার-পিছু রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি দেওয়া হোক বছরে ৪টি সিলিন্ডার পর্যন্ত। বন্ধ হোক সোনা আমদানি
• বিদেশি লগ্নিকারীদের শঙ্কা ও সংশয় দূর করতে আরও সরল আর স্বচ্ছ হোক আয়কর-আইন। খতিয়ে দেখা হোক কর ফাঁকি প্রতিরোধ আইনের (জিএএআর) প্রভাবও। অবিলম্বে চালু হোক পণ্য-পরিষেবা কর
• পরিকাঠামোয় লগ্নি টানতে নিশ্চিত করা হোক এই ক্ষেত্রের প্রকল্পগুলিকে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টি
• জোর দেওয়া হোক চুক্তিচাষ-সহ কৃষি ক্ষেত্র সংস্কারেও
রঙ্গরাজনের এই সব প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও, আখেরে তা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সন্দিগ্ধ শিল্পমহল। কারণ, বাজার অর্থনীতির প্রবক্তা হিসেবে সংস্কারে জোর দেওয়ার কথা বার বারই বলছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, অথর্মন্ত্রী পি চিদম্বরম, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া এবং অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা রঙ্গরাজন। ফলে সে হিসেবে এই ঘোষণা প্রত্যাশিত। কিন্তু শরিকি রাজনীতির বাধ্যবাধকতা সরিয়ে রেখে তা রূপায়িত করা সম্ভব হবে কিনা, প্রশ্ন সেখানেই।
পরিষদের পূর্বাভাস, অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ঘুরে দাঁড়াবে উৎপাদন শিল্প। বছর শেষে তার বৃদ্ধি ছোঁবে ৪.৫%। নিরাশ করবে না খনন শিল্প (৪.৪%)। কিন্তু অর্থনীতিকে পিছন থেকে টেনে রাখবে তলানিতে ঠেকা কৃষি (০.৫%) ও চড়া মূল্যবৃদ্ধির (৬.৫-৭%) নাছোড় সমস্যা। বাধ সাধবে আমেরিকা, ইউরোপের আর্থিক সঙ্কটও। আর এই সব কারণেই পূর্বাভাস ৬.৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছেন রঙ্গরাজনরা। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৭.৫-৮%। |