|
|
|
|
১০০ ডায়ালের অপব্যবহার, বিপর্যস্ত পরিষেবা |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • নারায়ণগড় |
রাত তখন দেড়টা। দিনভর পরিশ্রমের পরে থানায় বসে ঢুলছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন পুলিশকর্মী-আধিকারিক। আচমকাই ফোন বেজে উঠল তীব্র স্বরে। পড়ি কি মরি ছুটে গিয়ে ফোন ধরলেন এক পুলিশকর্মী। খবর এল মাইল খানেক দূরে এক গ্রামে ডাকাতি হচ্ছে। বন্দুক বেঁধে দলবল নিয়ে সেই গ্রামে ছুটলেন থানার ওসি। কিন্তু ডাকাত কই! রীতিমতো মাইক বাজিয়ে, হ্যাজাক জ্বেলে হরিনাম সঙ্কীর্তন হচ্ছিল গ্রামে।
চন্দ্রকোনা থানার ওসি শীর্ষেন্দু দাসের অভিজ্ঞতা। পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় থানায় তখন ছিলেন তিনি।
১০০ ডায়ালের ফোন ধরে শীর্ষেন্দুবাবুর চেয়েও খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে পশ্চিমে মেদিনীপুরের বেশ কিছু থানার পুলিশকর্মীদের। শুধু ভুল তথ্যই নয়, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করছে লোকজন। গুটিকয়েক মানুষের অপরিণামদর্শিতার জন্য বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ এই পরিষেবা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, থানায় ফোন এলেই যেন আতঙ্ক!
নিখরচায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য চালু হয়েছিল ১০০ ডায়ালের পরিষেবা। রাজ্যের অধিকাংশ থানাতেই ১০০ ডায়ালের সুবিধা রয়েছে। এই পরিষেবা যখন প্রথম চালু হয়েছিল, তখন ভালই সাড়া মিলেছিল। চুরি-ডাকাতি-দুর্ঘটনার খবর অনেক দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছিল পুলিশের কাছে। এখনও ১০০ ডায়ালে ফোন করে উপকৃত হন বহু মানুষ। কিন্তু পুলিশকে অকারণ হেনস্থা করার জন্য কিছু লোক ডাকাতি কিংবা দুর্ঘটনার ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। কেশিয়াড়ি থানার আইসি তুলসী ভট্টাচার্য বলেন, “ইদানীং আবার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও ফোন করছে। কেউ কাকু কেউ বা দাদু সম্বোধন করে ফোন তুলেই রয়েছে।” ঘাটাল থানার ওসি বিশ্বরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই নম্বরে ফোন এলেই নানা রকম গালিগালাজ শুনতে হয়। তাই এখন ফোন ধরতেও বিরক্তি বোধ হয়।” খড়্গপুর লোকাল থানার ওসি বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, “নম্বরটার যে কী গুরুত্ব সেটাই কিছু মানুষ ভুলে গিয়েছেন। যেন ঠাট্টা-তামাশার জন্য সরকার এই পরিষেবা চালু করেছে।”
গুরুত্বপূর্ণ এই পরিষেবার এ হেন অপব্যবহারে উদ্বিগ্ন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “গুরুত্ব বুঝে সাধারণ মানুষকে ফোন করতে হবে। না হলে সরকারি এই সুবিধা থেকে মানুষই বঞ্চিত হবেন।” সরকারি আইনজীবী মনোরঞ্জন মণ্ডল, ঘাটাল বিদ্যাসাগর হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক দুলাল কর বলেন, “এই ভাবে পুলিশকে অকারণ হেনস্থা করা সামাজিক অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এটা বন্ধ করতে পুলিশের কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।”
সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরে এই প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন জেলার পুলিশকর্তারাও। পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরেই জেলায় ১০০ ডায়ালের অপব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন থানা থেকে আমি এই অভিযোগ পেয়েছি। এটা বন্ধ করতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” কী ধরনের কড়া ব্যবস্থা? সুনীলবাবু জানান, ১০০ ডায়ালে ফোন এলে নম্বর ওঠে। ভূয়ো ফোনগুলি মোবাইল থেকে আসায় নাম-ঠিকানা চটজলদি জানা যেত না। এ বার থেকে ফোন করে কেউ অকারণ হেনস্থা করলে ওই নম্বর চিহ্নিত করে গ্রাহকদের নাম-ঠিকানা সংশ্লিষ্ট মোবাইল সংস্থা থেকে সংগ্রহ করা হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু নম্বরের তালিকা তৈরি করে নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|