বিধির ফাঁক গলে শহরে চলছে বহু আইসিএসই স্কুল
স্কুলের ভিতরের ছোট্ট দালানে দাঁড়াতে পারে টেনেটুনে ৬০-৭০ জন। সেখানে ঢুকেছে চারটি শ্রেণির একশোরও বেশি পড়ুয়া। কেউ বা ভিতরে জায়গা না পেয়ে বাইরে রোদেই দাঁড়িয়ে আছে। বৃহস্পতিবারের সেই কড়া রোদে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে ভিড়ে ঠাসা দালানের গাদাগাদিতে অসুস্থই হয়ে পড়ে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সুরঙ্গন মুখোপাধ্যায়। একটি নার্সিং হোমের আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন সে। এ দিন দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে শ্যামবাজারের ‘সেন্ট পল্স কে জি অ্যান্ড ডে’ স্কুলে। স্কুল-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শ্যামপুকুর থানায় গাফিলতির অভিযোগ করেছেন সুরঙ্গনের বাবা-মা। স্কুল-কর্তৃপক্ষ জানান, ঘটনাটি ‘দুর্ভাগ্যজনক।’ তবে, কেউ ইচ্ছা করে এমন ঘটাননি বলে দাবি স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি কিমি কোশির।
ছোট্ট পরিসরে কোনও রকমে চলছে, এ রকম বহু স্কুল। যার বেশির ভাগই বেশ পুরনো। খেলার মাঠ তো দূরের কথা, যথেষ্ট প্রশস্ত বাড়িও নেই স্কুলগুলির। এমনকী, বহুতল অ্যাপার্টমেন্টের দু’-একটি তলা নিয়েও চলছে স্কুল। সম্প্রতি হাওড়ার একটি স্কুলের ছাদ থেকে ‘ঝাঁপ’ দেওয়ায় মৃত্যু হয় ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর। স্কুলটি একটি আবাসনের ভিতরে চলে। আবাসনের ছাদের দরজা খোলা থাকে, ছাদের পাঁচিলও বেশি উঁচু নয়।
এমন দু’-একটি স্কুলই নয়। অনেক আইসিএসই স্কুলেই যথাযথ পরিকাঠামোর অভাব আছে। স্কুল তৈরি করতে ন্যূনতম কী পরিকাঠামো প্রয়োজন, আইসিএসই কাউন্সিলের সেই সংক্রান্ত একটি নিয়ম আছে। কিন্তু তা তৈরি হয়েছে ২০০৬-এ। তাই তার আগে গজিয়ে ওঠা একের পর এক আইসিএসই স্কুল চলছে যথাযথ পরিকাঠামো ছাড়াই। আইসিএসই কাউন্সিল জানিয়েছে, এ নিয়ে তাদের কিছু করার নেই। এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নিতে হলে রাজ্য সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। রাজ্য জানিয়েছে, তাদের নিজে থেকে কিছুই করার নেই। কোনও অভিভাবক বা শিক্ষক-শিক্ষিকার তরফে অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। কাউন্সিল আর রাজ্যের এই পারস্পরিক চাপান-উতোরের ফাঁক গলে পরিকাঠামো ছাড়াই চলছে একের পর এক আইসিএসই স্কুল।
স্কুল খোলার জন্য প্রথমে আবেদন জানাতে হয় রাজ্য সরকারের কাছে। সরকার পরিদর্শন করে ছাড়পত্র (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) দেয়। ছাড়পত্র পাওয়ার পরে অনুমোদন দেয় সংশ্লিষ্ট বোর্ড। এক বার সরকারের ছাড়পত্র মেলার পরে সাধারণত কাউন্সিলের অনুমোদন পেতে সমস্যা হয় না। কাউন্সিলের একটি সূত্র বলছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রস্তাবিত স্কুলের পরিকাঠামো ও অন্যান্য বন্দোবস্ত না দেখেই অনুমোদন দিয়ে দেয় কাউন্সিল। তাই এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ও বোর্ড, দু’তরফেরই গাফিলতি রয়েছে।
২০০৬ সালে আইসিএসই কাউন্সিল স্কুলের পরিকাঠামো সংক্রান্ত নির্দেশিকা তৈরি করে। তাতে রয়েছে, যে শহরের জনসংখ্যা ২৫ লক্ষের বেশি, সেখানে স্কুল খুলতে হলে অন্তত এক একর এবং জনসংখ্যা তার থেকে কম হলে অন্তত দুই একর জমি দরকার। ওই জমির এক পাশে স্কুল চলবে, বাকিটা ব্যবহার করতে হবে খেলার মাঠ হিসেবে। কাউন্সিলের দাবি, এই নিয়ম তৈরি হওয়ার পর থেকে যত স্কুলকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, সেগুলিতে যথাযথ পরিকাঠামো রয়েছে।
কিন্তু আগের স্কুলগুলির কী হবে? কাউন্সিলের সচিব জেরি অ্যারাথুন বলেন, “আগে তো পরিকাঠামোর উপরে এত জোর দেওয়া হত না! তবে ২০০৬-এ নিয়ম তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে এখন সরকার ও কাউন্সিল ছাড়পত্র এবং অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে অনেক সচেতন।” তিনি জানান, পরিকাঠামোহীন স্কুলের ব্যাপারে কিছু করার হলে তা রাজ্য সরকারকেই করতে হবে। রাজ্য এ নিয়ে কোনও রিপোর্ট দিলে প্রয়োজনে কাউন্সিল বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করবে।
রাজ্য সরকার জানিয়েছে, এখন সব দিক খতিয়ে দেখে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “আগে দেওয়া ছাড়পত্রের দায়িত্ব তো আমাদের নয়। তবে, কোনও অভিভাবক বা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কেউ অভিযোগ জানালে আমরা তদন্ত করে দেখতে পারি।” কাউন্সিল সূত্রের খবর, পরিকাঠামোহীনতার পাশাপাশি নানা রকম অনিয়ম চলছে ওই সব স্কুলে। এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, “কেবল পরিকাঠামোই নয়, শিক্ষকদের বেতনও ঠিকঠাক দেওয়া হয় না। পরিচালন সমিতির মাথায় যাঁরা থাকেন, অনেক সময়ে তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও যথাযথ নয়। সেগুলি দেখার কেউ নেই। আবার কখনও একটি স্কুল অনুমোদন পাওয়ার পরে অন্য কয়েকটি স্কুলকে সেই নাম ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে দেয়। এই স্কুলগুলি চলে পরিকাঠামো ছাড়াই।”
অথচ ২০০৬-এর নিয়মে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে, যে স্কুলে পঠনপাঠনের জন্য ছাড়পত্র ও অনুমোদন মিলেছে, কেবল সেই স্কুলের ভবনেই ক্লাস হতে পারে। সচিব অবশ্য জানিয়েছেন, একটি স্কুলের নাম ব্যবহার করে যে অন্যান্য স্কুল চলছে, তেমন কোনও নজির তাঁদের অন্তত জানা নেই। এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.