চেতলায় তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে যিনি অভিযোগ করেছিলেন, সেই মহিলাই পরে কবুল করেছেন, ওই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। এই অবস্থায় গণধর্ষণের অভিযোগে ধৃত অজয় ভট্টাচার্য ওরফে ছেনোকে বৃহস্পতিবার শর্তসাপেক্ষে অন্তর্বর্তিকালীন জামিন দিয়েছে আদালত। পুলিশও তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেনি। আদালত থেকে বেরিয়ে অজয় বলেন, “আমি চক্রান্তের শিকার হয়েছি।”
চারু মার্কেট থানার পুলিশ এ দিন অজয়কে আলিপুর আদালতে হাজির করায়। মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট দীপ্তেন্দ্রনাথ মিত্রের এজলাসে একটি আবেদনে পুলিশ জানায়, তদন্ত চলাকালীন অভিযোগকারিণী স্বীকার করেছেন যে, গণধর্ষণের কোনও ঘটনা ঘটেনি। তিনি যে-বাড়িতে আয়ার কাজ করেন, ‘ঘটনা’র রাতে সেখানেই ছিলেন। ওই বাড়ির কর্ত্রীও ইতিমধ্যে পুলিশকে তা জানিয়েছেন। বিচারক তার পরেই অজয়ের অন্তর্বর্তিকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। ২৯ অগস্ট ফের তাঁকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে। বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন, সপ্তাহে দু’দিন তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে হবে অজয়কে। আগাম অনুমতি ছাড়া আলিপুর আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার বাইরেও আপাতত যেতে পারবেন না তিনি।
গত শনিবার সন্ধ্যায় চেতলা সেতু থেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে টালিগঞ্জ রোডের বাসিন্দা এক মহিলা অভিযোগ করেছিলেন। অজয়ের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। পুলিশ অজয়কে গ্রেফতার করে। ১৪ অগস্ট আলিপুর আদালত ধৃতকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নিদেশ দেয়। এর পরেই তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, অভিযোগটাই মিথ্যা। তারই ভিত্তিতে অজয়কে এ দিন আদালতে আগাম পেশ করা হয়।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “অজয় ওরফে ছেনোকে যে-কারণে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল, তার আর প্রয়োজন নেই। তাই তাঁকে আগাম আদালতে হাজির করানো হয়।” পুলিশ আদালতে আবেদন জানায়, আদালত এ বিষয়ে যা ভাল বুঝবে, তা-ই করুক। অজয় বা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও ওই অভিযোগকারিণীর বিরুদ্ধে পাল্টা কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি বলেও জানিয়েছেন পল্লববাবু।
সরকার পক্ষের আইনজীবী পীযূষকান্তি মণ্ডল আদালতে জানান, অভিযোগকারিণী মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছেন। আদালতে দেওয়া ওই মহিলার ‘গোপন জবানবন্দি’ এখনই প্রত্যাহার করা যায় না। তদন্ত শেষ করে পুলিশ যখন চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেবে, তখনই বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। তার পরেই ঠিক হবে, মিথ্যা মামলা দায়ের করার জন্য ওই মহিলার বিরুদ্ধে পুলিশ পাল্টা মামলা রুজু করবে কি না। আদালতও এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।
অভিযুক্ত অজয়ের আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, “মিথ্যা অভিযোগে আমার মক্কেলকে বেআইনি ভাবে আটকে রাখা হল। এর বিচার কে করবে?” |