নয়া তথ্য-প্রযুক্তি নীতি গৃহীত
বিনিয়োগ টানতে
রাজ্যে চার নতুন নীতি
গ্নির আবেদনপত্রের বহর কমানো ও সিলিংয়ের বেশি জমি রাখার সুবিধা শিল্পের স্বার্থে এই দুই ব্যাপারে স্পষ্ট নীতি নেওয়ার পরে এ বারে রাজ্যে বিনিয়োগ টানতে আরও এক কদম এগোলো রাজ্য। এ বার বিনিয়োগ টানতে চারটি নতুন নীতি তৈরির কথা ঘোষণা করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, রাজ্যে নতুন শিল্পনীতি, বিনিয়োগ নীতি, সফটওয়্যার নীতি এবং অনাবাসী (এনআরআই) নীতি তৈরি করা হবে। পাঁচ সদস্যের মন্ত্রিগোষ্ঠী এই নীতি তৈরি করবে। ১৫ দিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি আসছে। রাজ্যে শিল্পের পরিবেশও খুব ভাল। তাই নতুন নীতি তৈরি করা হচ্ছে।”
বিনিয়োগ টানতে সরকারের প্রায় প্রথম দিন থেকেই রাজ্য পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে বলে দাবি প্রশাসনের। শিল্প দফতরের দাবি, ইতিমধ্যেই সরকারি প্রক্রিয়ার জটিলতা দূর করতে লগ্নির জন্য আবেদনপত্র ৯৯ পাতা থেকে কমিয়ে ৭ পাতা করা হয়েছে। আরও বেশি শিল্পক্ষেত্রকে সিলিংয়ের বেশি জমি রাখার সুবিধা দিতে ভূমি সংস্কার আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধন করা হয়েছে। রাজ্যের নিজস্ব ‘জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বিল’ বিধানসভায় পেশ করার আগে আরও ‘বাস্তব সম্মত’ করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এবং রাজ্য সরকারের দাবি, নতুন সরকারের সতেরো মাসে ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে রাজ্যে।
এই প্রেক্ষিতে দেশীয় এবং অনাবাসী বিনিয়োগকারীদের কাছে সরকারের ‘শিল্প-বান্ধব’ ভাবমূর্তি তুলে ধরতেই পৃথক চারটি নীতি তৈরির পরিকল্পনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, এ রাজ্যে মূলত অনাবাসী বাঙালিরা বিনিয়োগ করতে চাইলে সরকার তাঁদের কী ধরনের সুবিধা দেবে, তার রূপরেখা থাকবে অনাবাসী নীতিতে। বিনিয়োগ নীতির ক্ষেত্রে সরকারের নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব থাকবে। নতুন শিল্পনীতিতে থাকবে রাজ্যের কোথায় কী ধরনের শিল্প হতে পারে, সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র কোনগুলি, জমির প্রশ্নে সরকারের ভূমিকা কী হবে, তার ব্যাখ্যা। অমিত মিত্রের নেত্ৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের মন্ত্রিগোষ্ঠীতে রয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মণীশ গুপ্ত, পূর্ণেন্দু বসু।
এ দিন মন্ত্রিসভার শিল্প ও পরিকাঠামো বিষয়ক সাব কমিটির বৈঠকে রাজ্যের নতুন তথ্য ও প্রযুক্তি নীতি অনুমোদিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও পৃথক একটি সফটওয়্যার নীতি করছে রাজ্য। এ ব্যাপারে এক মুখপাত্রের ব্যাখ্যা, তথ্য-প্রযুক্তি নীতির মধ্যে থেকেই সফটওয়্যার সংক্রান্ত অংশটিকে আলাদা করে তার আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতেই নতুন নীতি তৈরি করা হবে। কিন্তু এ সবের পরেও রাজ্য বড় মাপের বিনিয়োগ আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে প্রশাসনের মধ্যেই। এই অংশের মতে, রাজ্যে জমি সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শুধু নতুন নীতি ঘোষণা করে বিনিয়োগ টানা মুশকিল। তাঁদের বক্তব্য, নতুন সরকারের আমলে যে পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তার সিংহভাগই আসলে বামফ্রন্ট সরকারের আমলের।
রাজ্যের মেধা সম্পদকে পুঁজি করে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাজি ধরেছিল বিগত রাজ্য সরকারও। তবে অভাব ছিল আর্থিক মূলধনের। যে অভাব পূরণ করতে পুঁজি বা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল-এর প্রয়োজন। রাজ্য সরকার নিজস্ব ভেঞ্চার ক্যাপিটাল (ভিসি) ফান্ড সংস্থা ওয়েবেল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তৈরিও করেছিল। পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে শুরু সেই তহবিলের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৫ কোটিতে। অন্তত খাতায়-কলমে তাই দাবি ছিল বাম সরকারের। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, তহবিল তৈরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু প্রশাসনিক ঢিলেমির জন্য সেই টাকা পাওয়াই সমস্যা। বর্তমান সরকারও তথ্যপ্রযুক্তি নীতিতে ৫০ কোটি টাকা তহবিলের ব্যবস্থা করেছে। আপাতত ১০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই টাকা প্রয়োজনের সময় কত দ্রুত পাওয়া যায়, সেটাই দেখার। সরকারি সূত্রের খবর, ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১৬টি সংস্থা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে পুঁজি পেয়েছে। সব মিলিয়ে সেই অর্থের পরিমাণ সাড়ে তিন কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, রাজ্যে সাগর এবং রসুলপুরে দু’টি গভীর সমুদ্রবন্দর গড়া হবে। সাগরের বন্দরটি যৌথ ভাবে করবে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট, রেল ও রাজ্য। এর মধ্যে কেন্দ্রের অংশীদারিত্ব থাকবে ৭৪%, রাজ্যের ২৬%। রসুলপুরের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি হবে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে। দু’টি প্রকল্পেই নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে।
এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, চা-বাগানের শ্রমিকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য সরকারি উদ্যোগে আবাসন, বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা এবং ১০০ দিনের কাজ দেওয়া হবে। এ ছাড়া, বীরভূমের বোলপুরে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের ১৯৯ একর জমিতে ক্ষুদ্রশিল্পের ‘বিগ বাজার’ তৈরি করা হবে। এখানে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী ক্ষুদ্রশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে তা বেচাকেনা করবে। জমির একটি অংশে তৈরি হবে ‘ফুড পার্ক’।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.