জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণ নিয়ে কূটনৈতিক টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়ল ব্রিটেন ও ইকুয়েডর। সুইডেনে যৌন নির্যাতনের মামলায় অভিযুক্ত উইকিলিকস ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জ। তাঁকে সুইডেনের হাতে তুলে দিতে উদ্যোগী হয়েছে ব্রিটিশ সরকার। প্রত্যর্পণ এড়াতে লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নেন অ্যাসাঞ্জ। আজ তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয় (‘পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম’) দিয়েছে ইকুয়েডর।
কিন্তু ব্রিটেন জানিয়ে দিয়েছে, অ্যাসাঞ্জকে কোনও ভাবেই ইকুয়েডরে যেতে দেওয়া হবে না। তাঁকে গ্রেফতার করা হবেই। ব্রিটিশ বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ইকুয়েডর উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতাকে আশ্রয় দিলেও ব্রিটেনের অবস্থানের পরিবর্তন হবে না। সে কথা ইকুয়েডরকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।
সব দূতাবাসেরই কূটনৈতিক রক্ষাকবচ রয়েছে। ভিয়েনা চুক্তি অনুযায়ী, ইকুয়েডরের দূতাবাসে ঢুকে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার করার অধিকার নেই ব্রিটিশ পুলিশের। কিন্তু ব্রিটেনের বক্তব্য, ১৯৮৭ সালের কূটনৈতিক ও কনসুলার আইন অনুযায়ী প্রয়োজনে দূতাবাসের রক্ষাকবচ প্রত্যাহার করতে পারে ব্রিটিশ সরকার। তার পরে দূতাবাসের ভিতরে গিয়েও অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার করা যাবে।
ব্রিটেনের এ হেন হুমকিতে ইকুয়েডর ‘বিস্মিত’। বিদেশমন্ত্রী রিকার্ডো পাটিনোর বক্তব্য, “আমর ব্রিটেনের উপনিবেশ নই। ঔপনিবেশিক শাসনের দিন চলে গিয়েছে।” তাঁর দাবি, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্রিটিশ পুলিশের দূতাবাসে ঢোকার অধিকার নেই। অ্যাসাঞ্জ নিয়ে আলোচনার জন্য আজ স্টকহোমে ইকুয়েডরের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে সুইডেন।
আজ লন্ডনে ইকুয়েডরের সামনে বিক্ষোভ দেখান অ্যাসাঞ্জের সমর্থকেরা। ধ্বস্তাধ্বস্তির পরে তিন জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটোতে ব্রিটিশ দূতাবাসের সামনেও বিক্ষোভ দেখান কিছু মানুষ।
আমেরিকা-সহ বেশ কিছু দেশের গোপন কূটনৈতিক বার্তা ফাঁস করে দিয়েছিল উইকিলিকস। সুইডেনে গেলে তাঁকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা অ্যাসাঞ্জের। আজ রিকার্ডো পাটিনো বলেন, অ্যাসাঞ্জের আশঙ্কা অমূলক নয়। রাজনৈতিক কারণে তাঁকে হেনস্থা করা হতে পারে।
আশ্রয় দেওয়ায় ইকুয়েডরকে ধন্যবাদ দিয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। তাঁর বক্তব্য, ব্রিটেন বা তাঁর নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়া তাঁর পাশে দাঁড়াল না। কিন্তু, এক ‘সাহসী’ লাতিন আমেরিকার দেশ তাঁকে সাহায্য করেছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে আলোচনা করতে সম্প্রতি ইকুয়েডরে যান অ্যাসাঞ্জের মা ক্রিস্টিন। সে দেশের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এক সময়ে উইকিলিকসের সমালোচনা করেছিলেন কোরিয়া। কিন্তু, পরে মত বদলান তিনি। রাশিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমের জন্য কোরিয়ার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। তখন উইকিলিকসের প্রভূত প্রশংসা করেছিলেন কোরিয়া।
কূটনৈতিক সূত্রে খবর, প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ আদালতে আইনি লড়াই চালানোর পাশাপাশি ইকুয়েডরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছিলেন অ্যাসাঞ্জ। ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট তাঁর আর্জি খারিজ করার পরেই অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার পরামর্শ দেন তাঁর আইনজীবীরা। |