চিনাকুড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে হাত গুটিয়ে নিল ডিপিএসসি
চিনাকুড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে পাকাপাকি ভাবে হাত গুটিয়ে নিল ডিসেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কর্পোরেশন (ডিপিএসসি)। বৃহস্পতিবার সকালে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেন কর্তৃপক্ষ। এর সঙ্গে সঙ্গেই কুড়ি বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী এই কেন্দ্রটি আপাতত বন্ধ হয়ে গেল। এই বিজ্ঞপ্তির বিরোধিতা করে এ দিন সকাল থেকে কেন্দ্রের গেটে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেছে আইএনটিটিইউসি।
ডিপিএসসি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কেন্দ্রে কর্মরত ১৪৭ জন স্থায়ী শ্রমিকের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে ৯ অগস্ট আসানসোলে একটি বৈঠক হয়। সেখানে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সংস্থা অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতারা। ডিপিএসসি-র প্রেসিডেন্ট (কর্পোরেট) সোমেশ দাশগুপ্ত জানান, বৈঠকে ঠিক হয়েছে ১৬ অগস্টের মধ্যে কেন্দ্রের ১৪৭ জন শ্রমিক-কর্মী স্বেচ্ছাবসর নেবেন। নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিক কর্মীদের আর্থিক পাওনাগণ্ডাও মিটিয়ে দেবেন কর্তৃপক্ষ। ১৬ অগস্টের পরে এই কেন্দ্রের আর কোনও দায়িত্ব বহন করবে না ডিপিএসসি। স্বেচ্ছাবসর না নেওয়া শ্রমিক-কর্মীদেরও আর্থিক ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব নেওয়া হবে না বলে ডিপিএসসি-র তরফে জানানো হয়েছে।
আইএনটিটিইউসি-র নেতৃত্বে বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র।
চিনাকুড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ইসিএলের অধিগৃহীত। ১৯৯১ সালে ইসিএল কর্তৃপক্ষ ২০ বছরের জন্য সেটি লিজ দেয় ডিপিএসসি-কে। ২০১১-এর ৩১ মার্চ লিজের সময়কাল শেষ হয়ে যায়। এর পরে ইসিএল ডিপিএসসি-কে আর কয়লা দেয়নি। যে কয়লা মজুত ছিল তা দিয়ে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে। বস্তুত তার পর থেকেই ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ। কেন্দ্রটি ফের লিজ দেওয়ার জন্য ইসিএল কর্তৃপক্ষ ‘গ্লোবাল টেন্ডার’ ডেকেছে। তবে ডিপিএসসি নতুন করে লিজ নেওয়ার জন্য আবেদন করেনি। সংস্থার তরফে সোমেশবাবু জানান, নতুন টেন্ডারে এমন কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে যা তাঁদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। এর পরেই সংস্থার ১৪৭ জন স্থায়ী কর্মীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এই কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর নিতে হবে বলে সংস্থার তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিবাদে শ্রমিক-কর্মীরা দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান। ৯ অগস্ট শ্রমিক সংগঠন ও কতৃর্পক্ষের বৈঠকে স্বেচ্ছাবসরের সিদ্ধান্ত পাকা হয়।
বৈঠকে গৃহীত এই সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার থেকেই কার্যকর করা হয়। সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এ দিন সকাল থেকে কারখানার গেটে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন আইএনটিটিইউসি-র কর্মীরা। সংগঠনের ডিপিএসসি ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক চন্দন চক্রবর্তীর দাবি, এই কেন্দ্রের শ্রমিক-কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর বাধ্যতামূলক করা চলবে না। ডিপিএসসি-র অন্য কোনও ইউনিটে বদলি অথবা চিনাকুড়ি কেন্দ্রেই বহাল রাখতে হবে। ডিপিএসসি-র প্রেসিডেন্ট (কর্পোরেট) সোমেশবাবুর দাবি, ৯ অগস্টের বৈঠকে গৃহীত স্বেচ্ছাবসরের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে সে দিন আইএনটিটিইউসি-র পক্ষ থেকেও সই করা হয়। সোমেশবাবু অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার থেকে স্বেচ্ছাবসরের বিরোধিতায় নেমে দ্বিচারিতা করছে আইএনটিটিইউসি। এ প্রসঙ্গে চন্দনবাবুর পাল্টা দাবি, “ওই বৈঠকে স্বেচ্ছাবসরের বিরোধিতা না করে আমরা সই করেছিলাম। আজও বিরোধিতা করছি না। শ্রমিক-কর্মীরা চাইলে স্বেচ্ছাবসর নিতে পারেন। কিন্তু যাঁরা নেবেন না, তাঁদের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করতেই আমাদের এই আন্দোলন।” সোমেশবাবুর অবশ্য দাবি, এই আন্দোলন বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সংস্থার বেশির ভাগ শ্রমিক-কর্মীই স্বেচ্ছাবসর নিচ্ছেন।
সিটুর সম্পাদক মলয় বসুরায়ও বলেন, “কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে আমরা স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তে সই করেছি। এখন বিরোধিতায় নামতে পারব না। তবে যাঁরা স্বেচ্ছাবসর নেবেন না, তাঁদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক পদক্ষেপ নিক।” আইএনটিইউসি-র জেলা নেতা চণ্ডী চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “স্বেচ্ছাবসর না নেওয়া কর্মীদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে কোনও শ্রমিক সংগঠন আন্দোলন করলে আমাদের নীতিগত সমর্থন থাকবে।” সে দিনের বৈঠকে এআইটিইউসি-র পক্ষে স্বেচ্ছাবসরের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করা হয়। সংগঠনের সম্পাদক সিঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা স্বেচ্ছাবসরের বিরোধিতা করিনি। তবে স্বেচ্ছাবসর না নেওয়া কর্মীদের পক্ষে কী ভাবে আন্দোলন করব, তা পরে ঠিক হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.