‘সদস্য’ না-হয়েও বৈঠকে সরল, দলে বিতর্ক জটিল
দ্যসমাপ্ত লন্ডন অলিম্পিকের ‘মধুরা-কাণ্ডে’র ছায়া বাম রাজনীতিতে!
কাগজে-কলমে দলের ‘সদস্য’ই নন এখন। অথচ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিয়ে গেলেন এক বর্ষীয়ান প্রাক্তন মন্ত্রী! এমনই ঘটনা ঘটেছে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকে! এবং তার জল বহু দূর গড়ানোর ইঙ্গিতও দেখা দিচ্ছে।
লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনে ভারতীয় দলের সঙ্গে মার্চ পাস্টে দেখা গিয়েছিল বেঙ্গালুরুর তরুণী মধুরা নগেন্দ্রকে। উদ্বোধনী পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁর অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আচমকাই তিনি ঢুকে পড়েছিলেন মার্চ পাস্টে! ভারতীয় দলের ক্ষোভের মুখে পরে অবশ্য ওই তরুণী তাঁর ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নেন। ফ ব-য় এখনও কেউ ভুল স্বীকার করছে না। বরং, সম্মেলন-পর্বের আগে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ‘অনুপ্রবেশে’র ঘটনাকে ঘিরে দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বই ফের তীব্র আকার নিচ্ছে।
পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতি হিসাবে কলকাতায় গত শনি ও রবিবার ফ ব-র কেন্দ্রীয় কমিটির যে বৈঠক বসেছিল, সেখানে অংশ নিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা দলের প্রবীণ নেতা সরল দেব। ফ ব সূত্রের খবর, দলীয় রাজনীতির নানা টানাপোড়েনেই এ বার আনুষ্ঠানিক সময়সীমা ফুরনো পর্যন্ত দলের সদস্যপদ নবীকরণ করেননি সরলবাবু। তার পরেও কী ভাবে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের মধ্যে।
পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠছে দেখে মঙ্গলবারই তড়িঘড়ি সরলবাবু এবং তাঁর জেলার আরও কিছু নেতা-কর্মীর কাছে সদস্যপদ নবীকরণের ফর্ম পাঠানো হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর! এমনিতেই সরলবাবুর সঙ্গে তাঁর জেলা উত্তর ২৪ পরগনায় দলের একাংশের বিরোধ তুঙ্গে। যার জেরে সরলবাবুকে ‘বহিষ্কারে’র সুপারিশ পর্যন্ত রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছিল জেলা সম্পাদকমণ্ডলী। এ বারের ঘটনার পরে দলের মধ্যে ফের ঝড় ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সম্মেলনের আগে সব বাম সংগঠনেই সদস্যপদ নবীকরণের প্রক্রিয়া চলে। সেই অনুযায়ীই ফ ব-য় নবীকরণের শেষ দিন চলে গিয়েছে ৩০ জুন। এ বারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অবশ্য ঠিক হয়েছে, আগামী ৩১ অগস্ট পর্যন্ত স্ক্রুটিনির প্রক্রিয়া চলবে এবং সেই সময়ের মধ্যে কেউ সদস্যপদ সংক্রান্ত কোনও আবেদন উচ্চতর কমিটির কাছে পাঠাতে পারেন। কিন্তু দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “পরে কী হবে, সেটা পরের কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক যখন হচ্ছে, তখন সরলবাবু আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের সদস্য নেই! তা হলে তাঁকে কী ভাবে বৈঠকে যোগ দিতে অনুমতি দেওয়া হল?” দলের একাংশের বক্তব্য, এই ক্ষোভের আঁচ পেয়েই সদস্যপদের কাগজপত্র সরলবাবুর কাছে পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয়ে যাওয়ার পরে।
ঘটনায় দলের ‘বিড়ম্বনা’ যে হয়েছে, অস্বীকার করতে পারছেন না ফ ব নেতৃত্ব। দলের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাসের ব্যাখ্যা, “সরলবাবু কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নেননি। সদস্যপদ নবীকরণের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে ৩১ অগস্ট পর্যন্ত স্ক্রুটিনি চলাকালীন কেউ আবেদন করতে পারেন। কোনও অভিযোগও থাকলেও করা যেতে পারে।” কিন্তু সরলবাবু যখন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে গিয়েছেন, তখনও কোনও আবেদন তাঁর তরফে জমা পড়েনি। এর কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা ফ ব নেতৃত্বের কাছে নেই।
স্বয়ং সরলবাবুর বক্তব্য, “সদস্যপদ নবীকরণের জন্য ৩১ অগস্ট পর্যন্ত তো সময় রয়েছে। তার আগে আমার সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।” বৈঠকের সময় তিনি যে সদস্য ছিলেন না, সেই বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজি নন সরলবাবু। বরং, তাঁর বক্তব্য, “আমি ফ ব করছি আজ থেকে নয়! নিয়মনীতি আমি জানি। আর যত দিন অশোক ঘোষ আছেন, সদস্যপদটা কোনও প্রশ্নের বিষয় নয়!”
প্রবীণ নেতার অভিযোগ, দলের একাংশ অহেতুক বিতর্ক তৈরি করে তাঁর সম্পর্কে ‘অপপ্রচার’ করছে। তাঁর সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত জেলা নেতৃত্ব নিতে পারেন না বলেও সাফ জানাচ্ছেন সরলবাবু। এ বারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠিক হয়েছে, মাওবাদী-প্রশ্ন মোকাবিলা এবং নিরীহ গ্রামবাসীদের সমস্যা বুঝতে ছত্তীশগঢ়ে একটি প্রতিনিধিদল যাবে জনার্দন পাণ্ডের নেতৃত্বে। অসমেও একটি প্রতিনিধিদল যাবে হাফিজ আলম সৈরানির নেতৃত্বে। কোনও দলেই অবশ্য সরলবাবু নেই। এই বিষয়টিকেও আপাতত গুরুত্ব দিতে নারাজ প্রাক্তন মন্ত্রী। কিন্তু তাঁকে নিয়ে বিতর্ক যে জটিল হচ্ছে দলে, তার ইঙ্গিত স্পষ্ট!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.