টাকা দিয়ে বিচার কেনা যাবে কেন, প্রশ্ন মমতার
বিধানসভার ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে দুর্নীতি নিয়ে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার উদযাপন কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে বিধানসভা কক্ষে আয়োজিত সভায় তিনি বলেন, “বিচার ব্যবস্থা থেকে গণতন্ত্র সর্বত্রই দুর্নীতি আজ মূল স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন? এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।”
এ দিন তাঁর বক্তৃতায় বিচার ব্যবস্থা, বিভিন্ন কমিশনের কর্মধারা, ‘মূল্যবোধের’ রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মতামত জানান। মমতা বলেন, “বিচারের বাণী কেন নীরবে নিভৃতে কাঁদবে? কেন আজকে শুধু টাকার বিনিময়ে বিচার হবে? বলতে খারাপ লাগছে। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এই কথা বলছি। আমাকে কেউ দোষারোপ করতে পারেন। আমি খুব খুশি হব, যদি পুলিশ আমায় ধরে নিয়ে যায়, জেলে ভরে দেয়, মানহানির অভিযোগ করে, আমি পরোয়া করি না। আমার কথা তো আমাকে কোথাও একটা বলতে হবে। আমি যা দেখছি।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন অনেক বিচারের রায় আজকে টাকার বিনিময়ে হচ্ছে? কেন? বিচার বিভাগ তো বিচার করবে।”
প্ল্যাটিনাম জয়ন্তীর দ্বিতীয় দিনে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী।
ওই ভাষণেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “গণতন্ত্রকে নষ্ট করতে ইচ্ছাকৃত ভাবে নাগাড়ে প্রচেষ্টা চলছে। অনেক কমিশন-কমিটি হয়েছে। আমলা-অফিসারদের দায়বদ্ধতা নিয়ে কথা হচ্ছে। দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই এগজিকিউটিভদের কমিশন ডেকে পাঠাচ্ছে। কোনও দিন ইনি ডাকবেন, কোনও দিন উনি ডাকবেন, কোনও দিন তিনি ডাকবেন। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব থেকে শুরু করে পুলিশের ডিজি, সিপি সব অফিসারকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। অনেক কমিশন হয়েছে। কাজ হয় না কিছু। কতগুলো লোক আসলে পেয়ে গিয়েছে। বাড়ি, গাড়ি, কমিশনের টাকা নানা সুবিধা পাচ্ছে। এগজিকিউটিভদের দায়বদ্ধতা ঠিক করার আগে যাঁরা অর্ডারগুলো দিচ্ছেন, তাঁদের দায়বদ্ধতা ঠিক করা হোক।” তিনি বলেন, “সবাই তো সবাইকে খালি জ্ঞান দিচ্ছে। কিন্তু নিজের দায়বদ্ধতা আছে কি? নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে পারেন, এমন ভাল মানুষ এক জনকে নিয়ে এলাম। আমার দলেরও লোক নয়। অন্য দল করত। কিন্তু দেখছি, জানেনই না কিছু। এমন ভাবে লিখছেন, যেন মনে হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বা দেশের রাষ্ট্রপতি! জানেনই না কী তাঁর এক্তিয়ারের অধীন, কী তাঁর ক্ষমতা।”
এ দিনই সন্ধ্যায় বেহালায় এক সমাবেশে আরও এক বার এই সব কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আজ বিধানসভায় আমি কিছু কথা বলেছি। বলেছি, বিচারের বাণী যেন নীরবে, নিভৃতে না কাঁদে। বলেছি, বিচার যেন টাকার কাছে বিক্রি হয়ে না যায়। ভুলটা কোথায়?”
দুপুরে বিধানসভার অনুষ্ঠানে রাজনীতিতে ‘কালো টাকা’র প্রসঙ্গও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কালো টাকা, দুর্নীতির মোকাবিলা করতে হলে নির্বাচনে স্টেট ফান্ডিং করতে হবে। অনেক রাজ্যেই ভোটারদের যে যত বেশি টাকা দিতে পারবে, সে জিতবে। এটা কী! বাংলায় ভোটে সব চেয়ে কম খরচ হয়। তামিলনাড়ুতে তো শুনেছি, সাংসদ নির্বাচনে ২০ কোটি টাকা লাগে। এই জায়গাটা বন্ধ করতে হবে। ভোটের নাম করে কেউ যদি হাজার হাজার টাকা কামায় আর সে টাকা দেশের টাকা বাইরে যায়? কেন হবে এ সব?” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সব রাজনীতিকরা চোর নাকি! কেউ কেউ হয়তো নিশ্চয়ই চুরি করেছে। তাই বলে সবাই চোর! রাজনীতিই ধ্যান-জ্ঞান, এমন অনেক রাজনীতিককে আমি চিনি। রাজনীতিতে ভাল মানুষ, সৎ মানুষ আসুক, সেটাই চাই। গণতান্ত্রিক কাঠামো নষ্ট করতে একটা চেষ্টা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করা উচিত। না হলে রাজ্যের, কেন্দ্রের কারও ভাল হয় না। কেন্দ্রীয় সরকারকে বলি, রাজ্য-কেন্দ্র মিলে এক সঙ্গে বসে পথ বার করি।”
উদযাপন
বিধানসভার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে
দুপুরের খাওয়ার তদারকি করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বলেন, “অনেক ছেলেমেয়েকে বলি, ভাল করে পড়াশোনা করছ, কর। কিন্তু এক লক্ষ টাকার চাকরি না করে রাজনীতিতে এস। লক্ষ লক্ষ মানুষকে চাকরি দিতে পারবে। রাজনীতিতে নিবেদিতপ্রাণ, এমন নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।” তিনি বলেন, “কাজের ক্ষেত্রে ভুল হতেই পারে। নিখুঁত কেউ নয়। অভিজ্ঞতা বড় ব্যাপার। আমার আজ যা অভিজ্ঞতা, তা কাজ করতে করতে এসেছে। আজ অনেক কিছু বুঝতে পারি, তা কি আগে বুঝতাম?”
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র পরে বলেন, “উনি বর্তমান সময়ের কিছু সমস্যার কথা বলেছেন, যেগুলো আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। কিন্তু বিশেষ ভাবে কাউকে দায়ী করা যায় না। রাজনৈতিক দল বিচার ব্যবস্থাকে, বিচার ব্যবস্থা প্রশাসনকে, প্রশাসন সংসদীয় ব্যবস্থাকে দোষ দেবে এতে কোনও লাভ নেই। সার্বিক ভাবে গোটা বিষয়ের বিবেচনা করতে হবে। আমরা আগেই নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের কথা বলেছি, বিচার বিভাগীয় কমিশনের কথা বলেছি। দুর্নীতির মোকাবিলার জন্যই কার্যকরী লোকপালের কথা হয়েছে।”
বিভিন্ন কমিশনের কাজ নিয়েও এ দিন মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, “কমিশন সব চেয়ে বেশি উনিই (মুখ্যমন্ত্রী) করেছেন! রাজ্যে রেকর্ড করেছেন! জেলা পর্যন্ত মানবাধিকার কমিশনকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। নিজে যা করেছেন, তার উপরে হঠাৎ খেপে গেলেন কেন, জানি না!”

ছবি: রাজীব বসু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.