অর্থ সাহায্যের অভাবে ধুঁকছে ইতিহাসের ‘সাক্ষী’
জ, স্বাধীনতা দিবস। পাড়ায়-পাড়ায়, মোড়ে-মোড়ে বিভিন্ন ক্লাব, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পতাকা তুলে উদ্যাপন করছে স্বাধীনতা দিবস। কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান মহিষাদলের তাজপুর, বাগদাগ্রামের স্বদেশী প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারি অবহেলায় ব্রাত্য, এক কোণে পড়ে। একতারপুর মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর পদধূলিধন্য অনাথ আশ্রমটিও ধুঁকছে। ইতিহাসের ‘সাক্ষী’ এই প্রতিষ্ঠানগুলির পুনরুজ্জীবনে নজর নেই কারও
স্বাধীনতা আন্দোলনের আদর্শকে মাথায় রেখে তাজপুরে দেশীয় পণ্য উপাদনের আস্ত একটি কারখানা গড়ে তুলেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী সুশীল ধারা। ‘গ্রাম উদ্যোগ সমিতি’ নামে স্বয়ংসম্পূর্ণ ওই প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৮ সালে। চরকায় কাটা সুতো, তাঁতবস্ত্র, সাবান তৈরির কাজে ব্যবহৃত তেল, কাঠের সরঞ্জাম-সহ বিভিন্ন সামগ্রী উৎপাদন হত রমরমিয়ে। বছর ঘুরতেই ১৯৪৯ সালে সরকারি স্বীকৃতি পায় সংস্থাটি। ওই সময়ই পাশের গ্রাম বাগদায় প্রসূতিদের জন্য ‘গোপাল স্মৃতি মাতৃভবন সমিতি’ স্থাপন করেন। তৈরি হয় ১৮টি শয্যাবিশিষ্ট একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সময়ের সঙ্গে সরকারি অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দু’টি প্রতিষ্ঠানেই তালা পড়ে গিয়েছে।
১৯৮৪ সালে বন্ধ হয়ে যায় মাতৃভবন সমিতি। ১৯৫৩ সালে খাদি কমিশন থেকে ২ লাখ ১৩ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিল গ্রাম উদ্যোগ সমিতি। দেনা মেটাতে তো পারেনিই, উল্টে বন্ধ হয়ে যায় ১৯৯৩ সালে। ১৯৬৩ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ৬৯ বছরের লক্ষ্মীকান্ত দাসের কথায়, “বহু বার সরকারের কাছে এই প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুদান চেয়েছি। সুশীলবাবু নিজেও অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কোনও কাজ হয়নি। ইতিহাসের সাক্ষী এই সব প্রতিষ্ঠানের অবহেলিত রূপ দেখতে খারাপ লাগে। তবে ওই কেন্দ্র দু’টির সঙ্গেই প্রতিষ্ঠিত একটি উচ্চ ও একটি নিম্ন বুনিয়াদি শিক্ষাকেন্দ্র এখন সরকার অনুমোদিত তাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও রাজারামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত।”
১৯৪৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর একতারপুরে এসেছিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী। ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিলেন এই গ্রামেই। তাঁর রাত্রিবাস করে যাওয়া ‘গাঁধী কুটির’কে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ওই এলাকায় মেলার আয়োজন হয়। সম্প্রতি সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী গাঁধী কুটিরে যাওয়ার কাঠের সেতুটি পাকা করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। কিন্তু সমসাময়িক গাঁধী শিশু সদন একেবারে বেহাল। ওই অনাথ আশ্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রবীণদের কথায়, “অনুদানের অভাবেই এখানে থাকা অনাথ শিশুদের দায়িত্ব বহন করা কঠিন হয়ে গিয়েছে।” অবশ্য গোপালপুরে আর এক স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্তের স্মৃতি রক্ষার্থে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিবেশ ও পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারও স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানগুলিকে নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছেন। এলাকার বাসিন্দা বছর পঁয়ষট্টির শীতলপ্রসাদ বাগ বলেন, “এই সব স্মৃতি রক্ষণাবেক্ষণের ইচ্ছা নেই কারও। অর্থের অভাবে তাজপুরের গ্রাম উদ্যোগ সমিতি, বাগদার মাতৃভবন এবং একতারপুরে শিশু সদন ধুঁকছে।” জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি বলেন, “আমাদের কাছে কেউ অনুদানের জন্য কোনও আবেদন করেনি। দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রস্তাব দিলে বিবেচনা করা হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.