নাজিরা বেগমের অপমৃত্যুর তদন্তে নামলেন রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) অনিলকুমার। মঙ্গলবার উলুবেড়িয়া বাজারপাড়ার ঘটনাস্থলে তদন্তে গিয়ে তিনি বলেন, “মাত্র সাত দিনের শিশু মাকে হারিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং এসডিপিও-কে বলেছি ওই গৃহবধূর অপমৃত্যুর রহস্য হাল্কা ভাবে দেখলে হবে না। আমি নিজে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। খুনের মামলা রুজু হয়েছে। তদন্তের রূপরেখা কী হবে, সেটা বলে দিয়েছি। ঠিক কী ঘটেছিল দ্রুত খুঁজে বার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ আধিকারিকদের।”
যে নার্সিংহোমে নিজের সাত দিনের ছেলেকে ভর্তি করিয়েছিলেন, রবিবার বিকেলে তার পাশের বাড়ির দোতলার ছাদ থেকে উদ্ধার হয়েছিল পাঁচলার রাজখোলা গ্রামের গৃহবধূ নাজিরা বেগমের (২০) দেহ।
সোমবার পুলিশ দাবি করে, মৃতার পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের না করায় তদন্ত শুরু করা যাচ্ছে না। আর বধূটির পরিবারের ক্ষোভ ছিল, ওই দিন সকালেই তারা উলুবেড়িয়া থানায় ঘটনার তদন্ত চেয়ে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল। পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে ফিরিয়ে দেয়। নাজিরার স্বামী শেখ সালামকে ‘হুমকি’ও দেওয়া হয়। এ দিন সেই ‘অভিযোগের’ ব্যাপারে অনিলকুমার বলেন, “আমি উলুবেড়িয়া থানা এবং বধূটির পরিবারের সঙ্গে ওই ব্যাপারে কথা বলেছি। দু’পক্ষে কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।”
শেখ সালাম এ দিন উলুবেড়িয়া থানায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, “স্ত্রী-কে খুন করা হয়েছে। আমার সন্দেহ, নার্সিংহোমেরই কেউ ওই ঘটনায় জড়িত।”
আত্মীয়েরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ছেলে কাঁদছিল বলে ডাক্তার ডাকতে হাসপাতালের একতলার শিশুবিভাগ থেকে সিঁড়ি দিয়ে দোতলার উদ্দেশে গিয়েছিলেন নাজিরা। রবিবার বিকেলে যে ডাক্তার নার্সিংহোমে কর্তব্যরত ছিলেন, তাঁর খোঁজ করেন অনিল কুমার। তবে ওই ডাক্তার এ দিন হাজির ছিলেন না। পরে চার তলা নার্সিংহোমের ছাদে যান ওই পুলিশ-কর্তা। পাশের দোতলা বাড়ির ছাদে যেখানে নাজিরার দেহ মিলেছিল, যান সেখানেও। যেখানে নাজিরার দেহ মিলেছে, নার্সিংহোমের প্রান্ত থেকে তার দূরত্ব অন্তত ২০ ফুট।
ঘটনা দেখে এলাকাবাসীর একাংশ প্রশ্ন তুলেছিলেন, বধূটি স্রেফ লাফ দিলে, কী ভাবে তাঁর দেহ অত দূরে পাওয়া গেল!
নার্সিংহোমের লাইসেন্স রয়েছে উলুবেড়িয়ার বাপিন সরকারের নামে। তাঁর সঙ্গে কথা বলেন ডিআইজি (পিআর)। বাপিনবাবু বলেন, “রবিবার ওই ঘটনার সময় নার্সিংহোমের একতলায় এক ডাক্তারের সঙ্গে গল্প করছিলাম। পরে শুনি, এক রোগীর আত্মীয়াকে পাশের বাড়ির ছাদ থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ওই মহিলার মৃত্যু-রহস্য উদঘাটিত হোক, এটা আমরাও চাই।” |