সম্পাদকীয় ২...
গণতন্ত্র নৈরাজ্য নয়
সমের কোকরাঝাড়ে বড়ো জনজাতি বনাম মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতিক্রিয়ায় মুম্বই, পুনে, বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদের মতো দেশের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমরা বিক্ষোভ দেখাইয়াছেন। গণতন্ত্রে এ ধরনের বিক্ষোভ প্রদর্শনে কোনও বাধা নাই। বরং এ ধরনের প্রদর্শন সমাজ ও সরকারকে বিশেষ সমস্যার প্রতি মনোযোগী করিয়া তোলে। কিন্তু বিক্ষোভ যদি হিংসাত্মক হইয়া ওঠে, তাহার সংগঠকরা যদি পরিকল্পিত ভাবে মিথ্যা প্রচারের আশ্রয় লইয়া জনসাধারণকে উত্তেজিত ও মারমুখী করিয়া তোলে এবং বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর, লুঠতরাজের মতো নৈরাজ্যসৃষ্টিতে লিপ্ত হয়, তখন তাহাকে গণতান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপ বলা যায় না। মুসলিমদের সর্বশেষ বিক্ষোভটি এমনই অগণতান্ত্রিক প্রতিক্রিয়ায় পরিণত হইয়াছিল। ভারতের বিভিন্ন স্থানে বড়োদের মতো দেখিতে অর্থাৎ মঙ্গোলয়েড নৃগোষ্ঠীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জনজাতির মানুষদের উপর মুসলিমরা হামলা চালাইতেছেন। ইহা নিন্দনীয়।
হামলাকারীরা প্রচার করিতেছেন, কোকরাঝাড়ে ও মায়ানমারে মুসলমানদের উপর আক্রমণ হইতেছে। প্রথমত, কোকরাঝাড়ের দাঙ্গায় বড়ো এবং মুসলিম উভয় পক্ষই পরস্পরকে হত্যা করিয়াছে, যাহার যেখানে জোর, সে সেখানে প্রতিপক্ষের ঘরবাড়ি জ্বালাইয়াছে, লুঠপাট করিয়াছে। বড়োল্যান্ডে কিন্তু মুসলিমরা নয়, বড়োরাই সংখ্যালঘু। তাহাদের জমি-জমা, সম্পত্তিও ক্রমে বাংলাদেশ হইতে আসা অনুপ্রবেশকারীরা কুক্ষিগত করিয়া লইতেছে। এই কোণঠাসা দশার প্রতিকার রূপেই বড়ো জঙ্গিদের একাংশ দাঙ্গায় লিপ্ত, আর সেই দাঙ্গাও একতরফা নয়, প্রায়শ রক্ষণাত্মক প্রত্যাঘাত। আর মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালাইতেছে সে দেশের সরকার। বরং মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশ ওই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করিয়া এবং শরণার্থী রোহিঙ্গাদের ঠেলিয়া মায়ানমারে ফেরত পাঠাইয়া দেওয়ায় তাহারা হতাহত হইতেছে। এ ব্যাপারে ভারতের কিছু করার নাই। তথাপি সংখ্যালঘু স্বার্থের বিপন্নতার ধুয়া তুলিয়া কায়েমি স্বার্থচক্রীরা তাহাদের অপপ্রচারে মুসলিমদের উত্তেজিত করিয়া চলিয়াছে। অবস্থা এমন দাঁড়াইয়াছে যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে কলেজে পাঠরত মিজো, নাগা, কার্বি, মণিপুরি, খাসি-গারো-জয়ন্তিয়া ও অসমিয়া ছাত্রছাত্রী কিংবা দোকানে-মলে কর্মরত উত্তর-পুবের মঙ্গোলয়েড চেহারার লোকেরা মুসলিমদের দ্বারা আক্রান্ত হইতেছে। এই হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোরতার সহিত শাস্তি দেওয়া দরকার।
ভারতীয় গণতন্ত্র নিশ্চয় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখিতে দায়বদ্ধ, কিন্তু জনজাতীয় সংখ্যালঘুর স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়া নয়। জনজাতীয় সংখ্যালঘুরা দেশের সর্বাপেক্ষা বিপন্ন প্রজাতি। দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তের বাসিন্দা হওয়ায় তাঁহাদের কণ্ঠস্বর প্রায়শ মূল ভূখণ্ডে আসিয়া পৌঁছায়ই না। বাংলাদেশ ও মায়ানমার হইতে বেআইনি অনুপ্রবেশের ঠেলায় এবং হিন্দুস্তানের মূল ভূখণ্ড হইতে অ-জনজাতীয় ব্যবসায়ী, ভাগ্যান্বেষীদের পাইকারি অভিবাসনের চাপে তাঁহাদের নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম। নিজ ভূমেই আজ তাঁহারা পরবাসী, ভূমিপুত্রের অধিকার যায়-যায়। অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা স্বভূমিতে তো তাঁহারা আক্রান্ত হইতেছিলেনই। এখন দেশের অন্যত্র ধর্মীয় সংখ্যালঘুর দ্বারা আক্রান্ত হইয়া তাঁহারা যদি আবার উত্তর-পুবের প্রান্তিকতায় ফিরিয়া যান, তবে ভারতের বহুত্ববাদী গণতন্ত্রের সাধনাই ব্যর্থ হইয়া যাইবে। সিকিম, মণিপুর, অসম, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও অরুণাচলের সাংসদরা যৌথ ভাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়া এই বিষয়টির প্রতিই দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে চাহিয়াছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.