সম্পাদকীয় ১...
আলস্যের স্বাধীনতা
ন্ডন অলিম্পিকসেও ভারত নিজের ব্যর্থতার ধারা বজায় রাখিল। একশত কুড়ি কোটি মানুষের দেশে এমন এক জনও খেলোয়াড় নাই, যিনি নিজের খেলায় দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠ! সংশয় হইতে পারে, হয়তো ঈশ্বর ভারতকে মারিয়া রাখিয়াছেন এই দেশের মানুষ শারীরিক ভাবেই কোনও ক্রীড়ায় বিশ্বসেরা হইতে অক্ষম। তবে ঈশ্বর কেন অকারণে ভারতের উপর এমন বিরূপ হইবেন, তাহা ভাবিবার বিষয়। বরং, সন্ধান করা ভাল, কোন কারণে ভারত পারে না আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন বা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ন্যায় দেশগুলি পারে। দুই গোত্রের দেশের সাফল্যের রসায়ন অবশ্য ভিন্ন। সোভিয়েত ইউনিয়ন বা চিন প্রকৃত প্রস্তাবে দেশব্যাপী গুলাগ বা প্রিজন ক্যাম্পমাত্র। বন্দিদের দিয়া সবই করাইয়া লওয়া সম্ভব, ক্রীড়ায় সাফল্য অর্জন কোন ছার। আর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় দেশে সফল খেলোয়াড় হওয়া এমনই লাভজনক যে, তাহার আকর্ষণই প্রতিভাবান নাগরিকদের নিজের সর্বস্ব পণ করিতে উৎসাহ জোগায়।
ভারত এই দুই হিসাবেরই বাহিরে। এই দেশ যে চিন বা সোভিয়েত ইউনিয়ন নহে, শুধু এই কারণেই স্বাধীনতা দিবসে দেশবাসীর ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। চিন যে পদ্ধতিতে সফল, তাহা অনুকরণীয় নহে। ব্যক্তিস্বাধীনতার সেই লঙ্ঘন ভারতে সহিবে না সহ্য হওয়া উচিতও নহে। কিন্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথা পশ্চিম দুনিয়ার পথটিও ভারতে গড়িয়া উঠে নাই। এই দেশে একটিমাত্র ক্রীড়ারই বাজার আছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি হইতে ইরফান পাঠান বা অশোক দিন্দা, কেহই ক্রিকেটের সনাতন পরিবেশের ফসল নহেন। ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্বকে বাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠা দিয়াছে, প্রতিভাবানরা সেই প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রাণপাত করিয়াছেন। ফলও পাইয়াছেন। অলিম্পিকসে যে খেলাগুলি হয়, ভারতে তাহার বাজার নাই। বাজার নাই বলিয়া সাফল্য নাই, না কি তাহার উল্টা, সেই তর্ক থাকিবে, কিন্তু সাফল্যের সহিত বাজারের সম্পর্কটি অস্বীকার করিবার নহে। ভারতে সেই সমীকরণটি প্রতিষ্ঠিত হয় নাই বলিয়াই ভারত অলিম্পিকসে সফল নহে। অবশ্য, সরকারের ভূমিকা, বস্তুত ভূমিকার অভাবের কথাটি কোনও ভাবেই অস্বীকার করিবার নহে। কিন্তু, তাহা ভিন্ন প্রশ্ন।
রাষ্ট্র এবং বাজারের পাশাপাশি সংস্কৃতির প্রশ্নটিও প্রাসঙ্গিক। পশ্চিমে যে উদ্যমের, উদ্যোগের সংস্কৃতি আছে, প্রাচ্যের সংস্কৃতি তাহার বিপ্রতীপ। ঐতিহাসিক বিচারে, চিনারাও স্বভাবত উদ্যোগী নহেন, কিন্তু তাঁহাদের ক্ষেত্রে পার্টি বড় বালাই। ভারতের স্বাধীনতা যেহেতু ব্যক্তিস্তরেও অনেক দূর পর্যন্ত সত্য, ফলে উদ্যোগী হইবার জন্য রাষ্ট্রীয় চাপ এই দেশে নাই। দেশবাসীর স্বভাবগত আলস্য এই দেশকে শ্লথ করিয়াছে। কয়েকটি ক্ষেত্র ব্যতিক্রম তাহার একটি তথ্যপ্রযুক্তি। এই ক্ষেত্রে কর্মরত ভারতীয়রা বিশ্বমানের তৎপরতার অধিকারী। তাঁহাদের উদ্যোগ প্রশ্নাতীত। কিন্তু, কেন? তাহার কারণ, এই ক্ষেত্রটি প্রকৃত প্রস্তাবে ভারতের নহে, কর্মসংস্কৃতিগত ভাবে তাহা সম্পূর্ণ পশ্চিমী। তাহার কর্মপদ্ধতি, কাজের ক্ষেত্র, ক্রেতা এমনকী সহকর্মীরাও বহু ক্ষেত্রেই মার্কিন। ফলে, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের ভারতীয়রা, তাঁহাদের পাসপোর্টের রং নির্বিশেষে, মার্কিন নাগরিক। ভারতের অন্য ক্ষেত্রগুলি এই মার্কিন সংস্পর্শ পায় নাই, ফলে সেগুলি চরিত্রে ভারতীয়ই রহিয়াছে। এই তৎপরতা, উদ্যোগ যদি ভারতে কখনও সর্বজনীন হয়, একমাত্র তখনই তাহার গণতান্ত্রিক, ব্যক্তিস্বাধীনতাকে সম্মান করা চরিত্রটি প্রকৃত মর্যাদা পাইবে। অলিম্পিকসের পদক লহিয়া তখন ভাবিতে হইবে না, তাহা এমনিই আসিবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.