সংসদে মমতাকে তুলোধোনা সিপিএমের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ফাঁকা মাঠে গোল একেই বলে!
লোকসভায় তৃণমূলের বেঞ্চ পুরোপুরি ফাঁকা। একমাত্র প্রতিনিধি তথ্য-সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী চৌধুরী মোহন জাটুয়া। সেই সুযোগে আজ সংসদে দাঁড়িয়ে মাওবাদীদের সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানের কড়া সমালোচনা করলেন লোকসভায় সিপিএমের দলনেতা বাসুদেব আচারিয়া। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে মাওবাদীদের সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাঁত থেকে শুরু করে সম্প্রতি বেলপাহাড়িতে শিলাদিত্য চৌধুরীকে মাওবাদী সন্দেহে গ্রেফতারের প্রসঙ্গও টেনে আনেন তিনি। বাসুদেববাবু বলেন, রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতার মাওবাদীদের সম্পর্কে যে অবস্থান ছিল, এখন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি তাঁর উল্টো অবস্থান নিয়েছেন। এখন কেউ অস্বস্তিকর প্রশ্ন তুললেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে মাওবাদী আখ্যা দিচ্ছেন।
অন্য দিন হলে তৃণমূলের সাংসদরা স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন তুলতেন, রাজ্যের বিষয় কেন সংসদে তোলা হচ্ছে? এর আগেও মমতার সরকারের সমালোচনার চেষ্টা করে তৃণমূল সাংসদদের প্রবল বাধার মুখে পড়তে হয়েছে সিপিএম নেতাদের। কিন্তু আজ একমাত্র জাটুয়া দু’একবার আপত্তি করা ছাড়া বাসুদেবের বক্তৃতায় কেউ বাধা দেননি। এমনকী কংগ্রেসের নেতারাও এ নিয়ে আপত্তি তোলেননি।
আজ লোকসভায় মাওবাদী হিংসা নিয়ে আলোচনায় প্রথম বক্তাই ছিলেন বাসুদেব। বক্তৃতা শুরু করেই তিনি পশ্চিমবঙ্গে বাম জমানায় মাওবাদীদের হাতে সিপিএম নেতা-কর্মীদের খুনের প্রসঙ্গে চলে যান। অভিযোগ তোলেন, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলনে মাওবাদীদের কাজে লাগানো হয়েছিল। মাওবাদীরা যে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীদের প্রশিক্ষণও দিয়েছিল। মাওবাদী নেতা কিষেণজি নিজেই তা জানিয়েছিলেন। মমতার নাম না করে সমালোচনা করে বাসুদেব বলেন, “বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপর প্রাণঘাতী হামলা হয়। কিন্তু প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তার নিন্দাটুকুও করেননি।” মাওবাদীদের গণ সংগঠন পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটির সঙ্গে মমতা যে বেশ কয়েক বার বৈঠক করেছেন, সে প্রসঙ্গও তোলেন বাসুদেব। মাওবাদী দমন নিয়ে মমতার বিরুদ্ধে স্ববিরোধী অবস্থানের অভিযোগ তুলে সিপিএম নেতা জানান, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি যৌথ বাহিনী প্রত্যাহারের কথা বলতেন, আর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁর প্রথম কথাই ছিল, জঙ্গলমহলে কেন্দ্রের আরও আধাসেনা পাঠানো উচিত। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি বলতেন, রাজ্যে মাওবাদীরা নেই, সিপিএম-ই খুনের রাজনীতি করছে। আর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তিনি নিরীহ কৃষককেও মাওবাদী বলে জেলে পুরে দিচ্ছেন।
সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, বিলাসরাও দেশমুখের মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছনোয় আজ অধিবেশন স্থগিত হয়ে যায়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন এই বিতর্কের জবাব দেবেন, তখন তাঁর কাছে এই বিষয়ে জবাব চাওয়া হবে। তা ছাড়া মমতার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগই সংসদের কার্যবিবরণীতে রেকর্ড হয়ে রইল। এ বার প্রয়োজনমতো তারা এই প্রসঙ্গ তুললেও তৃণমূল আর কিছু করতে পারবে না। |