গড়ছেন না নিজের দল, ইতি অনশনে |
‘বল’ পেতে যোগগুরু বিজেপির সঙ্গী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নানা কারণে ‘দুর্বল’ হয়ে পড়ায় নিজের রাজনৈতিক দল গড়ার স্বপ্ন ছেড়েই বিজেপি-র সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন রামদেব। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর আন্দোলনকে কংগ্রেস-বিরোধিতার মঞ্চে পরিণত করলেন যোগগুরু।
গত বছর যন্তর-মন্তরে অণ্ণা হজারের আন্দোলন মঞ্চে গিয়েছিলেন অরুণ জেটলি, বৃন্দা কারাটরা। কিন্তু তার পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলি থেকে প্রকাশ্যে কিছুটা দূরত্বই রেখে এসেছেন অণ্ণা। এখন তাঁর সহযোগীরা রাজনৈতিক দল গড়ার ব্যাপারে সক্রিয় হয়ে উঠলেও নিজে তিনি দ্বিধায় রয়েছেন। অণ্ণা জানিয়ে রেখেছেন, প্রথম থেকেই ওই দলে যোগ দেবেন না তিনি। আগে বেরোবেন ভারত দর্শনে। কিন্তু এত দিন ধরে ‘অরাজনৈতিক’ চরিত্র বজায় রেখেও যোগগুরু রামদেব কোনও রাখঢাকে গেলেন না। বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী-সহ গোটা এনডিএ-কে নিজের দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন মঞ্চে সামিল করে নিলেন। কংগ্রেসের বিরোধিতাই হয়ে দাঁড়াল রামদেবের আন্দোলনের প্রকাশ্য ও ঘোষিত লক্ষ্য। আজ অনশন ভঙ্গ করে জানিয়ে দিলেন, ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে ফের তিনি আন্দোলনে নামবেন।
রামদেব কেন বিজেপি-র সঙ্গে এই সমঝোতায় গেলেন? আরএসএস ও বিজেপি-র শীর্ষ সূত্রের মতে, যোগ-ভক্ত জনবল পাশে থাকলেও আগের চেয়ে অনেকটাই ‘দুর্বল’ হয়ে পড়েছেন রামদেব। অণ্ণাই হোন বা রামদেব কয়েক বছর আগে তাঁদের আন্দোলন যে ভাবে বিরোধী রাজনৈতিক পরিসর দখল করে নিয়েছিল, এখন আর সেই অবস্থা নেই। অণ্ণার আন্দোলন আর আগের মতো সাড়া ফেলে না। তবে রামদেব এখনও ভিড় জড়ো করতে পারেন। তবে গত বার যে ভাবে তাঁকে রামলীলা ময়দান ছাড়তে হয়েছিল এবং তার পর থেকে সিবিআই যে ভাবে রামদেব ও তাঁর অনুগামীদের পিছনে সক্রিয় হয়েছে, তাতে যোগগুরু এখন অনেকটাই কোণঠাসা। তাঁর অনুগামী বালকৃষ্ণকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। রামদেবের কর ফাঁকি নিয়েও সক্রিয় মনমোহন সরকারের একাধিক তদন্তকারী সংস্থা। ফলে বড় কোনও রাজনৈতিক দল বা শিবিরের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া যে একার ক্ষমতায় আন্দোলন করা সম্ভব নয়, তা-ও তিনি হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছেন। এবং সে কারণেই সঙ্ঘ ও বিজেপি-র দ্বারস্থ রামদেব।
রামদেবের সঙ্গে গাঁটছড়ার বাঁধার পিছনে বিজেপি-র অঙ্কটা কী? দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর লোক জড়ো করেছেন রামদেব। তিনি যদি দল না গড়েন, তা হলে কালো টাকা উদ্ধার থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে এই ভিড়কে সুকৌশলে ভোটে পরিণত করতে পারে বিজেপি-ই। যাঁরা রামলীলায় জড়ো হয়েছেন, তাঁরা রামদেবের যোগের ভক্ত। এঁরাই ‘নেতা’ রামদেবকে গ্রহণ করবেন কি না, তা এখনও পরীক্ষিত নয়। কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসাবে এই ভোটব্যাঙ্ককে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে উস্কে দিলে বিজেপি-র যেমন রাজনৈতিক লাভ, তেমনই প্রধান বিরোধী দলের অনুষঙ্গ হিসাবে থাকলে রামদেবও ‘রাজনৈতিক ভাবে’ বলীয়ান হতে পারবেন। বিজেপি এবং এনডিএ-র নেতারা সমর্থন দেওয়ায় পুলিশ-প্রশাসন ও সরকারও আগের মতো ‘নিষ্ঠুর’ আচরণ করা থেকে সংযত থাকবে।”
ইতিমধ্যেই রামদেবের সহযোগী বালকৃষ্ণকে যাতে জামিন পান, সে ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। লোকপাল বিল পর্যালোচনার জন্য গঠিত সংসদের সিলেক্ট কমিটির সদস্য ও আইনজীবী বিজেপি নেতা ভূপেন্দ্র যাদব আজ বলেন, “সিবিআই অযথা বালকৃষ্ণকে গ্রেফতার করেছে। তাঁর মামলাটি আমি পর্যালোচনা করেছি। যে অভিযোগ করা হয়েছে, তাতে ছ’মাসের বেশি জেল হয় না। অচিরেই তিনি যাতে জামিন পান, তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।”
রামদেবকে নিয়ে সঙ্ঘ ও বিজেপি-র সব থেকে বড় সমস্যা ছিল, তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠনের বাসনা। কারণ, রামদেব দল গড়লে তা বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্কেই থাবা বসাবে। যে কারণে সঙ্ঘ বারবারই নিজস্ব দল গড়ার অসুবিধার দিকগুলির কথা বুঝিয়ে এসেছে রামদেবকে। সঙ্ঘ সূত্রের মতে, প্রথম দিকে রামদেব হাল ছাড়তে রাজি না থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজি হয়ে যান। সঙ্ঘ ও বিজেপি-কে জানিয়ে দেন, তিনি দল গড়ছেন না। সেই সূত্র ধরেই গত কাল রামলীলা ময়দানে গডকড়ী, সুব্রহ্ম্যণম স্বামীরা ঘোষণা করেন, রামদেব রাজনৈতিক দল গড়বেন না। পরে খোদ রামদেবও সে কথা জানান। বিজেপি নেতৃত্বও এনডিএ শরিকদের নিয়ে তাঁর মঞ্চে গিয়ে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হন। বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজের বক্তব্য, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা যতই আন্দোলন করুন, ক্ষমতা-বদল সম্ভব শুধু রাজনৈতিক দলের মাধ্যমেই।”
|
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকেই আজ তাঁর আক্রমণের নিশানা করলেন যোগগুরু রামদেব। এ দিন অনশন ভাঙার আগে এক ঘণ্টার বক্তৃতায় রামদেবের দাবি, “কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সততা দেখান প্রধানমন্ত্রী। তা না দেখাতে পারলে তাঁকেও দুর্নীতিগ্রস্ত বলেই গণ্য করা হবে।” গত কালই তাঁর দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন পুরোপুরি কংগ্রেস-বিরোধী চেহারা নেয়। তাঁর মঞ্চে আসেন বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী এবং এনডিএ-র নেতারা। আগামী সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রামদেব। রাতভর অবস্থানের পর এ দিন অনুগামীদের নিয়ে অম্বেডকর স্টেডিয়াম ছাড়েন রামদেব। পুলিশ আগেই বলেছিল, মঙ্গলবার দুপুর একটার মধ্যে স্টেডিয়াম ছাড়তে হবে। সে কথা মেনে নেন রামদেব। তবে তার আগে হুমকি দেন, তিনি চাইলে আগামি কাল প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পতাকা তোলা বন্ধ করে দিতে পারতেন। কিন্তু সেটা ঠিক হবে না। এ দিন হরিদ্বারে তাঁর আশ্রমে ফিরে গিয়েছেন যোগগুরু। |